ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ১৪ এপ্রিল ২০২১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ বছর ঘুরে মাহে রমজানুল মোবারক আবার আমাদের মাঝে উপস্থিত। গতকাল আকাশে এক ফালি নয়া চাঁদ মুচকি হেসে সে বার্তা জানান দিল। বরকতময় মাসের আগমনী বার্তা পেয়ে নয়া চাঁদ দেখে মুমিনরা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে- আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু বিল আমানে ওয়াল ইমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম - হে আল্লাহ এ নয়া চাঁদ আমাদের জন্য শান্তি ও ইমান বৃদ্ধির, নিরাপত্তা ও ইসলামের বিকাশের প্রতীক বানাও। ইবাদতের জন্য জীবনের পরিশুদ্ধির জন্য মাহে রমজান এক মহাআশীর্বাদ। এ মাসে অঝোর ধারায় পরওয়ার দিগারের রহমত বর্ষিত হয়, তিনি পাপীতাপীদের সর্বাধিক ক্ষমা করেন। হুজুরে আকরাম (স.) তাই ইরশাদ করেছেন- আওয়ালুহু রাহমাহ, আওসাতুহু মাগফিরাহ, ওয়া আখিরুহু ইতকুন মিনান্নার।’- এর প্রথম দশক রহমতের দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত বা ক্ষমার আর সমাপনী দশক জাহান্নাম থেকে মুক্তির সুসংবাদবাহী। এতসব মর্যাদার পেছনে রয়েছে মহা কল্যাণবাহী আল কোরান নাজিলের মাস। কোরান যার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়েছে সে ধন্য। ধন্য দুনিয়া আখিরাতে। আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারায় বলেছেন- শাহরু রামাদান্নাল্লাজি উনজিলা ফিহিল কোরান। এ এমন এক মাস যে মাসে আল্লাহ কোরান শরীফ নাজিল করেছেন। আল্লাহর নির্দেশÑ যার জীবনে এ মাস আসবে সে যেন সিয়াম সাধনায় মনোনিবেশ করে। গত রাত থেকে মুমিনরা তারাবি নামাজের মাধ্যমে সিয়ামের প্রাক কার্যক্রম শুরু করেছেন। এভাবেই শুরু হলো তাহাজ্জদ সেহরি তিলাওয়াত ও তাসবিহ প্রভৃতির চর্চা। বলাবাহুল্য, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গোটা বিশ্ব এক অস্বাভাবিক গোমট বাঁধা পরিস্থিতিতে নিপতিত। এক গায়েবি বাতাস অপ্রতিরোধ্য করোনাভাইরাস নানা রূপে নানা বেশে দংশন করে যাচ্ছে মানবতাকে। এখানে নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব, সাদা-কালো, দেশ-মহাদেশ সবই একাকার, পয়মাল। দুনিয়ার তাবত প্রযুক্তি এখনও ঘুরে ফিরছে করোনা নিয়ন্ত্রণের পেছনে। মাহে রমজানের সময়টুকুতেও আমাদের এ ভয়াবহ মহামারী থেকে বাঁচার আত্মকৌশল অনুশীলন করতে হবে। গত বছরের সিয়াম সাধনার মতো এ বছরও আমরা অধিক স্বাস্থ্য সচেতন হব এ প্রত্যাশা। মহামারী করোনা আমাদের জীবনে অনেক প্রশ,œ অনেক শিক্ষা, অনেক দুর্দশা নিয়ে এসেছে। আল্লাহ বলেন, সুখ-দুঃখ, হায়াত-মওতের মালিক একমাত্র তিনি। যত বিপর্যয়, হানাহানি মানবজাতির হাতের কামাই। আজ আমাদের পরিপূর্ণভাবে ফিরে আসতে হবে হক পথে, শুদ্ধ ও হালাল পথে, সুস্থ ও সুন্দরের পথে, ন্যায়নীতি ও ইনসাফের পথে। মানুষে মানুষে অশ্লীলতা ও জুলুমের নিকৃষ্টতম সময় পার করছি আমরা। করোনার আলামতে বোঝা যায় এটি নিছক সর্বনাশা রোগ নয়, সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে একটি মস্তবড় গজব ও অভিশাপও বটে। এখন খোদা তায়ালার দরবারে ধরনা দেয়ার সময়। নিজের জন্য এবং একটি বসবাসযোগ্য সুন্দর পৃথিবী দানের জন্য আকুতি জানানোর সময়। তাই মাহে রমজানের এ সূচনালগ্নে দু’হাত তুলে করুণাময়ের কাছে তারই শিখিয়ে দেয়া মোনাজাত করি : ‘রাব্বানা যলামনা আনফুসিনা ওয়া ইল্লাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা লানা কুূ নান্না মিনাল খসিরিন।’- প্রভু আমাদের! আমরা আমাদের আত্মা ও জীবনের ওপর জুলুম করেছি। তুমি যদি আমাদের ক্ষমা না কর আর তোমার রহমত ভিক্ষা না দাও, আমরা তো সর্বস্বান্ত হয়ে যাব। আসুন আমরা শুরু থেকেই স্বাস্থ্য সচেতন হই। নিজেকে এবং নিজের পরিবার সমাজকে রক্ষা করি। ধর্মকর্ম পরিচালনায়ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। এ বিষয়ে আমরা সামনেও কথা বলব। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুনুন ওয়াল জুঝাম ওয়ামিন সাইয়্যিল আসকাম।
×