ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফ্লোর প্রাইস ওঠানোর সিদ্ধান্তে শেয়ারবাজারে দরপতন

প্রকাশিত: ২০:৫০, ৯ এপ্রিল ২০২১

ফ্লোর প্রাইস ওঠানোর সিদ্ধান্তে শেয়ারবাজারে দরপতন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত বছর মার্চ মাসে করোনার কারণে ফ্লোর প্রাইস বা দর কমার সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে। যার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে একই দরে আটকে ছিল পুঁজিবাজারের শতাধিক কোম্পানি। তবে বিনিয়োগকারীদের বড় ধরনের লোকসান ঘটেনি। শতাধিক কোম্পানির শেয়ারদর মাঝে মাঝে কিছুটা বাড়লেও কমে আবারও আটকে থাকত ফ্লোর প্রাইসে। এর ফলে নির্ধারিত দরের নিচে লেনদেন হওয়ার সুযোগ ছিল না কোম্পানিগুলোর। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়া। কিন্তু শেয়ারবাজারের স্বার্থে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থেকেছে। কিন্তু এবার সেটি থেকে বেরিয়ে এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। প্রাথমিকভাবে কমিশন ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস ওঠানোর নির্দেশ দেয়ার পরদিনই শেয়ারবাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপে সার্বিক সূচকে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে আশঙ্কাজনকভাবে শেয়ারের দর কমেছে। বুধবার উঠিয়ে দেয়া হয়েছে এমন ৬৬ কোম্পানির সর্বনিম্ন দর, যার সিংহভাগের শেয়ারদর কমেছে বৃহস্পতিবার। পুঁজিবাজারে তিন দিন ধরে টানা উত্থানের পর এমন পতনকে মূল্য সংশোধন হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফ্লোর প্রাইস ওঠানো কোম্পানির মধ্যে শুধুমাত্র নাভানা সিএনজির দর বেড়েছে। দরপতন নিয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত তৈরি করে ফ্লোর প্রাইস। যে কোম্পানি লেনদেন হওয়ার কথা, সেটি লেনদেন হচ্ছে না। আর হলেও সেই কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ছে না। এসব কোম্পানির শেয়ার যেসব বিনিয়োগকারীর কাছে আছে তারা পারছেন না শেয়ার বিক্রি করতে। কারণ যে দরে ফ্লোর প্রাইস ধরা হয়েছে সে দরে কেউ কিনতে চান না।’ তিনি বলেন, ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়ায় সে কোম্পানিগুলোর এখন হয় শেয়ারের দর বাড়বে না হয় কমবে। বিনিয়োগকারীরা স্বাধীনভাবে তাদের শেয়ার লেনদেন করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, লকডাউনের মধ্যে টানা তিন দিন সূচকের উত্থান হয়েছে। এক-দুই দিন কমবে। এটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগকারীরা বলেন, এতদিন ফ্লোর প্রাইসের কারণে আটকে থাকায় বিনিয়োগটি নিরাপদ থাকলেও করোনার মধ্যে হুট করে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়া আত্মঘাতী। মাত্র একদিনেই পোর্টফলিও প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি কমেছে। বেশিরভাগ শেয়ারেরই ক্রেতাশূন্য অবস্থায় লেনদেন হয়েছে। কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ॥ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বৃহস্পতিবার লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর কমেছে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি দর বাড়তে থাকা বিমা খাতের শেয়ারের দর কমেছে। লেনদেন হওয়া ৩৪৬টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৪৭টির, কমেছে ২৬৪টির। দর পাল্টায়নি ৩৫টির। বৃহস্পতিবার লেনদেন হওয়া ব্যাংক খাতের ৩১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র পাঁচটির। দর কমেছে ২৩টির। এছাড়া দর পাল্টায়নি দুইটির। ফ্লোর প্রাইসে আছে একটি কোম্পানির শেয়ারদর। নন ব্যাংক আর্থিক খাতে তালিকাভুক্ত ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে একটির। দর কমেছে ১৪টির। দর পাল্টায়নি চারটির। বীমা খাতের ৫০টি কোম্পানির মধ্যে বৃহস্পতিবার দর বেড়েছে ৩১টির, কমেছে ১৪টির। দর পাল্টায়নি পাঁচটির। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮২.৫৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৫৪ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস সূচক ১৬.৫০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৯৭ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ২০.৭৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৯০ পয়েন্টে। আগের দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছিল ৫৫.৯৫ পয়েন্ট। সরকার ঘোষিত সাত দিনের লকডাউনে ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে পুঁজিবাজারের লেনদেন পরিচালিত হচ্ছে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। চলতি সপ্তাহের সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার দুই ঘণ্টা করে লেনদেন হচ্ছে পুঁজিবাজারে। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবারও দুই ঘণ্টা লেনদেন হয়েছে।
×