ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকল্পের মোট অগ্রগতি সাড়ে ৬৬ শতাংশ

এগিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণযজ্ঞ

প্রকাশিত: ২৩:০২, ১১ এপ্রিল ২০২১

এগিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণযজ্ঞ

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। কাজের উদ্বোধন হওয়ার পর একদিনের জন্যও থেমে থাকেনি নির্মাণ কাজের মহাযজ্ঞ। শনিবার পর্যন্ত পুরো টানেলে কাজের অগ্রগতি সাড়ে ৬৬ শতাংশ বলে নিশ্চিত করেছেন প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশীদ চৌধুরী। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেলই হচ্ছে প্রথম। চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর পাড়ের সঙ্গে দক্ষিণ পাড় তথা আনোয়ারাকে টানেলের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে এ টানেল চালু হলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী ও বাণিজ্যিক সিটি চট্টগ্রাম হবে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন।’ বিশ^ময় করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। কিন্তু এরপরও এ টানেলের নির্মাণ কাজ যথানিয়মে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সরকার ইতোমধ্যে কঠোর যে লকডাউন ঘোষণা করেছে তাতে শ্রমিকদের কাজে আসা যাওয়া নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতরা। এ প্রকল্পে দেশী বিদেশী আট শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী ও শ্রমিক নিয়োজিত থেকে অবিরাম কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রথম টিউবে সফল নির্মাণ কাজ শেষে এখন দ্বিতীয় টিউবের অগ্রগতি ৯২০ মিটার দীর্ঘ, যা ২ হাজার ৪৫০ মিটারের মধ্যে। প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন, মাঝপথের কিছু আগে এখন ৩০ মিটার গভীরতায় কাজ এগোচ্ছে। স্থানীয় শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত কাজে জড়িত থেকে পুরো প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা পয়েন্ট থেকে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে আনোয়ারা পয়েন্ট পর্যন্ত এ টানেলের নির্মাণ কাজ হবে। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার নির্মাণ ব্যয় ধরে আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসকে টার্গেটে রাখা হয়েছে কাজ সম্পন্নের জন্যে। করোনার প্রথম সংক্রমণের সময় চীনা প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের অনেকে নিজ দেশে গিয়ে ফিরতে না পারার কারণে কাজের যে শ্লথগতি ছিল তা পরবর্তীতে পুরোদমে কেটে যায়। বর্তমানে আনোয়ারা পয়েন্ট থেকে দ্বিতীয় টিউবের রিং প্রতিস্থাপনের কাজ এখন পুরোদমে চলছে। এর আগে গেল বছরের ডিসেম্বর মাসে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে প্রথম টিউবের কাজ সম্পন্ন হয়। দ্বিতীয় টিউবের কাজ শুরু করতে চারমাস সময় লেগে যায়। বর্তমানে দ্বিতীয় টিউবের কাজ এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও ১৮ মিটার আবার কোথাও ৪০ মিটার নদীর নিচ দিয়ে টানেল বোরিং কাজ চলছে। বর্তমান সরকারের এটি একটি মেগা প্রকল্প। এ প্রকল্প সম্পন্ন হলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও মহানগরীর কানেক্টিভিটিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। চারলেন বিশিষ্ট দুই টিউব সম্বলিত ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ টানেল। পরিকল্পনা অনুযায়ী এ টানেলের দুপয়েন্টের শেষ প্রান্তে দুই পাশের সড়কসহ মোট দৈর্ঘ্য হবে ৯ দশমিক ৩৯ মিটার দীর্ঘ। মোট প্রকল্প ব্যয়ে চীনের এক্সিম ব্যাংক ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত অর্থের অবশিষ্ট অংশ প্রদান করছে বাংলাদেশ সরকার। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা টানেলের প্রথম টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। টানেল নির্মাণে সকল সেগমেন্ট তৈরি হচ্ছে চীনের জিয়াংসু প্রদেশের জিং জিয়াং শহরে।
×