ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জে লঞ্চ ডুবির ঘটনায় দায়ী ঘাতক কার্গো জাহাজটি ১৪ স্টাফসহ আটক

প্রকাশিত: ১৯:৪৩, ৮ এপ্রিল ২০২১

নারায়ণগঞ্জে লঞ্চ ডুবির ঘটনায় দায়ী ঘাতক কার্গো জাহাজটি ১৪ স্টাফসহ আটক

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ অবশেষে ঘটনার চারদিন পর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর কয়লাঘাট এলাকায় লঞ্চ ডুবির ঘটনায় দায়ী এসকেএল-৩ নামের ঘাতক কার্গোজাহাজটি আটক করেছে কোস্টগার্ড। বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে নোঙ্গর করে জাহাজের নাম ও রং পরিবর্তন করার সময় গজারিয়া কোস্টগার্ডের সদস্যরা জাহাজটি আটক করে। এ সময় জাহাজে কর্মরত ১৪ জনকে স্টাফকেও আটক করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লঞ্চডুবির ঘটনায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশসানের গঠিত দুটি তদন্তর কমিটির গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণশুনানীতে ২৬ জন অংশ নিয়েছেন বলে তদন্ত কমিটির সদস্যরা জানান। জানা যায়, গত রবিবার বিকেল ৫ টা-৫৬ মিনিটের সময় নারায়ণগঞ্জের লঞ্চটমিনাল থেকে এমএল সাবিত আল হাসান লঞ্চটি প্রায় অর্ধশত যাত্রী নিয়ে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চটামিনাল ঘাটে যাওয়া পথে সন্ধ্যায় শীতলক্ষ্যা নদীর কয়লাঘাট এলাকায় নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর সামনে পৌঁছলে পেছন থেকে আসা এসকেএল-৩ নামে একটি কার্গো জাহাজ ধাক্কা দিয়ে লঞ্চটির উপরে উঠিয়ে দিয়ে চলে যায়। এতে লঞ্চটি ডুবে গিয়ে ৩৪ যাত্রী নিহত হয়। বেঁচে ফিরেন ২০ জন যাত্রী। এ ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জের (নৌযান যান্ত্রীক ও ট্রাফিক) উপ-পরিচালক বাবু লাল বৈদ্য বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ ব্যাপারে বন্দর থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা জানান, লঞ্চ দুর্ঘটনায় ঘটনায় বন্দর থানায় বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করেছেন। কিন্তু মামলাটি তদন্ত করবেন নৌ-পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ নৌ-পুলিশের ইনচার্জ পরিদর্শক শহীদুল আলম জানান, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া কোস্টগার্ডের সদস্যরা ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত কার্গো জাহাজ এসকেএল-৩ আটক করে নৌ-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। নৌ পুলিশ জাহাজটি নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এসে মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করেছে। আটককৃত জাহাজের স্টাফদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি বলেন, সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ ও দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, লঞ্চ ডুবির ঘটনায় দায়ী ঘাতক কার্গো জাহাজটি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থেকে কোস্টগার্ডের সদস্যরা আটক করেছে। তবে ওই কার্গো জাহাজাটির মালিক কে তা এখনো জানা যায়নি। তবে এ বিষয়টি কোষ্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ বলতে পারবেন। এদিকে লঞ্চ দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি ও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত গণশুনানী করেছে। গণশুনানীতে দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চ থেকে বেচে যাওয়া যাত্রী, প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতওদর স্বজন ও আহতদের উদ্বারকারীসহ মোট ২৬ জন গণশুনানীতে অংশ নিয়েছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুস সাত্তার শেখ জানান, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাত সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি সকাল এগারোটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চ থেকে বেচে যাওয়া যাত্রী, প্রত্যক্ষদর্শী ও দুর্ঘটনার পর পর যাত্রীদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসা লোকজনসহ মোট ২৬ জন স্বাক্ষির স্বাক্ষ্য রেকর্ড করেছেন। এসব স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে একটি সস্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে। এছাড়া দুর্ঘটনার সময় নদীর পাশের একটি শিল্পকরখানার সিসিটিভির ফুটেজ এবং দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় এক ব্যক্তির মোবাইলে ধারণ করা ফুটেজ সংগ্রহ করে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনার জন্য কে দায়ী তা চিহ্নিত করে এবং দুর্ঘটনা রোধে কি করণীয় সে ব্যাপারে সুপারিশসহ নির্ধারিত সাত কার্যদিবসের মধ্যেই তদন্ত রির্পোট সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেয়া হবে। গণশুনানীতে লঞ্চ দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী সিরাজদীখান তালতলা এলাকার মুছা শেখের পুত্র মোঃ জাকির, মুন্সিগঞ্জ নয়াগাও এলাকার বাসিন্দা দুই বোন তানজিলা ও মনিরা আক্তার মুন্নি, আলো, লঞ্চের কেরানী মঞ্জুর আলী, মুন্সীগঞ্জ দক্ষিণ কোর্টগাও এলাকার রায়হান সরদার ইফাজ, নিহত রুনা আক্তারের চাচা মুন্সিগঞ্জের নুরুতলি কেওয়া এলাকার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান, প্রত্যক্ষদর্শী নির্মাণাধীন শীতলক্ষ্যা সেতুর শ্রমিক মোঃ হালিম, পূবালী সল্টের শ্রমিক আলামিন সর্দার, মোঃ সাঈদ, মোঃ মামুন বেপারীসহ ২৬ জন দুর্ঘটনার বিবরণী তুলে ধরেন তদন্ত কমিটির কাছে। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খাদিজা তাহেরা ববি নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গণশুনানী করেছে। জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান খাদিজা তাহেরা ববি বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেয়া হবে।
×