ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কঠোর লকডাউনের প্রথম কার্যদিবসে সূচক ও লেনদেন বাড়ল

প্রকাশিত: ১৬:৩০, ১৫ এপ্রিল ২০২১

কঠোর লকডাউনের প্রথম কার্যদিবসে সূচক ও লেনদেন বাড়ল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ লকডাউনের কারণে শেয়ারবাজারে দুই সপ্তাহ ধরেই সূচকের ব্যাপক ওঠানামা দেখা গেছে। গত বছরের মতো এবারও লেনদেন বন্ধ থাকবে কিনা সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক প্রকার মানসিক দ্বন্দ্ব কাজ করছিল। কিন্তু কঠোর লকডাউনের প্রথম কার্যদিবসে বিনিয়োগকারীদের অনিশ্চতার ছিটেফোঁটাও নেই। উভয় শেয়ারবাজারেই কঠোর লকডাউনের প্রথম কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর সূচকে যোগ হলো ৫১ পয়েন্ট। ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়ার পর দুই দিন ব্যাপকভাবে দাম কমলেও বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার কারণেও তৈরি হয়েছে আস্থা। বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সর্বাত্মক লকডাউনের মধ্যে চালু রাখা হয়েছে পুঁজিবাজারের লেনদেন। পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যেন নিবিঘেœ কর্মস্থলে যেতে পারেন, সে জন্য সহযোগিতা নেয়া হয়েছে পুলিশের। ব্যাংকের লেনদেন চালুর সিদ্ধান্তের পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও সিদ্ধান্ত নেয় লেনদেন চলবে। আর ব্যাংকের লেনদেন আধা ঘণ্টা বাড়ায় পুঁজিবাজারেও লেনদেন আধা ঘণ্টা বেশি হয়েছে। বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরু থেকেই পুঁজিবাজার ছিল চাঙা। সময় যত গড়িয়েছে, ততই বেড়েছে সূচক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান বলেন, ‘নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থায় মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর ৫০ শতাংশের উপস্থিতিতে চলছে ডিএসইর কার্যক্রম। সরকারের সর্বাত্মক লকডাউনে জনসাধারণের চলাচলে বিধিনিষেধ থাকলেও পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যাতায়াতের কোনো সমস্যা হয়নি। ব্রোকার হাউজগুলো থেকেও এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি। দেখা গেছে, নন ব্যাংক আর্থিক খাতের মধ্যে বৃহস্পতিবার দর বৃদ্ধিতে ছিল লংকাবাংলা ফিন্যান্স, যার শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ইউনিয়ন ক্যাপিটেল লিমিটেডের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। বৃহস্পতিবার লেনদেনে দর বেড়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দামি ও বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারের। রেকিট বেনকিউজার শেয়ার দর বেড়েছে ৩২ টাকা ১০ পয়সা। লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৬১৯ টাকায়। ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ারের শেয়ার দর বেড়েছে ৫ টাকা ৬০ পয়সা। লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৮০৩ টাকায়। ম্যারিকো লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি দর লেনদেনের শুরুতে বাড়লেও শেষ কমেছে ৬ টাকা ৯০ পয়সা। এ সময়ে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৪৬ টাকায়। বার্জার বাংলাদেশের প্রতিটি শেয়ারের দর কমেছে ৩ টাকা ৩০ পয়সা। রেনাটা লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ৩ টাকা ২০ পয়সা। ওয়ালটনের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১৯ টাকা ২০ পয়সা। ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার বলেন, ধারণা করা হয়েছিল লকডাউনে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত রাখার চেষ্টা করবে। কিন্ত এ সময়ে বিনিয়োগকারীরা যৌক্তিক আচরণ করছেন। তারা শেয়ার বিক্রি না করে বরং শেয়ার কিনছেন। যার ফলে পুঁজিবাজারে পতন হয়নি। কারা শেয়ার কিনছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও কিনছেন আবার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও কিনছেন। কারণ, এখন বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের যে দর তাতে বিনিয়োগ করলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা কম। তিনি বলেন, যাদের শেয়ার বিক্রি করার কথা তারা বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। ভালো দর ফেলেই হয়তো বিক্রি করবেন। আগের মতো লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে লোকসান কমানোর প্রবণতা নেই। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দর না বাড়ায় এখন মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো বিনিয়োগ উপযোগী। আর ফান্ডগুলো ভালো ব্যবসা করায় ভালো মুনাফাও দিচ্ছে। এতে আগ্রহ বাড়তে পারে। দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫১ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩১০ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১০ দশমিক ৫০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০৯ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ২৯ দশমিক ১৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৬ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২১৬টির, কমেছে ৯০টির। দর পাল্টায়নি ৪৯টির। লেনদেন হয়েছে ৫৫৬ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ লেনদেন বেড়েছে ৪৫ কোটি টাকা।
×