ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শপিংমল মার্কেট দোকান আজ খুলছে

প্রকাশিত: ২২:১৬, ৯ এপ্রিল ২০২১

শপিংমল মার্কেট দোকান আজ খুলছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ শুক্রবার থেকে সীমিত আকারে শপিংমল, মার্কেট দোকানপাট ও বিপণিবিতান খুলবে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আট ঘণ্টা দোকানপাট ও বিপণিবিতান খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এদিকে লকডাউনের চতুর্থদিনে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে গণপরিবহন ও যাত্রী দুটোই ছিল কম। গণপরিবহনে সরকারী নির্দেশ অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মানার আগ্রহ কম দেখা গেছে। আগের মতো প্রাইভেটকার, অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও রিক্সা চলাচল করেছে। কোন কোন ট্রাফিক সিগন্যালে সামান্য যানজট দেখা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু সড়কে মালবাহী ট্রাক ও প্রাইভেট গাড়ির জট দেখা গেছে। বিভিন্ন রাস্তার মুখে তরুণদের আড্ডা দেখা গেছে। রাজধানীর বাইরে সড়ক-মহাসড়কে আন্তঃনগর যাত্রীবাহী বাস চলাচল করেনি। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ৯ থেকে ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংমল ও দোকানপাট খোলা যাবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন না করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই দিনে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, আগামী রবিবার নাগাদ নতুন করে নির্দেশনা জারি করা হতে পারে। নিশ্চই আমাদের ভিন্ন কিছু পরিকল্পনা আছে। প্রধানমন্ত্রী সব বিষয়ে নতুন করে নির্দেশনার কথা ভাবছেন। করোনা সংক্রমণ রোধে গত ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সার্বিক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই সময়ে জরুরী প্রয়োজনে সীমিত পরিসরে অফিস, গণপরিবহনসহ সব ধরনের যান চলাচল, দোকানপাট-শপিংমল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়। তবে নিত্যপণ্যের দোকান ও জরুরী সেবার যানবাহন চলাচলের সিদ্ধান্ত রাখা হয়। অফিস খোলা রেখে গণপরিবহন বন্ধে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির পর ৭ এপ্রিল থেকে গণপরিবহন চালু করা হয়। এবার দোকানপাট ও শপিংমলও চালু করা হলো। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও কেন দোকানপাট খুলে দেয়া হলো- এমন প্রশ্নে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, কয়দিন ধরে দোকান খুলে দিতে মালিক কর্মচারীরা রাস্তায় বিক্ষোভ করছিলেন। তাদের এই বিক্ষোভ তাদেরই নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। একটি অসাধু চক্র সেই বিক্ষোভের ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছিল বলে আমরা দেখেছি। এমন পরিস্থিতিতে আসলে দোকান, শপিং মল খুলে না দিয়ে উপায় ছিল না। তবে অন্যান্য বিধিনিষেধ আগের মতোই থাকবে। আর দোকান বা শপিংমলে প্রত্যেক ক্রেতা-বিক্রেতার স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেসব কেউ মানছেন কিনা সেটাও মনিটরিং করা হবে। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর নিউমার্কেট, মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, তেজগাঁও, মগবাজার, বাংলা মোটর, খিলগাঁও, চিটাগাং রোড ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় বাস চলাচল ছিল কম। শুধুমাত্র আসনের ক্ষেত্রে নির্দেশনা মানা হলেও অন্য কোন নির্দেশনা মানার তেমন কোন আগ্রহ দেখা যায়নি। পরিবহন চালকরা বলছেন, মানুষ একান্ত বাধ্য না হলে গণপরিবহনে উঠছে না। করোনার কারণে তারা গণপরিবহন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে। এ কারণে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। সকালে অফিস টাইমে প্রতিটি পরিবহনেই পর্যাপ্ত সংখ্যক যাত্রী থাকলেও দুপুরের দিকে কমে যাচ্ছে। বিকেলে আবার দেখা মিলছে যাত্রীদের। দুপুরে অর্ধেক আসান ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহনের পরও এর অর্ধেক ফাঁকা থাকতে দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর মগবাজার ওয়ারলেস মোড়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম রোড থেকে কালারপাড়া রুটে চলাচলরত মনজিল এক্সপ্রেসে ৭-৮ যাত্রী রয়েছেন। এ সময় বাস থেকে