ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বহিরাগতদের নিয়ে গেটে তালা, হামলা ॥ ধাওয়া খেয়ে পলায়ন

জনকণ্ঠের প্রকাশনা বন্ধের পাঁয়তারা চাকরিচ্যুতদের

প্রকাশিত: ২৩:২০, ১২ এপ্রিল ২০২১

জনকণ্ঠের প্রকাশনা বন্ধের পাঁয়তারা চাকরিচ্যুতদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ চাকরিচ্যুতদের একাংশ বহিরাগতদের নিয়ে রবিবার দুপুর থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা গেটে তালা দিয়ে জনকণ্ঠ ভবন অবরুদ্ধ করে রাখে। জনকণ্ঠ প্রকাশনা বন্ধে মূলত তারা গেটে তালা দিয়ে কর্মীদের প্রবেশে বাধা দেয়। এ সময় জনকণ্ঠসহ গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিভিন্ন বিভাগের প্রায় দেড় শ’ কর্মী আটকা পড়েন। অবরোধকারীরা এ সময় বাংলামোটর-মগবাজার সড়কটিও বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আটকা পড়ে জরুরী এ্যাম্বুলেন্সসহ গণপরিবহন ও সরকারী- বেসরকারী বিভিন্ন গাড়ি। দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘণ্টা আটকে থাকার পর পরিবহনকর্মী ও আশপাশ এলাকার জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে অবরোধকারীদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় তারা বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে ফেলে এবং তা দিয়ে অবরোধকারীদের ধাওয়া দেয়। সঙ্গে সঙ্গে একদিকে জনকণ্ঠ ভবনে আটকে থাকা কর্মীরা তালা ভেঙ্গে বাইরে বেরিয়ে আসেন, অন্যদিকে বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিক কর্মচারীরা ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে ক্ষুব্ধ জনগণের সঙ্গে সবাই যোগ দেন। সম্মিলিত ধাওয়ায় অবরোধকারীরা পালিয়ে যায়। এরপর থেকে জনকণ্ঠে আবার পুরোদমে কাজ শুরু হয়। এ ব্যাপারে জনকণ্ঠ কর্তৃপক্ষ জানান, পুলিশের সাহায্য চেয়ে পাওয়া যায়নি। এ ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। এ ব্যাপারে জনকণ্ঠের পক্ষ থেকে হাতিরঝিল থানায় একটি এজাহার দায়ের করতে গেলে থানা এজাহারটি গ্রহণ করেনি। এজাহারের কোন নাম্বার না দিয়ে আবেদনটি রেখে দিয়েছে। মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে দায়ের করা এই এজাহারে বলা হয়, বিগত ১৫ মার্চ জনকণ্ঠ ২৬ জন সাংবাদিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করে এবং তাদের সমুদয় পাওনা অফিস থেকে বুঝে নেয়ার অনুরোধ জানায়। ইতোমধ্যে চাকিরচ্যুতদের চারজন তাদের পাওনা বুঝে নেন। এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, রবিবার দুপুর ১২টার দিকে আসামি রাজন ভট্টাচার্য্যরে নেতৃত্বে ২০/৩০ জন সন্ত্রাসী জনকণ্ঠ ভবনের দুই গেটে বেআইনীভাবে প্রবেশ করে ভবনের গার্ডদের জিম্মি করে তালা মেরে ভবনে অবস্থিত প্রায় দেড় শ’ সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জিম্মি করে রাখে। এ সময় ভবনের দক্ষিণ পাশের বাংলামোটর-মগবাজার সড়কটি বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ করে রাখে। এতে পুরো এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর থেকে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করে রাখলে রাস্তায় আটকে থাকা পরিবহনকর্মী ও আশপাশের এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে অবরোধকারীদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় তারা বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে ফেলে এবং তা দিয়ে অবরোধকারীদের ধাওয়া দেয়। কিছুটা পিছিয়ে অবরোধকারীরা আবার তাদের পাল্টা ধাওয়া দেয়। এই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে জনকণ্ঠ ভবনে আটকে থাকা কর্মীরা তালা ভেঙ্গে বাইরে বেরিয়ে আসেন এবং বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিক কর্মচারীরা ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে সবাই ক্ষুব্ধ জনগণের সঙ্গে যোগ দেন। সম্মিলিত ধাওয়ায় তারা পালিয়ে যায়। এর পর থেকে জনকণ্ঠে আবার কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়। জনকণ্ঠ কর্তৃপক্ষ জানান, জনকণ্ঠের ওপর ষড়যন্ত্র দীর্ঘদিনের। ২০০১ সালে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের শুরুতে দেশব্যাপী জ্বালাও, পোড়াও, পাশবিক নির্যাতন, আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়। সে সময় একমাত্র জনকণ্ঠ পত্রিকা সত্য ঘটনা তুলে ধরে। এতে শুরু হয় জনকণ্ঠ পত্রিকার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র। কোথাও পত্রিকা পুড়িয়ে দেয়া, কোথাও পত্রিকা যেতে না দেয়া থেকে শুরু করে গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের বিভিন্ন ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা চলে অনবরত। এই সময় জোট সরকার জনকণ্ঠকে এক ইঞ্চি বিজ্ঞাপন পর্যন্ত দেয়নি। এমনকি বেসরকারী বিজ্ঞাপনদাতাদের জনকণ্ঠে বিজ্ঞাপন না দেয়ার জন্য বলা হয়। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও জনকণ্ঠ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি। এর খেসারত হিসেবে জনকণ্ঠের সদ্যপ্রয়াত সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদকে কারাবরণও করতে হয়। তারপরও তিনি তাঁর আদর্শে ছিলেন অবিচল। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের এই প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দিতে জামায়াত-বিএনপিপন্থ’ীরা একের পর এক ষড়যন্ত্র করে আসছে। এক সময় জনকণ্ঠ ভবন বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার হুমকি ও পরিকল্পনা ছিল জামায়াতের। এতো কিছুর পরও জনকণ্ঠকে যখন আদর্শচ্যুত করতে পারেনি, তখন এবার ষড়যন্ত্র চলছে জনকণ্ঠ পত্রিকা বন্ধ করার। সুকৌশলে জামায়াত-বিএনপিপন্থী কিছু সাংবাদিক, কর্মচারী জনকণ্ঠে ঢুকে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে নানা মাধ্যমে তারা জনকণ্ঠ পত্রিকায় ঢোকে। একের পর এক ক্ষেত্র তৈরি করতে থাকে তারা। এতে সহজ-সরল প্রকৃতির নিরপেক্ষ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কিছু সংবাদিককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করে। তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জনকণ্ঠ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়ার পাঁয়তারা চালাতে থাকে। এ কাজে যুক্ত থাকা কতিপয় সাংবাদিক কর্মচারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন কর্তৃপক্ষ। সমুদয় পাওনা বুঝিয়ে দিলেও এর কয়েকজন তা নিচ্ছে না। না নিয়ে জনকণ্ঠ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের জন্য গেটে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে।
×