ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

ভয়ঙ্কর কাল শেষে আসবে সুন্দর

প্রকাশিত: ২০:৫১, ১৪ এপ্রিল ২০২১

ভয়ঙ্কর কাল শেষে আসবে সুন্দর

পঞ্জিকার পাতা উল্টিয়ে ফিরে এসেছে পহেলা বৈশাখ, বাঙালীর প্রাণের উৎসব। তবে গতবারের মতো এবারের বৈশাখও ব্যতিক্রম। বাঙালীর প্রাণের উৎসবে আমেজ আছে, কিন্তু প্রাণ নেই। অতিমারীর এই সময়টায় ঘরে-ঘরে যখন রোগ আর মৃত্যুর হাতছানি, তখন বৈশাখ আসে ঠিকই তবে তা আসে কাল ভয়ঙ্করের বেশে। পরপর দু’বার অতিমারী আমাদের বৈশাখ বঞ্চিত করেছে। পহেলা বৈশাখের যে প্রাণের ছোঁয়া, ভার্চুয়ালী তা ছোয়া যায় না। অতিমারীকে আমরা তাই আর জিততে দিতে পারি না। আমাদের সাজ-সাজ রব তাই এখন থেকেই। এই জনকণ্ঠেই দু’দিন আগে খবর এসেছে অতিমারীর আগামী ঢেউ মোকাবেলায় সরকারের আগাম প্রস্তুতির। দেশের ১৪ কোটি নাগরিককে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর তেমনটি যদি করা যায় তাহলে বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশাÑ তাতেই আসবে মুক্তি। কারণ এর মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে অতিমারীর বিরুদ্ধে ‘পালগত প্রতিরোধ’, ইংরেজীতে যাকে বলে হার্ড ইমিউনিটি। এজন্য আগামী বাজেটের সংস্থান রাখা হচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ছাড়াও এই তহবিল গঠনে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। সঙ্গে আছে বিশ্ব ব্যাংক, ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক আর জাপান, জার্মান ও ফ্রেঞ্চ সরকার। কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স এ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রাম শিরোনামের এই প্রজেক্টের আওতায় পাশাপাশি সাড়া দেশে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসায় সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগগুলোও থাকছে। আশা জাগানিয়া খবর আছে আরও। সরকার কোভিড-১৯ এর নতুন ভ্যাকসিন খোঁজার উদ্যোগ নিয়েছেন। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমি যা বুঝি আমাদের জোর দিতে হবে ভারত আর রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা আর যোগাযোগের ওপর। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল ও ভারত বায়োটেকের যৌথ গবেষণার ফসল ‘কোভ্যাকসিন’। এরই মধ্যে এটি ভারতে অনুমোদন পেয়েছে, ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যাপকভাবে। ভারত ছাড়াও মেক্সিকো, ইরান, নেপাল ও জিম্বাবুইয়েও এই ভ্যাকসিনকে অনুমোদন দিয়েছে। সামনে এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রিকোয়ালিফিকেশনও বলে শোনা যাচ্ছে। ভ্যাকসিনটি নিয়েছেন খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজের সঙ্গে দ্বিতীয় ডোজ স্পুটনিক ফাইভ নেয়া গেলে তাতে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। এ নিয়ে গবেষণার কথাও জানিয়েছে এস্ট্রাজেনেকা। আামাদের জন্মলগ্নের দুই পরীক্ষিত মিত্র ভারত আর রাশিয়ার সঙ্গে ভ্যাকসিন সহযোগিতা চৌদ্দ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনার স্বপ্নটাকে বাস্তবে পরিণত করতে অনেক খানি সহায়ক হবে। পাশাপাশি টেক-ট্রান্সফারের মাধ্যমে দেশেও কোভিশিল্ড, কোভ্যাকসিন আর স্পুটনিক ফাইভ উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া জরুরী। আমাদের দেশের একাধিক ওষুধ কোম্পানির ভ্যাকসিন উৎপাদনে যে সক্ষমতা আছে তাকে কাজে লাগিয়ে এবং প্রয়োজনে সরকারী উদ্যোগে সেই সক্ষমতা বৃদ্ধি করে আমরা আমাদের পালগত প্রতিরোধের অভীষ্ট লক্ষ্যে আরও তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারব। অত্যন্ত জরুরী আরেকটি বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশে উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা। এমআরএনএ টেকনোলজি চলে আসার কারণে ভ্যাকসিন উদ্ভাবন এখন আর কোন রকেট সাইন্স নয়। প্রয়োজন দক্ষ মানব সম্পদ আর গবেষণাগার যেটি এদেশে বর্তমান। ইরান যদি নিজেদের উদ্ভাবিত ‘বারকাত’ ভ্যাকসিন দিয়ে কোভিডকে নিয়ন্ত্রণে আনায় যোজন-যোজন এগিয়ে গিয়ে থাকতে পারে আর কিউবা যদি স্বপ্ন দেখে নিজেদের ‘সভরেইন-২’ ভ্যাকসিন দিয়ে কোভিড জয়ের, তাহলে আমরা কেন না? আমাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করে দেখতে হবে আমাদের ভ্যাকসিন আমাদের কাজে আসে কিনা। কারণ যদি তাই হয় তবে সেখানেই তো আলাউদ্দিনের চেরাগ। তবে পাশাপাশি আমাদেরও সচেতন হতে হবে শারীরিক বিধিগুলো মানায়। আর যা কিছু নিয়েই বিতর্ক থাকুক না কেন, এটাতো প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, মাস্ক পরে হাত ধুয়ে আর সঙ্গে অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে না গিয়ে আমরা কোভিডকে জিতে নিতে পারি। তাই শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে আর প্রতিটি লকডাউনের আগের দিনগুলোকে একেকটি ঈদ উৎসব না বানিয়ে আমাদের আত্মসচেতনতায় বিনিয়োগ করা উচিত। এবারের পহেলা বৈশাখ আসছে ভয়ঙ্করের বেশে, কিন্তু আসা জাগানিয়া এই কিছু উদ্যোগ আর সঙ্গে আমাদের সচেতনতায় আমরা আগামী বৈশাখের সুন্দরের বেশে আসাটা নিশ্চিত করতে পারি এখনই। লেখক : চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ
×