ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লকডাউনে বন্ধ থাকবে ব্যাংক শেয়ারবাজার

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ১৩ এপ্রিল ২০২১

লকডাউনে বন্ধ থাকবে ব্যাংক শেয়ারবাজার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সর্বাত্মক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সবাইকে এ বিধিনিষেধ মানতে হবে। এই আটদিন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে এটিএম, ইন্টারনেট ব্যাংকিংসহ অনলাইন সব সেবা। এই সময়ে সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দর এলাকার ব্যাংক শাখা আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের জন্য খোলা রাখা যাবে। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের অফ সাইট সুপারভিশন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানোও হয়েছে। এদিকে ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় সর্বাত্মক লকডাউনে বন্ধ থাকবে দেশের পুঁজিবাজারও। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম গণমাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ সব ব্যাংক বন্ধ থাকবে। এ সময় ব্যাংক শাখার পাশাপাশি আর্থিক সেবা দেয়া ব্যাংকের সকল উপ-শাখা, বুথ ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবাও বন্ধ থাকবে। তবে সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে এটিএম, ইন্টারনেট ব্যাংকিংসহ অনলাইন সব সেবা। এছাড়া সমুদ্র বন্দর, স্থলবন্দর, বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখা উপশাখা বুথসমূহ খোলা রাখতে বন্দর/কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি রফতানিকারকদের প্রয়োজনে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন করা শাখা (এডি) নির্দিষ্ট দিনের জন্য খোলা রাখা যাবে। তবে এ সময় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিধিনিষেধের আওতায় সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বলেছে সরকার। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে ব্যাংক বন্ধ থাকবে। তবে সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দর এলাকার ব্যাংকের শাখা ও বুথগুলো খোলা থাকবে। কারণ বন্দর কাস্টমসে পণ্য আমদানি-রফতানিতে প্রয়োজন হতে পারে; তাই সেখানকার সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো খোলা থাকবে।’ এদিকে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় সোমবার কাজ ও চলাচলের ওপর নির্দেশনা জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সব সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত বেসরকারী অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজ নিজ কর্ম এলাকায় অবস্থান করতে হবে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর ও সংশ্লিষ্ট অফিস এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। কঠোর লকডাউনের কথা ভেবে ব্যাংকে গ্রাহকদের ভিড় ॥ আগামীকাল বুধবার থেকে সরকার কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। রফতানিমুখী শিল্প কারখানা ছাড়া সব কিছুই বন্ধ থাকবে এ সময়। কড়াকড়ি আরোপ করা হবে চলাচলেও। লকডাউনের মেয়াদ এরপরে আরও বাড়বে কিনা তা কেউই বলতে পারছেন না। আর এরই মাঝে নিজের কাছে নগদ টাকা রাখতে ব্যাংকে ভিড় জমিয়েছেন গ্রাহকরা। সাধারণ গ্রাহকরা বলছেন, নিত্যপণ্যের বাজার খোলা থাকলেও ব্যাংক বন্ধ থাকবে। সে সময় প্রয়োজনীয় খরচের জন্য টাকা হাতে রাখতে চাই। সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ব্যাংক ঘুরে এসব চিত্র উঠে এসেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, এসব ব্যাংকের সামনে গ্রাহকদের দীর্ঘ সারি। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে প্রতিটি শাখাতেই। মাস্কবিহীন কোন গ্রাহককে ব্যাংকের শাখাগুলোতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে গ্রাহকের হাত স্যানিটাইজ করে দিয়ে মাপা হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রা। ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামীকাল থেকে কঠোর লকডাউনের কথা ভেবে অনেকেই আগেভাগেই ব্যাংকের কাজ সেরে রাখছেন। অনেকেই বকেয়া ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করছেন। তবে টাকা জমার চেয়ে টাকা উত্তোলনই বেশি হচ্ছে। এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা আফজাল হোসেন বলেন, লকডাউনে ব্যাংক লেনদেন বন্ধ থাকতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে গ্রাহক ব্যাংকে এসে ভিড় জমাচ্ছেন টাকা উত্তোলনের জন্য। আমরা তাদের চাহিদা মতো সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। তবে গ্রাহক উপস্থিতি বেশি হওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখতে সার্কুলার জারি করেছিল। সে মোতাবেক লেনদেন চলছিল সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। তবে লেনদেনে গ্রাহক উপস্থিতি বাড়ায় লেনদেনের সময়সীমা বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত রবিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সোমবার ব্যাংকিং লেনদেন চলে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত। আজ মঙ্গলবারও ব্যাংকিং লেনদেন চলবে তিন ঘণ্টা। আর লেনদেন পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করার জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে বেলা ৩টা পর্যন্ত।
×