ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীর ফোনে রয়েছে পর্নোগ্রাফিতে ঠাসা, আদালতে রিমান্ডের আবেদন

প্রকাশিত: ২১:০৪, ১৩ এপ্রিল ২০২১

‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীর ফোনে রয়েছে পর্নোগ্রাফিতে ঠাসা, আদালতে রিমান্ডের আবেদন

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ বিতর্কিত ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীর মোবাইল ফোনে আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ ‘এডাল্ট কনটেন্ট’ অশ্লীল ভিডিও চিত্রসহ পর্নোগ্রাফিতে রয়েছে ঠাসা। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা মাদানীর মোবাইল ফোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এসব পর্নোগ্রাফির সন্ধান পেয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ গাছা থানায় অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানিয়েছেন। পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, কথিত ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীকে (২৬) গ্রেফতারকালে তার কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। জব্দকৃত মোবাইল ফোনের ফরেনসিক টেস্টের পর বিশেষজ্ঞদের যে মতামত পাওয়া গেছে- তাতে দেখা যায়, রফিকুল ইসলাম মাদানী তার মোবাইলে এডাল্ট ছবি ও ভিডিও নিয়মিক দেখতেন এবং সেগুলো স্টোর করতেন ও লিংক দিতেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে রুজুকৃত মামলায় পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এর ৮(৫)(ক) ধারা সংযোজন করা হয়েছে। রফিকুল ইসলাম মাদানী মোবাইল ফোনে নিয়মিত পর্নোগ্রাফি ভিডিও দেখাসহ রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। গত ৮ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে জিএমপি’র গাছা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ১১ এপ্রিল বাসন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পৃথক আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়। তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত রফিকুল ইসলাম জেলহাজতে রয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭দিনের রিমান্ড চেয়ে মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আগামী ১৫ এপ্রিল রিমান্ড শুনানীর দিন ধার্য্য করেছেন আদালত। জিএমপি’র গাছা থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, রফিকুল ইসলাম মাদানীর কাছ থেকে জব্দকৃত মোবাইল এক্সপার্টের কাছে দেয়া হয়। ্এতে দেখা গেছে তিনি পর্নোগ্রাফি ভিডিও দেখতেন এবং সংরক্ষণ করতেন। পর্নোগ্রাফি ভিডিও সংরক্ষণ করা একটি দন্ডনীয় অপরাধ। তাই তার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় পর্নোগ্রাফি মামলার ওই ধারাও সংযুক্ত করা হয়েছে। চার্জশীট দেয়ার সময় ওই দুইটি বিষয়ে আলাদাভাবে চার্জশীট দেয়া হবে। জিএমপি’র গাছা থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এডিসি মোহাম্মদ আহসান, গাছা থানার ওসি ইসমাইল হোসেন ও পরিদর্শক (তদন্ত) নন্দলাল উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গতঃ, কথিত ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানী বিভিন্ন মাহফিলে রাষ্ট্র তথা সরকার বিরোধী ও আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থী উস্কানী ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ডিজিটাল মাধ্যমে প্রদান করেন। যা তার নির্দেশে ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। রফিকুল ইসলাম মাদানীর উস্কানীমূলক বক্তব্যের কারনে তার অনুসারীরা গত ২৬ মার্চ ঢাকা বায়তুল মোকাররম মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা করে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুন্ন করা, জনমনে আতংক সৃষ্টি, সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘœ ঘটানো, আইন শৃঙ্খলা বিনষ্ট করা, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে শত্রুতাসহ সরকারের প্রতি ঘৃণারভাব সৃষ্টি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে দেশের সরল ও ধর্মানুরাগী মানুষের ধর্মীয় মুল্যবোধ ও ধর্মী অনুভুতিতে আঘাত করে বক্তব্য প্রদান করেন, যা ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তিনি বাড়িয়ালী এলাকাস্থিত নিজের ‘মারকাজুল নূর আল ইসলামিয়া মাদরাসায়’ বসে দেশদ্রোহ ও সরকার বিরোধী কার্যকলাপ এবং নাশকতা কর্মকান্ড ঘটানোর পরিকল্পনা করতেন। তিনি সরাসরি সশস্ত্র জিহাদের ডাক দেন, এবং এক্ষুনি জিহাদের উপযুক্ত সময় বলে সবাইকে আহবান জানিয়ে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে উস্কানির ভিডিও চিত্র ফেসবুক, ইন্টারনেট ও ইউটিউবের বিভিন্ন চ্যানেল ও পেজে আপলোডের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন বলে দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করা হয়। গত ৭এপ্রিল ভোররাতে ‘শিশু বক্তা’ হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে (২৬) নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার লেটিরকান্দা এলাকার বাড়ি থেকে আটক করে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। তিনি ওই এলাকার মৃত সাহাব উদ্দিনের ছেলে। ওই দিন রাতেই গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানায় তাকে হস্তান্তর করা হয়। ৮ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে ওই থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। র‌্যাব-১’র জেসিও-৮৭২৭ নায়েব সুবেদার (ডিএডি) মোঃ আব্দুল খালেক বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। একইদিন এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গাজীপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো. শরিফুল ইসলাম এর আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ প্রদান করলে গাজীপুর জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পরে সেখানে থেকে ১০ এপ্রিল তাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ তে স্থানান্তর করা হয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১১ এপ্রিল জিএমপি’র বাসন থানায় পৃথক আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়।
×