ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্রোতের মতো ঢাকা ছাড়ে মানুষ

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ১৪ এপ্রিল ২০২১

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্রোতের মতো ঢাকা ছাড়ে মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ বুধবার থেকে শুরু কঠোর লকডাউন। এই কঠোর লকডাউনে দেশে জরুরী সেবা ছাড়া বন্ধ থাকবে সরকারী-বেসরকারী সব ধরনের অফিস, দোকানপাট ও শপিংমল। এই লকডাউনের আগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্রোতের মতো রাজধানী ছাড়ে মানুষ। মিনিবাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, এমনকি ট্রাকেও গাদাগাদি করে ছোটে মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি মানার যে বিধান কেউ মানছেন আবার কেউ মানছেন না। তবে মানুষের গাদাগাদিতে সামাজিক দূরত্ব মানা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছে যাত্রীদের জন্য। উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এপ্রিলের প্রথমদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১১ দফা নির্দেশনা সংবলিত কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে। এরপরও করোনার বিস্তার বাড়তে থাকায় আজ বুধবার থেকে ৮ দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে অফিস-আদালত, গণপরিবহনসহ সব ধরনের যানবাহন বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। সোমবার কঠোর বিধি-নিষেধ জারি করা হয়। এই বিধি-নিষেধে কাঁচাবাজার, হোটেল রেস্তরাঁকেও খোলা রাখার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়। এই লকডাউনে শ্রমজীবী মানুষের রোজগারের পথ কমে যাওয়ায় অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে গ্রামে ফিরছেন। সঙ্গে যোগ দিয়েছেন চাকরিজীবীদের একাংশ। যদিও চাকরিজীবীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু সেটি অমান্য করেই অনেকেই রাজধানীর বাইরে যাচ্ছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা ছাড়তে মানুষের ঢলে চাপ পড়েছে আরিচা, মাওয়া ফেরিঘাটেও। যাত্রী ও যানবাহন সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। নদী পাড়ি দিতে ফেরির পাশাপাশি স্পিডবোট, ট্রলার ও লঞ্চেও উঠছে মানুষ। একইভাবে সড়ক পথেও মানুষের ভিড়। উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কেও যানজট দেখা গেছে। কঠোর লকডাউনে সংক্রমণ কমানোর জন্য সরকারী প্রচেষ্টা থাকলেও জনমানুষের বাড়ি যাওয়ার প্রবণতায় ভয় পাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের আশঙ্কা এই জনস্রোত করোনাভাইরাসের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব রাজধানী থেকে বয়ে নিয়ে যাবে তৃণমূলেও। গত ৫ এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার সব বাস, ট্রেন, নৌযান ও আকাশ পথ। তবুও রাজধানী ছাড়ার প্রবণতা থেমে নেই। শহরের বহির্মুখ পর্যন্ত সিটি বাস বা অন্যান্য বাহনে চড়ে যাচ্ছে মানুষ। এর পর লোকাল বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, অটোরিক্সায় ছুটছে বাড়ির পথে। অনেকে যানবাহন না পেয়ে হেঁটেই যাচ্ছেন নিজেদের গন্তব্যে। নদীপথে ট্রলারও ভরসা অনেকের। কঠোর লকডাউন আরোপের ঘোষণার পর রবিবার থেকেই ঢাকা ছাড়তে ঢল নামে মানুষের। পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি শোচনীয় পর্যায়ে ঠেকেছে মঙ্গলবারে। সব ধরনের ট্রেন বন্ধ থাকায় যাত্রীরা সড়কপথকেই বেছে নিয়েছেন। সংক্রমণ ও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই অনেকেই অফিস শেষ করেই গ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করেন। যাত্রাবাড়ী, আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী, আমিনবাজার সেতু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মানুষের স্রোত। বেশির ভাগের মুখে মাস্ক নেই, বালাই নেই কোন সামাজিক দূরত্বের। গত ৫ এপ্রিল থেকে ঢিলেঢালা লকডাউন শুরুর পর জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের সতর্ক আচরণ ছিল চোখে পড়ার মতো, তবে গত কয়েক দিনে ঢিলেঢালাভাব পরিলক্ষিত হয়। র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন, মানুষকে জোর করে তো আটকানো যায় না। আমরা সচেতন করতে কাজ করেছি। স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলেছি, কিন্তু কেউই কিছু মানছে না। আমাদের স্বল্প জনবলে এত মানুষকে ঠেকানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এই সর্বাত্মক লকডাউনের আগে মানুষ তাদের বাড়িকে বেশি নিরাপদ মনে করছে। যে কারণে যে যেভাবে পারছে বাড়ি যাচ্ছে। আমরা গত বছর মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছিলাম, তখন মানুষ বিভিন্ন লিংকরোড হয়ে বাড়ি গিয়েছে। এভাবে তো হয় না। বুধবার সর্বাত্মক লকডাউন শুরুর পর তা বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থান নেয়া হবে বলে জানান মোজাম্মেল হক। ঢাকা মহানগর এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। তবে গত তিন দিন তাদেরও তেমন সক্রিয় দেখা যায়নি। ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসির আরাফাত বলেন, আমরা গত সপ্তাহে কাজ করেছি। অন্যরা এ সপ্তাহে কাজ করছেন।’ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ লেলিন চৌধুরী বলেন, নিজের ইচ্ছামতো লকডাউনের একটি সংজ্ঞা তৈরি করেছে সরকার। এর সঙ্গে বিজ্ঞানভিত্তিক লকডাউনের কোন মিল নেই। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা, ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহর থেকে মানুষ এখন গ্রামে যাচ্ছে। সাধারণ ছুটি যদি না বাড়ে তাহলে তারা আবার রাজধানীতে ফিরবে। এর মানে হলো কয়েক লাখ মানুষ এই এক সপ্তাহে আসা-যাওয়া করবে। ফলে লকডাউনের যে উদ্দেশ্য অর্থাৎ মানুষকে ঘরে আটকে রাখা, বিচ্ছিন্ন রাখা, তা সফল হচ্ছে না। উল্টো মানুষের চলাচল আরও বেড়ে যাওয়ায় গ্রামেও করোনা ছড়ানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
×