ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিয়ানমারে জান্তার নির্বিচার গুলিতে ৮২ জন নিহত

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ১১ এপ্রিল ২০২১

মিয়ানমারে জান্তার নির্বিচার গুলিতে ৮২ জন নিহত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মিয়ানমারে চলমান জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত ৬শ’ ছাড়িয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত জান্তা বাহিনীর চালানো রাতভর অভিযানে অন্তত ৮২ গণতন্ত্রপন্থীকে কাছ থেকে গুলি করে হত্যার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে জান্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা মিয়ানমারের জাতিগত সংখ্যালঘুদের একটি সশস্ত্র দল শনিবার একটি থানায় হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ১৬ পুলিশকে হত্যা করেছে। মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনে সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে একটি জাতিগত সশস্ত্র বাহিনী অবস্থান নিয়েছে। মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলে এদের তৎপরতা বাড়ছে। শনিবার স্থানীয় সময় সকালে শান রাজ্যের নউংমনে ওই হামলা চালানো হয়। জান্তাবিরোধী এ বাহিনীতে আরাকান আর্মি, তাআন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি ও মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক এ্যালায়েন্স আর্মিও যোগ দিয়েছে। খবর আলজাজিরা ও বিবিসি অনলাইনের। তবে থানায় হামলা নিয়ে দেশটির জান্তা সরকারের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। মিয়ানমারের এ্যাসিস্ট্যান্স এ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের হিসাবে, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন এখন পর্যন্ত ৬শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এদিকে মিয়ানমারে ১৯ বেসামরিক বিক্ষোভকারীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে দেশটির জান্তা সরকারের আদালত। এক সামরিক কর্মকর্তার সহযোগীকে হত্যার অভিযোগে শুক্রবার তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। দেশটির সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন মিওয়াদ্দি টেলিভিশনে শুক্রবার জানানো হয়, সামরিক আদালতের মাধ্যমে দেশটির ১৯ বেসামরিক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে জান্তা সরকার। তাদের বিরুদ্ধে গত মাসে ইয়াঙ্গুনের উত্তর ওক্কালাপা জেলায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেনকে মারধর এবং নির্যাতন করে তার এক সহযোগীকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। এরপর ওই জেলায় সামরিক আইন জারি করা হয়। ফলে সেখানে সামরিক আদালত পরিচালনায় কোন বাধা ছিল না। আর শুক্রবার ১৯ বেসামরিক বিক্ষোভকারীকে সেই আদালতের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিদের মধ্যে বর্তমানে ১৭ জনই পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীও রয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়ার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শুক্রবার মিয়ানমারের বাগো শহরে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করেছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। রাজপথে বিক্ষোভকারীদের ব্যারিকেডও সরিয়ে দিয়েছে তারা। আন্দোলনের সময় সেসব ব্যারিকেড বিক্ষোভকারীরা রাস্তার ওপর রেখেছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জান্তাবাহিনী সাধারণ মানুষকে দমাতে প্রচলিত অস্ত্রের পাশাপাশি মেশিনগান, গ্রেনেড এবং মর্টার শেল ব্যবহার করেছে। রেডিও ফ্রি এশিয়া জানায়, শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত স্থানীয়রা মাত্র তিনটি মরদেহ উদ্ধার করতে পেরেছেন। বাকিগুলো সেনা সদস্যরা স্থানীয় একটি প্যাগোডা এবং স্কুলে নিয়ে ফেলে রাখে। মিয়ানমারে অরাজকতায় সীমান্ত থেকে শত শত মানুষ ভারত ও থাইল্যান্ডে পালিয়ে গিয়ে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্য একজন মাখাই। তিনি তৃতীয়বারের প্রচেষ্টায় ভারতে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছেন। একটি ময়লার ট্রাকে চড়ে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেন তিনি। এর আগে দুইবার ভারতের সীমান্ত বাহিনী তাঁকে আটকে দিলেও এবার কোন বাধার সম্মুখীন হননি মিয়ানমারের এ নাগরিক। এ মাসের শুরুতে সীমান্তবর্তী জেলা তামু থেকে বোন ও মেয়ে নিয়ে ভারতে পালান ৪২ বছর বয়সী মাখাই। তাঁরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতীয় রাজ্য মণিপুরে প্রবেশ করেন। প্রাণ বাঁচাতে এটিই একমাত্র উপায় ছিল বলে মনে করেন মাখাই। তিনি বলেন, সেনাসদস্যরা ঘরের দরজা ভেঙ্গে ঢুকে নারীদের ধর্ষণ করছে এবং সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে। আরও দুই নারী একইভাবে দেশ ছাড়েন। পরিস্থিতি ভাল হলে ঘরে ফিরে যেতে পারবেন বলে তাঁরা মনে করছেন। তাদের স্বামী এবং পরিবারের অন্যান্য পুরুষ এখনও মিয়ানমারেই আছেন। গত বছরের নবেম্বরের নির্বাচনে দেশটির নোবেল জয়ী নেতা আউং সান সুচির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি এনএলডি ক্ষমতায় আসে। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ১ ফেব্রুয়ারি দেশটির সেনাবাহিনী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে জরুরী অবস্থা জারি করে।
×