ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বয়ংক্রিয় চালান

দশমিক ১০ শতাংশ কমিশন পাবে বাণিজ্যিক ব্যাংক

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ১২ এপ্রিল ২০২১

দশমিক ১০ শতাংশ কমিশন পাবে বাণিজ্যিক ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চালান নিলে শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ হারে কমিশন পাবে। সরকারের পক্ষে স্থানীয় তফসিলী ব্যাংকগুলোর জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ বিভাগ। ইতোমধ্যে অর্থ বিভাগের সম্মতির বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরকে এক চিঠিতে জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, যেসব ব্যাংক স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চালান গ্রহণ করবে, সেগুলোর মোট অর্থের শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ হারে কমিশন প্রদানে অর্থ বিভাগের সম্মতি দেয়া হলো। তবে এ কমিশন প্রদানের ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত দিয়েছে অর্থ বিভাগ। চিঠিপ্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করে ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, চালান প্রদানে বাড়তি সময় তথা ব্যবসায়ীদের হয়রানি কমাতে এই উদ্যোগ বড় ভূমিকা রাখবে। আগে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ১-২টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে চালান জমা দেয়া যেত। এখন দেশের সরকারী-বেসরকারী যে কোন ব্যাংকের যে কোন শাখা থেকে চালান জমা দেয়া যাবে। এর মাধ্যমে রাজস্ব আয়েও গতি আসবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো সেবা দিলে তাকে সেবা মূল্য বা বিনিময় দিতেই হবে। এজন্যই কমিশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে তারা (ব্যাংক) চালান গ্রহণে উৎসাহিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। অর্থ বিভাগের উপসচিব তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্ণিত কমিশন প্রদানের লক্ষ্যে ‘১০৯০১০১-সচিবালয়, অর্থ বিভাগ’ এর অধীনে বিশেষ কার্যক্রমের আওতায় ‘স্বয়ংক্রিয় চালানের অর্থ জমাকরণ বাবদ কমিশন’ শীর্ষক অপারেশনাল কোড খোলা হবে। উক্ত অপারেশনাল কোডের অধীনে ‘৩২২১১১০-কমিশন’ নামক অর্থনৈতিক খাতের অনুকূলে এ বাবদ প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান করা হবে। স্থানীয় তফসিল ব্যাংকগুলো গৃহীত চালানের মোট অর্থের ওপর শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ হারে কমিশন প্রাপ্য চাহিদা মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রেরণ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক যাচাই-বাছাই করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ প্রাপ্য চাহিদা প্রেরণ করবে। অর্থ বিভাগ ‘৩২২১১১০-কমিশন’ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে প্রদান করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাপ্ত অর্থ ব্যাংকগুলোর মধ্যে বণ্টন করবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, কোন চালানে ভুল হলে অথবা কোন চালান বাতিল করার বিষয়ে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে গৃহীত বর্তমান পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। ব্যাংকগুলোকে স্বয়ংক্রিয় চালানের মাধ্যমে গৃহীত সমুদয় অর্থ একই দিনে (অন ডে) সরকারী হিসাবে জমা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই ইতিবাচক। এটি দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতেও সহায়ক হবে। এতে ইজ অব ডুয়িং বিজনেজ বা ব্যবসা সহজীকরণ করার ধারাবাহিক প্রক্রিয়াকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে চালান জমার নামে যে হয়রানি হতো, এতে অনেক ব্যবসায়ী নিরুৎসাহী হতেন। এখন জেলা উপজেলা থেকেও যদি চালান জমা দেয়া যায়, তাহলে ব্যবসায়ীরাও চালান জমা দিতে উৎসাহিত হবেন। গত অক্টোবরে অনলাইনে চালান জমা দেয়ার পদ্ধতি চালু করা হয়। ওই সময় জানানো হয়, অনলাইন পদ্ধতির ১ম পর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীর সোনালী ব্যাংক, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের সব শাখার মাধ্যমে চালানের অর্থ দেয়া যাবে। ২য় পর্যায়ে ঢাকা মহানগরীর অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের সব শাখা এবং ৩য় পর্যায়ে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখায় বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৯ শাখা এবং সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ২২৪ শাখা ট্রেজারি চালান নেয়। এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্বোধন হলেও স্বয়ংক্রিয় চালান পদ্ধতি সারাদেশে বাস্তবায়ন করা হবে মূলত তিন পর্যায়ে। আপাতত, অর্থাৎ ১ম পর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীর সোনালী ব্যাংক, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের সব শাখার মাধ্যমে চালানের অর্থ দেয়া যাবে। ২য় পর্যায়ে ঢাকা মহানগরীর অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের সব শাখা এবং ৩য় পর্যায়ে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখায় বাস্তবায়ন করা হবে। স্বয়ংক্রিয় চালান পদ্ধতিতে ব্যাংকের শাখার কাউন্টারে নগদ, চেক ও এ্যাকাউন্ট ডেবিটের মাধ্যমে অর্থ জমা দেয়ার সুযোগ রয়েছে। গ্রাহকরা অনলাইন ব্যাংকিং ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমেও চালানের অর্থ জমা দিতে পারবেন বলে বলা হয়েছে।
×