ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁর মহাদেবপুরে অবৈধ ইটভাঁটিতে প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

প্রকাশিত: ১৬:৫৬, ৮ এপ্রিল ২০২১

নওগাঁর মহাদেবপুরে অবৈধ ইটভাঁটিতে প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ নওগাঁর মহাদেবপুরে অনুমোদন ছাড়াই সংশ্লিষ্টদের প্রকাশ্য সহযোগিতায় উপজেলা শহর এবং এর আশপাশের এলাকায় গড়ে ওঠা ইটভাঁটিগুলো পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর এসব ইটভাঁটি বন্ধে তেমন কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে ইটভাঁটির মালিকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ভাঁটির পাশে কিছু কয়লা রাখা হলেও কয়েকটি ভাঁটিতে রীতিমত পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এর ফলে একদিকে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। অন্যদিকে উজাড় হচ্ছে গাছপালা। ধংস হচ্ছে তিন ফসলী কৃষি জমি। অনুসন্ধানে জানা গেছে,উপজেলার চাঁন্দাশ ইউনিয়নের বাগডোব এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের পাশেই ফসলী জমি নষ্ট করে তৈরী করা হয়েছে বিশাল ইটভাঁটি। চারিদিকে বোরো ধানের ক্ষেত। সেসব জমির সঙ্গে লাগোয়া জায়গায় খোলা করে তৈরি কাঁচা ইট শুকানো হচ্ছে। ভাটিতে কয়লা থাকলেও চারপাশে জমা করে রাখা হয়েছে হাজার মণ বিভিন্ন গাছের গুড়ি। ভাটির ওপরে উঠে দেখা যায়, প্রকাশ্য দিবালোকে ভাঁটিতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। সেখানে কাজ করা শ্রমিকরা জানালেন, ভাঁটিতে আগুন জ্বালানোর জন্য কাঠের প্রয়োজন হয়। প্রতিবার আগুন জ্বালাতে অন্তন সাতশ’ থেকে আটশ’ মণ কাঠ লাগে। জানতে চাইলে তারা জানান, কাঠ পোড়ানো যে অবৈধ তা তারা জানেন। কিন্তু মহাজন সকলকে ম্যানেজ করেই এই ভাঁটিতে কাঠ পোড়ান। মাঝে মাঝে প্রশাসনের লোকেরা ভাঁটটি পরিদর্শনে আসলেও কোন অসুবিধা হয়না বলেও জানান তারা । এই ইটভাঁটির নাম আল আমিন ব্রিকস। মালিক মহাদেবপুর উপজেলা সদরের বাসিন্দা ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, সকলেই কাঠ পোড়ায়। তাই তিনিও পোড়াচ্ছেন। ইটভাঁটির কাছেই বাগডোব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মসজিদ, বাজারসহ অনেক বসতবাড়ি। ভাঁটির পাশ দিয়েই চলে গেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের মহাদেবপুর-ছাতড়া পাকা সড়ক। ইটভাঁটির জন্য সামান্য দূর থেকে ভেক্যু মেশিন দিয়ে ফসলী জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে ট্রাক্টরে করে এনে তা দিয়েই ইট তৈরী করা হচ্ছে। প্রতিদিন মাটিবোঝাই অসংখ্য ট্রাক্টর চলাচলের ফলে সড়কটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইটভাঁটি সংলগ্ন জমির মালিকরা জানালেন, প্রতিবছর ভাঁটির কালো ধোঁয়ায় ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু ভাঁটি মালিক এরজন্য কোন ক্ষতিপূরণ দেন না। এই ইটভাঁটি মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ করছে বলেও তারা জানান। চাঁন্দাশ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক রঞ্জু বলেন, এই ইটভাঁটির কোন অনুমোদন নেই। সংশ্লিষ্ট সকলকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে চলছে এটি। তিনি অবিলম্বে এটি বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান। ওই ইউপির চেয়ারম্যান মাহমুদুন নবী রিপন বলেন, অনুমোদনহীন ইটভাঁটি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। মহাদেবপুর ইটভাঁটি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও খাজুর ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন বলেন, মহাদেবপুরে ১৭টি ইটভাঁটির মধ্যে ১০টি উন্নত ঝিকঝাক ভাঁটি হলেও বাকী ৭টি এখনও ফিক্সড চিমনির ভাঁটি। এগুলোতে জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহার করা প্রয়োজন হয়। কিন্তু কাঠ পোড়ানোর দায় সমিতির নয়। যারা কাঠ পোড়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। নওগাঁ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মকবুল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, মহাদেবপুরের ১৭ ইটভাঁটির একটিরও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই। তাদের হাতে বিচারিক ক্ষমতা না থাকায় তারা ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করতে পারেন না। অবৈধভাবে সবকিছু চলছে জেনেও তাদের কিছু করার নেই বলেও তিনি জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভাঁটি মালিক জানান, তারা বিভিন্ন সময় সরকারি, বেসরকারি, দলীয় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে থাকেন। তাই তাদের কর্মকান্ডে তেমন কোন অসুবিধা হয়না। তাদের মতে, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিতে খাজনার চেয়ে বাজনাই বেশী হয়। ইটভাঁটি সংক্রান্ত আইন কানুন সহজ করা হলে একদিকে যেমন ব্যবসা পরিচালনা করা সহজ হবে, তেমনি সকলেই আইন মেনে চলতে পারবেন। এব্যাপারে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান মিলন সাংবাদিকদের বলেন, ইটভাঁটিতে কাঠ পোড়ানোর কোন সুযোগ নেই। ইটভাঁটিগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×