ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সঙ্গীতশিল্পী মিতা হক আর নেই

প্রকাশিত: ২৩:২২, ১২ এপ্রিল ২০২১

সঙ্গীতশিল্পী মিতা হক আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী ও শুদ্ধ সঙ্গীত চর্চার অন্যতম পুরোধা মিতা হক আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রবিবার ভোর ৬টা ২০ মিনিটে একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিল্পী না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৮ বছর। একইদিনে কেরানীগঞ্জে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা ও মায়ের কবরের মাঝখানে এই শিল্পীকে দাফন করা হয়েছে। এর আগে সেখানেই হয়েছে তার নামাজে জানাজা। এ সময়ও বিভিন্ন সংগঠনের তরফ থেকে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। তার এই অকাল প্রস্থানে বিষন্নতার সুর বেজেছে সঙ্গীত ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। মরহুমার জামাতা মোস্তাফিজ শাহীন জনকণ্ঠকে বলেন, বাদ জোহর জানাজা শেষে আমাদের পারিবারিক কবরস্থানে আম্মাকে দাফন করা হয়েছে। শিল্পী মিতা হকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশে রবীন্দ্র-চর্চা এবং রবীন্দ্র সঙ্গীতকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তার প্রচেষ্টা মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। রাষ্ট্রপতি মিতা হকের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। শিল্পী মিতা হকের মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকবার্তায় প্রয়াত শিল্পীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়। ছায়ানটের শীতল ছায়ায় শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা ॥ যে ছায়ানটের শীতল ছায়ায় বেড়ে ওঠা, সেখান থেকেই শেষ শ্রদ্ধা, চোখের জল আর ফুলের শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন প্রয়াত শিল্পী মিতা হক। শ্রদ্ধা জানাতে বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর ছায়ানট ভবনে আনা হয়েছিল মিতা হকের মরদেহ। সেখানে হক পরিবারের সদস্য ছাড়াও শেষ বিদায় জানাতে ছুটে এসেছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বহুজন। সেখানে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন সাংস্কৃতিজন ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, বাপ্পা মজুমদার প্রমুখ। ২৫ মার্চ নমুনা পরীক্ষা করলে মিতা হকের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তারপর বাসায় আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। ৩১ মার্চ থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মিতা হক। পাঁচ বছর ধরে তিনি কিডনি রোগে ভুগছিলেন। নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিয়ে ভালও ছিলেন। কিন্তু এবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েন। মিতা হক প্রসঙ্গে সঙ্গীতশিল্পী তপন মাহমুদ জানান, আমি এখন আছি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। সম্ভবত সাড়ে ছয়টার দিকে একটি টেলিভিশনের মাধ্যমে জানলাম, মিতা আর নেই। খুব কষ্ট পেয়েছি- এটা বলে বোঝানোর মতো নয়। তিনি বয়সে আমার অনেক ছোট। সম্পর্কটা ভাইবোন ও বন্ধুর মতো হয়ে গিয়েছিল। আমি আমার বড় শিল্পীকে হারালাম। বিষাদে মনটা ছেয়ে আছে। যেন এ বিষাদ কেটে উঠবার নয়। মিতা হক প্রসঙ্গে সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, ভোরে বিষন্ন খবরটা শুনলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল। বিহ্বল হয়ে পড়লাম। কারণ, আমার আর মিতার যোগসূত্রটা একই স্থানে। হেঁটেছিও একই পথে। মিতা আর আমার পড়াশোনা একই জায়গায়। শান্তিনিকেতন বিষয়ও একই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাকে প্রথমে আমি চিনি ওয়াহিদ ভাইয়ের মেয়ে হিসেবে। সেই শুরু। তার এই অসময়ে চলে যাওয়াটা সত্যিই কষ্টের। তার আত্মার শান্তি কামনা করি। ঢাকায় ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে মিতা হক জন্মগ্রহণ করেন। প্রয়াত অভিনেতা খালেদ খানের স্ত্রী তিনি। তার চাচা দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রপথিক ও রবীন্দ্র গবেষক ওয়াহিদুল হক। মিতা হক ও খালেদ খান দম্পতির কন্যা জয়ীতাও রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী। বাংলাদেশ বেতারের সর্বোচ্চ গ্রেডের তালিকাভুক্ত শিল্পী মিতা হক। এককভাবে মুক্তি পাওয়া মোট ২৪টি এ্যালবাম আছে তার। ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক লাভ করেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মিতা হককে বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র পুরস্কার দেয়া হয়। এছাড়া সঙ্গীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০২০ সালে একুশে পদক পান তিনি। তিনি প্রথমে তার চাচা ওয়াহিদুল হক এবং পরে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খান ও সঙ্গীতজ্ঞ সনজীদা খাতুনের কাছে গান শেখেন। ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি তবলাবাদক মোহাম্মদ হোসেন খানের কাছে গান শেখা শুরু করেন। ১৯৭৭ সাল থেকে নিয়মিত তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে সঙ্গীত পরিবেশনা করতেন। তিনি সুরতীর্থ নামে একটি সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন।
×