ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ মুহূর্তে নিত্যপণ্য কেনাকাটার হিড়িক

প্রকাশিত: ২৩:৪৪, ১৪ এপ্রিল ২০২১

শেষ মুহূর্তে নিত্যপণ্য কেনাকাটার হিড়িক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিয়াম সাধনার পবিত্র মাসের চাহিদাকে সামনে রেখে ক্রেতাদের নিত্যপণ্য কেনাকাটার হিড়িক পড়েছে। নগরীর কাঁচাবাজারগুলোতে দেখা যাচ্ছে ভোক্তাদের উপচেপড়া ভিড়। একদিকে রোজা শুরু ও পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ উৎসব, অন্যদিকে করোনা সংক্রমণরোধে আজ বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে এক সপ্তাহের কড়া লকডাউন। এই সময় জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে অহেতুক বাইরে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এসব কারণে সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী নিয়ে ঘরে ঢুকছেন সবাই। চাহিদার তুলনায় বেশি পণ্যের সরবরাহ ও মজুদ থাকায় বাজারে কোন সঙ্কট নেই। পণ্যপরিবহন স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিশেষ কন্ট্রোল রুম চালু করেছে। বাংলাদেশে রেলওয়ে চালু করেছে বিশেষ ট্রেন সার্ভিস। তবে এসব উদ্যোগের পরও বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। ইফতারি সবজি হিসেবে খ্যাত বেগুনের দাম এক লাফে ৯০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। দাম আরও বাড়ার কথা জানিয়েছেন সবজি বিক্রেতারা। বাঙালীর বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে নেই ইলিশের কদর! পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও ক্রেতা নেই ইলিশের। জানা গেছে, বাজারে নিত্যপণ্যের কোন সঙ্কট নেই। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবার তিন মাস আগে থেকে ভোগ্যপণ্য আমদানি কার্যক্রম শুরু করে ব্যবসায়ীরা। এ কারণে দেশে এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ ভোগ্যপণ্য মজুদ রয়েছে। এর পাশাপাশি গত কয়েক মাস ধরে একটু একটু করে ভোজ্যতেল, চিনি, আদা, রসুন, ডাল এবং নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে এখন আর নতুন করে দাম বাড়িয়ে ব্যবসায়ীরা বিতর্কিত হতে চান না। যে কারণে বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহও অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে এখন বেশি। রোজার এক সপ্তাহ পর থেকে দাম কমার আভাস দিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজারের এক ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ী জনকণ্ঠকে বলেন, এখনই বাজারে ক্রেতা কমে গেছে। খুচরা বিক্রেতারা গত দুই সপ্তাহ ধরে পণ্য নিয়ে দোকান ভরে ফেলেছেন। ফলে পাইকারি বাজারে আড়তদাররা পণ্য নিয়ে বসে থাকলে সেভাবে ক্রেতার দেখা মিলছে না। তিনি বলেন, বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম দ্রুত কমে আসবে। ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জানা গেছে, লকডাউনের সময় পণ্যবাহী যেকোন ট্রাক, লরি, ভ্যান ও অন্যান্য যানবাহন সরকারের বিশেষ সুবিধা নিয়ে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে। এক্ষেত্রে সরকারী নির্দেশনাও রয়েছে। ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য পণ্যবাহী যানবাহন চলতে পারবে দিবা-রাত্রি ২৪ ঘণ্টা। এক্ষেত্রে ফেরি পারাপার ও জ্বালানি সংগ্রহে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এছাড়া রাস্তায় যাতে পণ্যবাহী যানবাহন চাঁদাবাজির শিকার হতে না পারে সে লক্ষ্যে পুলিশের বিশেষ ইউনিট কাজ করবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পণ্যপরিবহনে সহযোগিতা দিতে ২৪ ঘণ্টার জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, এবারের রমজানে কোন পণ্যের দাম বাড়ার সুযোগ নেই। চাহিদার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পণ্য আমদানি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা মজুদ করলে তারা লোকসান গুনবেন। এ কারণে বাজারে এখন সরবরাহ অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি। এছাড়া সরকারী সংস্থা টিসিবি দ্বিগুণ পণ্যসামগ্রী নিয়ে ট্রাকসেল বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। ফলে দাম না বেড়ে সামনের দিকে আরও কমবে। ক্রেতাদের আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত পণ্য না কেনার পরামর্শ দেন তিনি। বাণিজ্য সচিব আরও বলেন, পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ২৪ ঘণ্টার জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। লকডাউনে পণ্যবাহী ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন স্বাভাবিক নিয়মে চলতে পারবে। শুধু চড়া মুরগি ও সবজির বাজার ॥ রোজার চাহিদায় সবেচেয়ে বেশি চড়েছে সবজির বাজার। গড়ে ৭০ টাকার নিচে কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া শসা, বেগুন, চিচিঙ্গার মতো সবজি ৮০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। ভাল মানের বেগুন এক লাফে ৯০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। দাম আরও বাড়ার কথা জানিয়েছেন সবজি বিক্রেতারা। কাপ্তান বাজারের সবজি বিক্রেতা খলিল বলেন, সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বেগুনের দাম। রোজার আগেই ৮০-৯০ টাকা। দাম আরও বাড়বে। এছাড়া কাঁচাবাজারে চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে পাকিস্তানী লেয়ার খ্যাত লাল মুরগি। প্রতি কেজি পাকিস্তানী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়। এছাড়া ৪০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। দ্রুত পণ্য পরিবহনে সহযোগিতায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ॥ লকডাউনের সময় নিত্যপণ্য পরিবহনে সহায়তা করতে মন্ত্রণালয়ের হটলাইন নিত্যপণ্যের পরিবহন সহায়তায় কন্ট্রোল সেল খুলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিত্যপণ্য উৎপাদন, আমদানি, পরিবহন ও বিপণনে কোন সমস্যা হলে সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করুন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল সেল নম্বর : ০১৭১৩১৬৮৯১৭, ০১৭৩৮১৯৫১০৬, ০১৭৫৬১৭৩৫৬০। এর আগে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ১৪ এপ্রিল ভোর থেকে ২১ এপ্রিল মধ্য রাত পর্যন্ত বিধি-নিষেধ আরোপ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রয়-সরবরাহ করা যাবে। শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে। আর কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে গণপরিবহন, দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ রাখা হবে। তবে জরুরী পরিষেবা হিসেবে এ লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে সংবাদমাধ্যম। কৃষিপণ্য ও পার্সেল পরিবহনে বিশেষ ট্রেন চালু হচ্ছে ॥ লকডাউনে সব ধরনের পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের পাশাপাশি আজ বুধবার থেকে কৃষিজাত পণ্য ও পার্সেল পরিবহনে চার জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। মঙ্গলবার রেল ভবনে ‘লকডাউন এবং কোভিডকালীন পণ্যবাহী ও পার্সেল ট্রেন পরিচালনা’ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বুধবার থেকে এক সপ্তাহ কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত ৫ এপ্রিল থেকেই দেশে বিভিন্ন বিধিনিষেধ চলছে। তখন থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ রেখে শুধু জরুরী পণ্য পরিবহন করছে রেলওয়ে। রেলমন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষকরা যাতে মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে রেলের সুবিধা নিতে পারে, সেজন্য গতবারও ম্যাংগো ট্রেন, লাগেজ ভ্যান ও কোরবানির সময় পশুবাহী ট্রেন চলানো হয়েছিল। এবার পরিকল্পিতভাবে এসব পার্সেল ট্রেন চালানো হবে। তিনি জানান, ঢাকা-সিলেট (প্রতিদিন), সিলেট-ঢাকা (প্রতিদিন), চট্টগ্রাম-সরিষাবাড়ী (প্রতিদিন), সরিষাবাড়ী-চট্টগ্রাম (প্রতিদিন), খুলনা-চিলহাটি (শনি, সোম, বুধ), চিলহাটি-খুলনা (রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার), পঞ্চগড়-ঢাকা (শনি, সোম, বুধ), ঢাকা-পঞ্চগড় (রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার) পার্সেল ট্রেন চলাচল করবে। কাল বুধবার থেকে এই ট্রেনগুলো চলাচল শুরু হবে জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে লকডাউনের জন্য এগুলো চালু করা হয়েছে, পরবর্তীতে প্রয়োজনের ভিত্তিতে এই ট্রেন চালু রাখার পরিকল্পনা রয়েছে এবং এর পরিধি বৃদ্ধি করব।
×