ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের প্রশংসা করলেন অর্থনীতিবিদরা

করোনা মোকাবেলায় আগামী বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে : অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ১১ এপ্রিল ২০২১

করোনা মোকাবেলায় আগামী বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনা মোকাবেলা করে মানুষের জীবন বাঁচাতে আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন বাজেট হবে জনকল্যাণমুখী। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের সম্প্রসারণ ও মেয়াদ বাড়াতে অর্থনীতিবিদরা পরামর্শ দিয়েছেন। অর্থনীতিবিদরা করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের প্রশংসা করেছেন বলে জানান অর্থমন্ত্রী। রবিবার দেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট ভার্চুয়ালি সভা শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব বলেন। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, স্বাস্থ্যখাতের পাশাপাশি দেশের কৃষিখাত, গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে জোর দেয়া হবে। এছাড়া সম্পদকে যথাযথভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের সেবা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে। প্রাক-বাজেট আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) চেয়ারম্যান ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান, অর্থ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ তারেক, সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ. মনসুর, সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল মোকাদ্দেম আকাশ, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমদ এফসিএ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর আতিকুল ইসলাম প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা প্রণোদনা প্যাকেজের মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলেছে, এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা কি বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইনসেনটিভ প্যাকেজের মেয়াদ বাড়ানো হবে কি-না সে বিষয়ে অর্থনীতিবিদরাও কথা বলেছেন। প্রণোদনা প্যাকেজ যারা পেয়েছেন তারা কাভার্ড হয়নি, তাদের কাভার করতে বলা হয়েছে। তারা এখনো তাদের যে এলোকেশন গেছে সেটি বাড়াতে বলেছেন। এটাকে সম্প্রসারিত এবং মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে অবহিত করবো, তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন যে ক্রাইসিসটা আমাদের আছে, এটি কোনো একটি দেশের ক্রাইসিস নয়, সারাবিশ্বের ক্রাইসিস। এই ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস মোকাবিলা করার জন্য আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করবো। অর্থনীতিবিদরা কি পরামর্শ দিলেন জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা আমাদের টিম নিয়ে বসবো, বসে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। তাদের পরামর্শগুলো এখনো আমাদের কাছে পারমর্শ হিসাবেই আছে। সামনে কঠোর লকডাউনে হতদরিদের জন্য কোনো চিন্তা আছে কি-না জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের বাজেট হবে আরও পরে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে দেখেন। তার চিন্তা হলো দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা। এর জন্য যা প্রয়োজন তিনি তা অবশ্যই বিবেচনা করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, অর্থনীতিবিদরা ট্যাক্স-জিডিপির রেশিও বাড়াতে বলেছেন। আমাদের েেশ ট্যাক্স-জিডিপির রেশিও কম। আমরা প্রতিটি আইটেমে ট্যাক্স নিতে পারতাম, তাহলে আমাদের ট্যাক্সেও রেশিও অনেক ভালো থাকত। আমরা অনেক জায়গায় ট্যাক্স আদায় করি না। সরকারি মেগা প্রজেক্টসহ বিভিন্ন প্রকল্পেও ট্যাক্সেস আদায় করি না। তবে কাগজে কলমে এটা আসা উচিত। প্রতিটা আইটেমের ওপর ট্যাক্স আরোপ করলে ট্যাক্স-জিডিপি বাড়বে কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রজেক্টের কস্ট (ব্যয়) বেড়ে যাবে। আবার মানুষের ওপর তার চাপও পড়বে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। তার আগে বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনার অংশ হিসেবে দেশের স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের সব পরামর্শ আমরা রেকর্ড করেছি। এরপর যারা বাজেট প্রণয়ন করছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে অর্থনীতিবিদদের পরামর্শগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেন, গত বছরও করোনাভাইরাসের মধ্যে বাজেট প্রণয়ন করতে হয়েছে। এ বছরও একই অবস্থা। প্রধানমন্ত্রী সব সময় দেশের সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তার ওপর জোর দিয়ে আসছেন। তার নির্দেশে আমরা জনকল্যানমুখী বাজেট প্রণয়নে চেষ্টা করছি। অর্থমন্ত্রী বলেন, যেসব কাত সরাসরি জনগণের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত আগামী বাজেটে সেসব খাতের ওপর জোর দেওয়া হবে। বিশেষ করে গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মান, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ নজর থাকবে। যাতে জনগনের হাতে টাকা-পয়সা যেতে পারে। কারণ আমরা একটি ব্যতিক্রম সময়ে বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা তাদের আলোচনায় এসব বিষয় তুলে ধরেছেন। তারা জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নের ওপর বিশেষ নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আগামী বাজেটে এসব খাতে বরাদ্দ বাড়বে। অর্থমন্ত্রী জানান, অর্থনীতিবিদরা করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পর্কে প্রশংসা করেছেন। তবে এই প্যাকেজ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি যেসব খাত প্রণোদনা সুবিধা পায়নি সেগুলোকেও প্যাকেজের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
×