নেমে ডাকাডাকি করে যাত্রী ওঠানোর চেষ্টা করেন হেলপার সমির উদ্দিন। তিনি জানান, চট্টগ্রাম রোড থেকে বাস ছেড়ে এসেছি। এখন পর্যন্ত অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখেও বাস পূর্ণ করতে পারিনি। যাত্রী নেই বললেই চলে। অপরদিকে মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, ফার্মগেট, কাওরানবাজার যাত্রীর তুলনায় গণপরিবহন বেশি। বর্ধিত ভাড়া ও অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলছে বাস। অল্প কিছু গুপরিবহনে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকলেও বেশিরভাগ পরিবহনে ছিল না। লকডাউনের অন্যদিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার সড়কে কম দেখা গেছে রিক্সা, অটোরিক্সা, রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল। একাধিক কোম্পানির বাস চালক ও বাস সহকারীরা জানান, লকডাউনে বন্ধ থাকার পরে বৃহস্পতিবার যেসব পরিবহন সড়কে চলাচল করেছে তাদের খরচের টাকা উঠেছে কোনমতে। গণপরিবহনের কিছু মালিক টাকা পেয়েছেন, আর কিছু মালিক একেবারেই কোন টাকা পাননি। সেফটি এন্টারপ্রাইজের চালক মফিজউদ্দিন জানান, যাত্রীর চাপ অনেক কম। বুধবারও যাত্রী কম ছিল। আজও (বৃহস্পতিবার) সড়কে তেমন যাত্রী নেই। বুধবার সারাদিন চালিয়ে পরিবহনের তেল খরচ ও অন্যান্য খরচ দিয়ে কোনমতে আমার (চালক) আর সহকারীর বেতন উঠেছে। আমরা মালিককে কোন টাকাই দিতে পারিনি। বিহঙ্গ পরিবহনের কন্ডাকটর সিদ্দিকুর রহমান জানান, বুধবারের মতো আজ বৃহস্পতিবারও সড়কে যাত্রীর চাপ কম। সকাল থেকে তিনবার যাওয়া-আসায় মাত্র ১৭ থেকে ২০ যাত্রী পেয়েছি। চালক আর আমার বেতনের টাকাই উঠছে না। পরিবহনের খরচ দিয়ে আজকে মালিককে কত টাকা দিতে পারব তা বলতে পারছি না। তবে মনে হয় না আজকে মালিককে টাকা দিতে পারব। বাসের কয়েক যাত্রী জানান, বর্ধিত ভাড়া ও অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলছে গণপরিবহন। যাত্রীর সবাই মাস্ক পরেই পরিবহনে যাতায়াত করছেন। খিলগাঁও রেলগেট এলাকায় মিডওয়ে পরিবহনের চালক নাজিম উদ্দিন জানান, সকালে অফিস শুরুর আগে ও বিকেলে অফিস শেষ হওয়ার কিছু সময় পর যাত্রী পাওয়া যায়। আর পুরো সময় অর্ধেকের মতো যাত্রী নিয়ে চলতে হয়। মানুষ রিক্সা, সিএনজি অটোরিক্সা ও মোটরসাইকেল বেশি ব্যবহার করছে। যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে তারা তা ব্যবহার করছে। আর অধিকাংশ সরকারী অফিসের স্টাফ বাস রয়েছে। যে কারণে আমরা যাত্রী তেমন একটা পাচ্ছি না। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ফকিরাপুল, কাকরাইল, মৎস্যভবন, মগবাজার মোড়, বাংলামোটর, কাওরানবাজার, সার্ক ফোয়ারা, পান্থপথ, শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকার ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে তেমন একটা যানজট দেখা যায়নি। যাত্রীর অভাবে অধিকাংশ মোড়ে রিক্সা, সিএনজি অটোরিক্সা ও মোটরসাইকেল চালকদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এদিকে ঢাকার শনির আখড়া, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ীগামী একাধিক গণপরিবহনে বাস ভর্তি করে যাত্রী নিতে দেখা গেছে। যাত্রীরা বলছেন, শর্ত অনুযায়ী ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়ায় অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যানবাহন চলাচল করার কথা। বর্ধিত ভাড়া আদায় করা হলেও পরিবহনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখা হচ্ছে না। এ বিষয়ে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গত এক বছরে আমাদের একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমরা এক বছরে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পারিনি। স্টার্টিং পয়েন্টে বাস স্যানিটাইজ করা বা পরিবহন-শ্রমিকদের মাস্ক পরানো এটা আমরা আসলে নিশ্চিত করতে পারিনি। আবার যখন লকডাউন হয় তখন এটা নিয়ে ভাবার বিষয় ছিল। তিনি জানান, যারা ভাড়া নেয় বা হেলপার তাদের পক্ষে ভাড়া নেয়া, যাত্রীদের হাত স্যানিটাইজ করা- এত কিছু আসলে সম্ভব না। এসব দায়িত্ব যদি তৃতীয় কোন পক্ষকে দেয়া হয়, তাহলে তারা এটা ভালভাবে করতে পারে। বিনিময়ে তারা যাত্রীদের দেয়া অতিরিক্ত ভাড়া থেকে তাদের প্রাপ্যটা নিতে পারে। এক্ষেত্রে বাস মালিকরা তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে কাজটা করাতে পারে।
×