ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নওগাঁর সাপাহারে বিদেশী ফল রক মেলন চাষের উজ্জল সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ১৮:২৬, ১১ এপ্রিল ২০২১

নওগাঁর সাপাহারে বিদেশী ফল রক মেলন চাষের উজ্জল সম্ভাবনা

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ নওগাঁর ঠাঁঠা বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে খ্যাত সাপাহার উপজেলার গোয়ালা আটানীপাড়া মাঠে হোসনে মাহফুজ শিবলী নামে এক তরুণ উদ্যোক্তা সৌদি ও থাইল্যান্ডের বিখ্যাত ফল রক মেলন ‘সাম্মাম’ চাষ করে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। উপজেলায় প্রথমবারের মতো ফলটি পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পেয়েছেন তিনি। আগামী বছর তিনি বাণিজ্যিক ভাবে এই রক মেলন ফল চাষাবাদ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। হোসনে মাহফুজ শিবলী জানান,ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে তিনি অর্থনীতিতে অনার্স সমাপ্ত করেন। পড়াশোনা শেষে দীর্ঘ দিন ধরে রাজধানী শহরেই ব্যবসা বানিজ্য করছিলেন। ইতোমধ্যে সাপাহার উপজেলায় আমসহ বিভিন্ন ফল উৎপাদনে কৃষিতে নিরব বিপ্লব শুরু হয়। অল্প সময়ে দেশের মানুষের নিকট আমের বানিজ্যিক রাজধানী হিসেবে সাপাহার উপজেলা পরিচিতি লাভ করে। প্রতিযোগিতা মুলক ভাবে এখানে ফল বাগান তৈরীরও হিড়িক পড়ে যায়। এ সব দেখে তিনি নতুন কিছু করার পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে মা মাটির টানে শহর ছেড়ে নিজ এলাকায় ফিরে আসেন। উপজেলার গোয়ালা আটানীপাড়া মাঠে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বেশ কয়েক একর জমিতে ধান চাষ না করে তিনি উন্নত জাতের আম বাগান তৈরী করেন। সেই আম বাগানের মধ্যে ১ একর জমিতে পরীক্ষামুলক ভাবে তিনি সাথী ফসল হিসেবে বিদেশী ফল ও বিদেশী সব্জীর চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সখের বসে তিনি চীন থেকে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে হলুদ তরমুজ বীজ ও দেশের চুয়াডাঙ্গা,বগুড়া ও ঢাকা থেকে রক মেলন বা সাম্মাম ফলের চারা সংগ্রহ করেন এবং তার জমিতে রোপন করেন। বর্তমানে তার ওই ১ একর জমিতে থাইল্যান্ডের বিখ্যাত ফল রক মেলন (সৌদী আরবের সাম্মাম ফল) চাইনিজ হলুদ তরমুজ,সাদা ও কালো স্কোয়াস,লাল,সবুজ, হলুদ সহ বিভিন্ন রঙ্গের ক্যাপসিকাম চাষ করা হয়েছে। তবে বাগানে সব্জীর তুলনায় বিদেশী ফল রক মেলন(সাম্মাম) আশাব্যঞ্জক ভাবে উৎপাদিত হয়েছে। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে এই ফল ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে বিশেষ অবদান রাখে। স্বাদ ও গন্ধেও ফলটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা কমলার চেয়ে ২০ ভাগ বেশি। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি আছে এই ফলে। আরও আছে পটাশিয়াম, ফলিক এ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যালেনিয়াম বিদ্যমান। এ ফল মানব দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নতুন এই ফল চাষে খরচ অন্য ফলের মতই হয়। বর্তমান বাজারে তরমুজ বাঙ্গির চাইতে কয়েক গুন চাহিদা ও মুল্যে বেশী থাকায় আগামী দিনে এই বিদেশী ফল চাষে আশপাশের কৃষকদের মাঝে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি শিবলীর ওই রক মেলন (সাম্মাম) বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, রোপনকৃত আম গাছের চারার মাঝের সারিতে হালকা মাচার ওপর লতানো গাছে ধরে আছে এই খসখসে সাদা সাদা অজ¯্র রক মেলন ফল। প্রতিটি ফল ১ কেজি থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়েছে। ইতোমধ্যে তার বাগানে রক মেলন ফল পাকতে শুরু করেছে। রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি এই ফল বাজার জাত করবেন বলেও আশা করছেন। উপ-সহকারী উদ্ভীদ সংরক্ষন কর্মকর্তা আতাউর রহমান সেলিম বলেন বাঙ্গিজাতীয় এ বিদেশী ফলকে রক মেলন (সাম্মাম) বলা হয় । সৌদি আরব ও আশপাশের দেশগুলোতে এ ফলের চাষ হলেও আমাদের দেশের বরেন্দ্র এলাকার মাটি ও আবহাওয়া ফলটির চাষাবাদ অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে। তাই সাপাহার উপজেলার বরেন্দ্র মাটিতে এই ফল চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। তরুণ উদ্যোক্তা শিবলী তার অভিমত ব্যক্ত করে জানান, বিদেশী এই ফল ও সব্জী চাষে যদি সরকারী ভাবে তাকে সহযোগীতা দেয়া হয় তাহলে তিনি আগামীতে বানিজ্যিক ভাবে রক মেলন চাষবাদ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করতে পারবেন। তার মতে বরেন্দ্র ভূমির এই মাটিতে বিদেশী ফলটি খুব ভালোভাবে চাষাবাদ করা সম্ভব। এটি বছরে তিন বার চাষ করা যায়। দেশের সকল বাজারে ফলটির ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। তিনি আগামী মৌসুমের জন্য পর্যাপ্ত বীজ ও চারা উৎপাদন করবেন। কোন কৃষক বিদেশী এই ফল ও সব্জী চাষে আগ্রহী হলে তিনি তাকে সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করবেন বলেও জানিয়েছেন।
×