ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নির্মাণের পর থেকেই পরিত্যক্ত

সোলার চার্জিং স্টেশন কাজে আসছে না!

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ৯ এপ্রিল ২০২১

সোলার চার্জিং স্টেশন কাজে আসছে না!

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর বাগমারায় অটোভ্যান, ইজিবাইক চার্জের জন্য ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি ‘সোলার চার্জিং স্টেশন’ কোন কাজে আসছে না। স্টেশনটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এলাকার অটোভ্যান ও ইজিবাইক চালকরা এ স্টেশন নিয়ে আশার আলো দেখলেও এখন তারা হতাশ। স্টেশনটির কার্যক্রম শুরু না হওয়াতে চালকদের ভোগান্তির পাশাপাশি বিদ্যুতের ওপর চাপ বাড়ছে। পল্লীবিদ্যুত কর্তৃপক্ষের দাবি নির্দেশনা না থাকায় চালু করা যাচ্ছে না। নাটোর পল্লীবিদ্যুত সমিতি-১ এর বাগমারা আঞ্চলিক দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে মাড়িয়া ইউনিয়নের সাঁকোয়া এলাকায় শিকদারীতে ‘সোলার চার্জিং স্টেশন’ স্থাপন করা হয়। স্থানীয় এমপি এনামুল হকের জমিতে স্টেশনটি স্থাপন করা হয়। এর আগে বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত ২০১৭ সালে হাটগাঙ্গোপাড়ায় এক জনসভায় বাগমারায় একটি ‘সোলার সার্জিং স্টেশন’ স্থাপনের ঘোষণা দেন। এরপর জায়গা নির্বাচন করে সেখানে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। সেখানে ৬০ লাখ টাকার অধিক ব্যয়ে স্টেশনটি নির্মাণ করে। সরকারী নিয়মানুসারে প্রতি ঘণ্টায় অটোভ্যানে চার্জে ৪০ ও ইজিবাইকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে একটি অংশ পল্লীবিদ্যুত কর্তৃপক্ষ ও আরেক অংশ জমির মালিক পাবেন। সে শর্তে স্টেশনটি স্থাপন করা হয়। ওই বছরেই সোলার প্যানেল বসানো ছাড়াও যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা হয়। উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুতও করা হয় স্টেশনটি। তবে দুই বছর ধরে সেটি চালু বা উদ্বোধন করা হয়নি। পরিত্যক্ত, অরক্ষিত ও অযত্নে পড়ে রয়েছে সোলার চার্জিং স্টেশন। জমির মালিকপক্ষের দাবি এক পয়সাও পাওয়া যায়নি সেখান থেকে। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে সোলার চার্জিং স্টেশনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকতে দেখা যায়। ইটের প্রাচীরের ভেতরে প্যানেল বসানো হয়েছে। তবে চারপাশে প্রাচীর থাকলেও সেটি অরক্ষিত। সহজে সেখানে ঢোকা ও বাহির হওয়া যায়। প্যানেলে ধুলো-বালির স্তূপ জমে রয়েছে। ভেতরে আগাছায় ভরে গেছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষটি নির্মাণের পর থেকে তালাবদ্ধ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, স্টেশনটি কোন কাজে আসেনি। পল্লীবিদ্যুত কর্তৃপক্ষ স্টেশনটি নির্মাণের মাধ্যমে নিজেদের কাজ শেষ করেছে। এরপর থেকে সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় অটোভ্যান ও ইজিবাইক চালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্টেশনটি স্থাপন হওয়াতে তারা আশার আলো দেখছিলেন। তবে সেটি চালু না হওয়াতে ভোগান্তি ও অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে। স্থানীয় ভ্যানচালক আব্দুল জব্বার (৪৫), কামাল হোসেন (৩৭) ও বেলাল হোসেন (৪৬) বলেন, ভ্যানে চার্জ দিতে সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় লোডশেডিংয়ের কারণে চার্জ দেয়া সম্ভব হয় না। নিজস্ব বৈদ্যুতিক মিটার না থাকায় অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। এতে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তারা বলেন, সোলার চার্জার স্টেশনটি চালু না হওয়াতে পল্লীবিদ্যুতের ক্ষতি হচ্ছে বেশি। উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার অটোভ্যান ও ইজিবাইক রয়েছে। এগুলো আবাসিক গ্রাহকেরা বাড়িতে চার্জ দিচ্ছেন। এতে বিদ্যুতের অপচয় ও চাপ বাড়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এসব গাড়ির চার্জ দিতে প্রতি মাসে ১২৫ হাজার ইউনিট বিদ্যুত খরচ হচ্ছে বলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বাণিজ্যিক হিসাবে বিল নেয়ার নিয়ম থাকলেও সম্ভব হয় না। নাটোর পল্লীবিদ্যুত সমিতি-১ এর বাগমারার আঞ্চলিক দফতরের মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মিনারুল ইসলাম স্টেশনটি পরিত্যক্ত ও অরক্ষিত অবস্থায় থাকার কথা স্বীকার করে বলেছেন, এটি চালুর কোন নির্দেশনা না থাকায় উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি। স্টেশনটি এখন কোন কাজেই আসছে না। এটি দেখভাল করার জন্যও কোন জনবল নিয়োগ নেই বলে জানিয়েছেন।
×