মাহে রমজান আমাদের দুয়ারে কড়া নাড়ছে। মুসলমান নর-নারীর জন্য রমজানের সিয়াম সাধনা অবশ্য পালনীয় ইবাদত কর্ম। অবশ্য যারা অসুস্থ তাদের জন্য ¯্রষ্টার পক্ষ থেকে ছাড় রয়েছে। যারা ডায়াবেটিসের মতো রোগে ভুগছেন তাদের জন্য রমজানুল মোবারকে করণীয় বিষয়ে অনেক আলোচনা চলছে। বিশ্বের ১৫০ মিলিয়নের বেশি মুসলিম নর-নারী ডায়াবেটিসে ভুগছেন। সুতরাং তাদের জন্য সিয়াম পালন করার ক্ষেত্রে কোন মূলনীতি অনুসরণ করা দরকার তা জানা একান্ত জরুরী। শুরুতেই বলে রাখা ভাল রোজা রাখলে যাদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে তাদের রোজা থেকে বিরত থাকা দরকার।
কাদের জন্য রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ আজকের আলোচনা এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
২০০৫ সালে আমেরিকান ডায়াবেটিস এ্যাসোসিয়েশন রোজা রাখার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে নীতিমালা নির্ধারণ করেছিল। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে মুসলিম বিশ্বের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং ইসলামিক প-িতদের সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক ফিকাহ কাউন্সিল সেটিকে গ্রহণ করেন। তবে কিছুটা সংস্করণ সেখানে ঠাঁই পায়।
নিচের ১২টি বিষয়কে সামনে রেখে একটি নিক্তি নির্ধারণ করা হয়। এই মাপকাঠিতে যারা ৬ এর বেশি পয়েন্ট পাবেন তারা বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ। মাপকাঠিটি এমন-
১. ডায়াবেটিসের ধরন ও সময়কাল
* টাইপ-১ ডায়াবেটিস-১ পয়েন্ট
* টাইপ-২ ডায়াবেটিস-০ পয়েন্ট
* সময়কাল ১০ বছরের বেশি-১ পয়েন্ট
* সময়কাল ১০ বছরের কম-০ পয়েন্ট
২.হাইপোগ্লাইসেমিয়ার উপস্থিতি
* হাইপোগ্লাইসেমিয়া বোধগম্য না হলে-৫ পয়েন্ট
* বারবার/ গুরুতর হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে-৪ পয়েন্ট
* প্রতিদিন মৃদু মাত্রায় হাইপোগ্লাইসেমিয়া-৩ পয়েন্ট
* সপ্তাহে ১-৬ বার হলে-২ পয়েন্ট
* সপ্তাহে একবারের কম হলে-১ পয়েন্ট
* কোন হাইপোগ্লাইসেমিয়া না হলে-০ পয়েন্ট
৩.ডায়াবেটিসের মাত্রা বা নিয়ন্ত্রণ
* এইচবিএ-১ সি ৯ এর বেশি হলে-২ পয়েন্ট
* ৭.৫ থেকে ৯ এর মাঝে হলে-১ পয়েন্ট
* ৭.৫ এর নিচে হলে-০ পয়েন্ট
৪.রক্তের গ্লুুকোজ নিজস্ব তদারকি
* বাধ্যতামূলক কিন্তু না করলে-২ পয়েন্ট
* বাধ্যতামূলক এবং মাঝে মাঝে করলে-১ পয়েন্ট
* যথাযথ করলে-০ পয়েন্ট
৫. তাৎক্ষণিক জটিলতা-
* ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস, বিগত ৩ মাসে হলে-৩ পয়েন্ট
* বিগত ৬ মাসে হলে-২ পয়েন্ট
* বিগত ১২ মাসে হলে-১ পয়েন্ট
* না হলে-০ পয়েন্ট
৬. দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা
* হার্ট ফেইলোর/অস্থিতিশীল এনজিনা/ কিডনি ফেইলর ৪ বা ৫নং স্টেজ-৬ পয়েন্ট
* কিডনি ফেইলর ৩এ নং স্টেজ-৪ পয়েন্ট
* কিডনি ফেইলর ৩ বি নং স্টেজ-২ পয়েন্ট
* অন্য ক্ষেত্রে-০ পয়েন্ট
৭. গর্ভবতী মা
* সুগার কাক্সিক্ষত মাত্রার উপরে-৪ পয়েন্ট
* কাক্সিক্ষত মাত্রার মাঝে-২ পয়েন্ট
৮. বয়োবৃদ্ধ ও হিতাহিত জ্ঞান
* হিতাহিত জ্ঞান না থাকলে-৪ পয়েন্ট
* জ্বরাগ্রস্ত-৩ পয়েন্ট
* সত্তোরোর্ধ যার বাসার সাহায্য নেই-১ পয়েন্ট
৯. শারীরিক পরিশ্রম
* তীব্র মাত্রা-১ পয়েন্ট
* পরিশ্রম মৃদু-০ পয়েন্ট
১০. পূর্ববর্তী রমজানের অভিজ্ঞতা
* নেতিবাচক হলে-১ পয়েন্ট
* ইতিবাচক হলে-০ পয়েন্ট
১১. রোজার সময়কাল
* ১৬ ঘণ্টার বেশি হলে-১ পয়েন্ট
* ১৬ ঘণ্টার কম হলে-০ পয়েন্ট
১২. চিকিৎসা
* দিনে তিন-চার বার ইনসুলিন ব্যবহার করলে-৩ পয়েন্ট
* দুই রকম ইনসুলিন/পাম্প ব্যবহার করলে-২.৫ পয়েন্ট
* দিনে একবার মিশ্রিত ইনসুলিন নিলে-২ পয়েন্ট
* ব্যাজাল ইনসুলিন নিলে-১.৫ পয়েন্ট
* গ্লিবেনক্লামাইড ট্যাবলেট খেলে-১ পয়েন্ট
* অন্য সালফোনাইল ইউরিয়া গ্রুপের ওষুধ-.৫ পয়েন্ট
* অন্যান্য ট্যাবলেট- পয়েন্ট।
এতকিছু জানার পর সমস্ত যোগফল যদি
০–৩ পয়েন্ট হয় তবে মৃদু ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি। এক্ষেত্রে এমন ব্যক্তির রোজা রাখতে সমস্যা নেই।
৩.৫–৬ পয়েন্ট হলে মাঝারি ঝুঁকি। এক্ষেত্রে রোজা রাখা যেতে পারে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে। তার ওষুধের মাত্রা বদল করার পাশাপাশি নিয়মিত তদারকি করা জরুরী।
পয়েন্ট ৬ এর বেশি হলে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। তার জন্য রোজা রাখা অনুচিত।
উপরের আলোচনা একজন সাধারণ ব্যক্তির জন্য কঠিন হতে পারে। সেজন্য যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা রোজা রাখার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লে. কর্নেল ডাঃ নাসির উদ্দিন আহমদ এফসিপিএস
(সহযোগী অধ্যাপক)
(ক্লাসিফায়েড মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও এ্যান্ডোক্রাইনলোজিস্ট) সিএমএইচ, ঢাকা
[email protected]
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: