ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তোমার উত্তাপে হৃদয় কাঁপে

প্রকাশিত: ২০:১৩, ৯ এপ্রিল ২০২১

তোমার উত্তাপে হৃদয় কাঁপে

সাহিত্যাঙ্গনে জাহাঙ্গীর আলম হৃদয় দীর্ঘদিন সক্রিয় আছেন। তার লেখার বিষয় বহুবিধ-যেমন : নাটক, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা। সম্প্রতি তার ‘তোমার উত্তাপে হৃদয় কাঁপে’ কাব্যগ্রন্থটি পড়েছি। বইটি দ্বিভাষিক-এতে বাংলার পাশাপাশি কবিতাগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ বইটি পাঠের পর মনে হয়েছে, কবি স্বদেশ ও সমাজ ভাবনায় মশগুল। জীবনের সুখ-দুঃখগুলো তিনি কবিতার পরতে পরতে ছড়িয়ে দিয়েছেন। জাহাঙ্গীর আলম হৃদয় কবিতায় তার জীবনেরই আশা-আকাক্সক্ষাকে প্রতিভাত করেন। বইয়ের ভূমিকায় নিজের কবিতা সম্পর্কে লিখেছেন-‘কবিতায় জীবনের সুখ-দুঃখ, প্রতিবাদ, প্রেম, মৃত্যু-চিন্তা, স্বদেশ ভাবনা, স্মৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’ এ জীবন মূলত তার চোখে দেখা জীবন ও উপলব্ধি। সেকারণে প্রবাসের বেদনা ও অভিঘাত এ গ্রন্থের কবিতায় বিশেষ স্থান দখল করে আছে। একই অভিঘাত থেকে তৈরি হয়েছে স্মৃতিকাতরতা। আলোচ্য বইয়ের এ ধরনের কবিতাগুলো হলো : ‘নিঃস্ব’, ‘সুদিন’, ‘নীল দেহ’, ‘পৃথিবী বদলে গেছে’, ‘বড় হচ্ছি’, ‘মায়ের ছবি’ ‘ভালো থাকি’, ‘আমাদের সময়’, ‘বাংলাদেশ’ ও ‘শহর’। কবিতাগুলো থেকে ‘শহর’ কবিতার অংশবিশেষ তুলে ধরছি, তাহলে কবির মন-বেদনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। কবির ভাষ্য : ‘এই শহরকে কেমন পর পর মনে হয়/মনে হয় এখানে কেমন উদ্বাস্তু আমি/মনে হয় জাহাজডুবিতে আমি নিঃস্ব/অর্থ-স্বজন শূন্য আমার জীবন।...পরগাছার মতো বেঁচে আছি/বেঁচে থাকতে হবে সারাটি জীবন/ কোনো স্বজন নেই, স্বপ্ন নেই/মৃত্যুর কাছে আমি স্বপ্ন বেচে দিই।’ ‘তোমার উত্তাপে হৃদয় কাঁপে’ গ্রন্থে খুব বেশি প্রতিবাদের কবিতা নেই। আমরা ‘রোহিঙ্গা’ কবিতায় দেখি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রতি নির্মমতায় কবি ক্ষুব্ধ, মর্মাহত। তিনি ঘাতকদেরকে ‘পশুর অধম’ বলেছেন। ‘অং সাং সুচি’ও একই বিষয়কে উপজীব্য করে লেখা কবিতা। অন্যদিকে ‘মানুষ ও মনুষ্যত্ব’ কবিতায় কবি প্রশ্ন করেন, ‘মানুষ! তুমি কতদূর মানুষ?/কাউকে ভালোবাসো/নাকি কেবল সময় কাটে আত্মপ্রচারে, অহমিকায়?’ অর্থাৎ কবি মানুষ নামধারী অনেক অমানুষের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ। ‘স্বপ্ন’ কবিতায় কবি আরেকটি প্রশ্ন করেছেন। তার প্রশ্ন, যদি প্রতিদিন এভাবে বহু খুন, ধর্ষণ, সড়ক দুর্ঘটনা অব্যাহত থাকে, তাহলে কেন ভালোবাসবেন? এ সকল হতাশা সত্ত্বেও কবি স্বপ্নচ্যূত হন না। তিনি সুন্দর সমাজের প্রত্যাশী। তার মতে, টাকা জীবনের সবটুকু নয়, ভালোবাসা ও প্রেমে জীবন পূর্ণ হয়। তাই এই পথেই ধাবিত হতে হবে। আলোচ্য গ্রন্থের নামকরণ করা হয়েছে ‘তোমার উত্তাপে হৃদয় কাঁপে’। নাম দেখে পাঠক স্পষ্টত ধরতে পারবেন কাব্যগ্রন্থটি প্রেমের। উপরোক্ত আলোচনা থেকে ইতিমধ্যেই পাঠক বুঝতে পারছেন কাব্যগ্রন্থটি প্রেমের কবিতায় পরিপূর্ণ নয়। বইয়ের কয়েকটি কবিতা প্রেমের, বিরহের। নাম কবিতায় নানা উপমায় কবি তার প্রেয়সীর গুণ ব্যাখ্যা করেছেন। প্রিয়াকে বলেছেন সুন্দরতম, সুভাষিণী, চঞ্চল হরিণী। প্রিয়ার স্পর্শ, কথা কবির আরাধ্য। প্রিয়তমার উত্তাপেই কবির হৃদয় কাঁপে এবং কবি ‘প্রেমজ্বরে ভুগতে’ থাকেন। অন্য আরেকটি প্রেমের কবিতা ‘তুমি ও পাখি’। এ কবিতায় কবি যেন কিশোর প্রেমিক, বালখিল্যে ভরা তার চাওয়া। কবির কখনো ইচ্ছে করে প্রিয়াকে কবুতর করে খাঁচায় রাখবে। কখনো ইচ্ছে করে প্রিয়াকে ময়না করে বনে ছেড়ে দিতে। আবার কখনো প্রিয়াকে কোকিল করে কাঁঠালের ডালে, মাছরাঙা করে পুকুরের জলে এবং ইষ্টকুটুম পাখি করে জলপাইয়ের গাছে রাখতে চান। সবশেষে প্রিয়াকে বলেন, ‘তুমি আমার প্রাণপাখি, তোমার জন্যেই এ প্রাণ বাঁচে’। কবির আরও দুটি প্রেমের কবিতা হলো ‘আমি ও তুমি’ এবং ‘আমার ঘর-মন-আকাশখানি’। আলোচ্য গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা নিয়েও একাধিক কবিতা রয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম হৃদয় কবিতায় তার বক্তব্য অকপটে উপস্থাপন করেছেন। কবিতায় কখনো ছন্দের দ্বারস্থ হয়েছেন, কখনো গদ্যকে সঙ্গী করেছেন। কাব্যে সরল উপস্থাপন শৈল্পিকভাবে করা ইতিবাচক, তেমনি না করতে পারাও নেতিবাচক। শিল্প কোনও কোনও ক্ষেত্রে গভীরতা ও গাম্ভীর্য উভয়ই দাবি করে। এ বিষয়টি নিয়ে কবি বিশেষ দৃষ্টি দিবেন বলে বিশ্বাস করি। ‘তোমার উত্তাপে হৃদয় কাঁপে’ প্রকাশ করেছে চৈতন্য প্রকাশন। ইংরেজি অনুবাদ : তাবাস্সুম ফাইজা, সম্পাদনা : পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, প্রচ্ছদ : ইউনুছ নাজিম। মূল্য ২২০ টাকা। কবি ও কবিতার সাফল্য কামনা করি।
×