ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

লোকসমাগম এড়িয়েই এবার হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা

প্রকাশিত: ২১:৫২, ৯ এপ্রিল ২০২১

লোকসমাগম এড়িয়েই এবার হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একেবারে ফিকে হচ্ছে না বৈশাখের রং। করোনাকালে লোকসমাগম এড়িয়েই বর্ণিল মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। ভার্চুয়ালি নয় বরং প্রতীকী আয়োজন নিয়ে বাঙালীর উদ্যাপনের সঙ্গে থাকবেন শিল্পীরা। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১০০ জনের অংশগ্রহণে বের করা হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। সেভাবেই চলছে প্রস্তুতি। এর আগে বুধবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পহেলা বৈশাখে লোক সমাগম এড়িয়ে সম্ভব হলে ভার্চুয়ালি উৎসব অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুরোধ করা হয়। তবে সবকিছু মোটামুটি চলমান থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতীকী উৎসব আয়োজনের পক্ষে অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন আয়োজকরা। তাদের মতে, করোনার আঘাত ঘোরতর হয়ে ওঠছে। পাশাপাশি বাঙালীর সব অর্জন গিলে খেতে চাইছে ধর্মীয় মৌলবাদীরা। দুটোকেই গভীর অন্ধকার ও অপশক্তি হিসেবে দেখছেন তারা। আশা করছেন অচিরেই দূর হবে করোনা। মৌলবাদী অপশক্তিও টিকতে পারবে না বেশিদিন। শুভ সুন্দরের এমন প্রত্যাশার কথা জানাতেই আয়োজন করা হবে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা। চারুকলা অনুষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যথারীতি পহেলা বৈশাখ সকাল ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হবে। এবার শোভাযাত্রার আকার আগের মতো অত বড় না হলেও, উৎসবের চেহারাটি অবিকল থাকবে। সীমিত পরিসরেই হবে আকর্ষণীয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। করোনা সংক্রমণ বাড়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর বিশেষ জোর দেয়া হবে। সবাই সশরীরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন না। ১০০ সৌভাগ্যবান এতে অংশ নেবেন। বড় কোন স্ট্রাকচারাল ফর্ম এবার রাখা হবে না। চাকাজুড়ে দেয়া বিশাল ঘোড়া পাখি ইত্যাদি নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করার সুযোগ নেই। তবে একটি বড় চর্কার মতো শিল্পকর্ম রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর বাইরে অংশগ্রহণকারীরা প্রত্যেকে নিজেদের হাতে একটি করে শিল্পকর্ম বহন করবেন। সে হিসেবে ১০০টি উপস্থাপনা থাকবে শোভাযাত্রায়। বৈশাখী আয়োজনের অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ মুখোশ। এবার ফেইস শিল্ডকেই মুখোশের মতো করে গড়ে নেয়া হবে। ব্যতিক্রমী এই মুখোশ পরবেন অংশগ্রহণকারীরা। সব মিলিয়ে সীমিত পরিসর হলেও, বিষয়টিকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা হবে। আয়োজকরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকেই শোভাযাত্রা বের করার প্রাথমিক পরিকল্পনা হয়েছে। পরস্পরের মধ্যে অন্তত দশ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা হবে। এজন্য ক্যাম্পাসের অন্য কোন প্রশস্ত সড়কেও এটি আয়োজন করা হতে পারে। তবে এর যাত্রাপথ এখনও ঠিক হয়নি। জানা যায়, এরই মাঝে নিউ নরমাল সময়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে দিয়েছে চরুকলা অনুষদ। প্রতিবছর প্রস্তুতি শুরুর প্রাক্কালে মঙ্গল শোভাযাত্রার একটি প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়। সমকালকে পর্যবেক্ষণে নিয়ে তার আলোকে জাতির উদ্দেশে একটি বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেন আয়োজকরা। সে অনুযায়ী এবারের প্রতিপাদ্য নির্বাচন ও পোস্টার ডিজাইন করা হয়েছে। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ‘কাল ভয়ঙ্করের বেশে এবার ঐ আসে সুন্দর।’ কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত রচনা থেকে এ অংশটুকু গ্রহণ করা হয়েছে। পোস্টার ডিজাইন করেছেন আনিসুজ্জামান সোহেল। এমন দমবন্ধ সময়ে এত চমৎকার একটি পোস্টার দেখে যে কারও মন ভাল হয়ে যাবে। এতে দেখা যায়, গভীর অন্ধকার ভেদ করে ওড়ে আসছে ভীষণ রঙিন দুটি পাখি। এক ঝলক আলো হয়ে উৎসব আনন্দ আর ভরপুর প্রাণ হয়ে আসছে। বার্তা দিচ্ছে, জয় হবে শুভ সুন্দরের। জীবনের জয় হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের পুরোভাগে রয়েছেন চারুকলা অনুষদের ডিন ও শিল্পী নিসার হোসেন। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা দুটি বড় দুর্যোগের মুখোমুখি। একটি নিঃসন্দেহে করোনা। সংক্রমণব্যাধি সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। গতবছরের মার্চে এই দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছিলাম আমরা। আজও মুক্তি মেলেনি। বর্তমানে সংক্রমণ আরও উর্ধমুখী। এ অবস্থায় আমরা মনে করি, মনোবল ধরে রাখতে হবে। হতাশা কাটিয়ে জীবনের জয়গান করতে হবে আমাদের। মনে রাখতে হবে, যখনই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসে তখন নতুন কিছু উপলব্ধিরও, আবিষ্কারের সুযোগ সৃষ্টি হয়। করোনাকালে প্রকৃতি নিয়ে নতুন করে ভাবছি আমরা। মানুষে মানুষে যে সম্পর্ক, সে সম্পর্ক নিয়ে নতুন রিয়ালাইজেশন হচ্ছে। এভাবেই উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে এ কথাটিই বলার চেষ্টা করা হবে। একই সময়ে আমরা দেখেছি মৌলবাদের উত্থান। এ ধরনের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সবসময় স্বোচ্চার ছিলেন শিল্পীরা। মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে এই অপশক্তিকে যে কোন মূল্যে দমন করার কথা বলব আমরা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার নতুন শপথ নেব। দুই অশুভ অন্ধকারকে অচিরেই পরাভূত করে শুভ সুন্দরের প্রত্যাশায় মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি। নিসার হোসেন বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রায় সাধারণ মানুষ সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। অপরাগ হয়েই এমন সিদ্ধান্ত। তবে বাসায় বসে থেকেও পহেলা বৈশাখের চেতনার সঙ্গে বাঙালী ঠিক একাত্ম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
×