ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দেশীয় শিল্প সুরক্ষা করে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে : অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১৯:০৯, ৮ এপ্রিল ২০২১

দেশীয় শিল্প সুরক্ষা করে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশীয় শিল্প সুরক্ষার মাধ্যমে আগামী বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির ক্ষতি পোষাতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা শেষে তিনি সাংবাদিকদেও অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রাক-বাজেট আলোচনায় মোট ১২টি ব্যবসায়ী সংগঠনকে দাওয়াত দিয়েছিলাম, তারা সবাই উপস্থিত ছিল। তারা তাদের মতামত, সমস্যা ও প্রাপ্তিসহ সবকিছু আমাদেরকে জানিয়েছেন। মূলত যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে, তার মধ্যে বেশিরভাগই ট্যাক্স রিলেটেড। অর্থ সচিবের নেতৃত্বে বাজেট নিয়ে আমাদের বাজেট টিম কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের বাজেটের যে রূপরেখা আছে সেখানে তাদের পরামর্শ নিয়ে দেশের জন্য যেসব পরামর্শ উপযোগী ও কল্যাণকর সরকার অবশ্যই সেগুলো বিবেচনায় নেবে। যে ধরনের দাবি এসেছে সেগুলো অযৌক্তিক বলব না, কারণ তাদের দাবির পরিমাণ তো বেশিই থাকে। আমরা কতটুকু দাবি নিতে পারব সেটি বাজেট টিম, ব্যাংক, এনবিআরসহ যারা আছে তাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেব। এসব ব্যবসায়ীদের বড় দাবিগুলো কী এবং এই সময়ে তারা কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন জানতে চাইলে সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী বলেন, কোভিড মহামারির জন্য গতবছর প্রধানমন্ত্রী ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। সেখান থেকে তারা (ব্যবসায়ী) উপকৃত হয়েছে, সেটি তারা অস্বীকার করেনি। তাদের দাবি হলো- যেহেতু এই করোনা এখনও আমাদেও দেশে রয়ে গেছে, সেহেতু সমস্যাগুলো তাদের এখনও মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তাই সেটার মেয়াদ আরো বাড়ানো যায় কিনা সেটা তাদের মূল দাবি। আগামী বাজেট সম্পর্কে কোনো রূপরেখা বা ধারণা দেয়া যাবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এ সম্পর্কে কোনো ধারণা দেয়া হয়নি। আমাদের আরো অনেকগুলো মিটিং করতে হবে। এরপর আমি মোটামুটি একটা স্ট্রাকচার দাঁড় করাতে পারব। সেই স্ট্রাকচার তৈরি হলে আমি ম্যাক্রো এবং মাইক্রো লেভেলের সমস্ত কোম্পানিগুলোকে সামনে নিয়ে আমার বাজেট টিমের সঙ্গে বসে চূড়ান্ত করে আপনাদের সামনে আসব। মূল বাজেটের আগে আমরা আইডিয়াটা দিতে পারব। প্রাক-বাজেট আলোচনায় ফেডারেশান অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রেসিডেন্ট ড. রুবানা হক, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রেসিডেন্ট একেএম সেলিম ওসমান ও প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন, বাংলাদেশ লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মো. সাইফুল ইসলাম, মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি চেম্বার বিল্ডিংয়ের (এমসিসিআই) ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট রিজওয়ান রহমান ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এন কে এ মুবিন, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (সিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজ, বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব্ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট সেলিমা আহমেদ, ফরেন ইনভেস্টরস্ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) প্রেসিডেন্ট রূপালী হক চৌধুরী, ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) প্রেসিডেন্ট মিজ শমী কায়সার প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। মুস্তফা কামাল আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রণোদনা প্যাকেজ দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। তবে এখনও এমন অনেক খাত আছে, যেসব খাতে নানা সমস্যা আছে। তারা প্রণোদনা প্যাকেজের কোনো সুবিধা পায়নি। ব্যবসায়ী নেতারা নতুন খাতগুলোর জন্যও প্রণোদনা প্যাকেজের সুযোগ দাবি করেছেন। আসন্ন বাজেটে কালো টাকা সাদা করার কোনো দাবি ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে করা হয়েছে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সভায় কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। তারা আগেই তাদের বিভিন্ন দাবির ডিটেইল জানিয়েছেন। তবে তারা কালো টাকা সাদা করার মেয়াদ না বাড়িয়ে কীভাবে সরকারের কাজগুলো করা যায়, সে বিষয়ে কথা বলেছেন। গত বছর লকডাউনের সময় প্রণোদনা প্যাকেজসহ সাধারণ মানুষের কাছে ক্যাশ ট্রান্সফারের মতো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়েছিল। এবারও সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশার বাণী আছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সব মানুষ আমাদের কাছে মূল্যবান। তাদের জীবন-জীবিকা যাতে ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সচেতন। আশা করছি, তিনি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেবেন। আগামী বাজেটে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেশীয় অর্থনীতি আরও সম্প্রসারণ করতে হবে। তাহলেই মানুষের কাছে অর্থ যাবে। এজন্য আমাদের রাজস্ব আদায়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে, রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে যাতে মানুষের ভোগান্তি না বাড়ে সেদিকেও নজর দিতে হবে। এছাড়া, কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশীয় অর্থনীতিকে সুসংহত করার ওপর জোর দেওয়া হবে।
×