ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বইমেলা প্রতিদিন

বাংলা একাডেমি আঙ্গিনায় পাঠকসমাদৃত বইয়ের কথা

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ৮ এপ্রিল ২০২১

বাংলা একাডেমি আঙ্গিনায় পাঠকসমাদৃত বইয়ের কথা

মনোয়ার হোসেন ॥ অমর একুশে বইমেলার মূল ঠিকানাটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা থেকে শিশু চত্বর, লিটল ম্যাগ কর্নার, মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ কিংবা লেখক বলছি মঞ্চ-সবটাই রয়েছে উদ্যানে। সেই সুবাদে মেলার এই প্রান্তরকেই ঘিরেই দৃশ্যমান হয় পাঠকের আনানোগা। তাই বলে বইপ্রেমীদের জন্য বিরানভূমি হয়ে থাকে না মেলার আরেক ক্যানভাস বাংলা একাডেমি আঙ্গিনা। শুধুমাত্র প্রদর্শনীমূলক অনেক স্টল থাকলেও গ্রন্থানুরাগীদের জন্য এখানেও আছে সংগ্রহ করার অনেক বই। বিচিত্র বিষয়ের সেসব বইয়ের টানে এখানে ছুটে আসেন অনেকেই। নানা শ্রেণী ও বয়সের বইপ্রেমীর চাহিদা মেটানো সেসব বই ও বই বিতানের কথা মেলে ধরা হলো এ লেখায়। একাডেমি আঙ্গিনায় প্রবেশ করার পর বাম পাশেই রয়েছে একুশে বইমেলা সূচনার ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রকাশনা সংস্থা মুক্তধারা। আলাপচারিতায় স্টলটির বিপণনকর্মী জয় সেন বলেন, পরিস্থিতির কারণে এবার মেলায় পাঠক কম আসছে। কিন্তু যেদিন মেলায় জনসমাগম বাড়ে সেদিন ঠিকই এখানেও পাঠক ভিড় করে। এই প্রকাশনার পুরনো কিংবা নতুন অনেক বইয়ের প্রতিই রয়েছে পাঠকের বিশেষ টান। বিক্রির বিবেচনায় এগিয়ে থাকে গল্প-উপন্যাস থেকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইগুলো। পাঠকটানা এমন কিছু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইয়ের মধ্যে রয়েছে রামেন্দু মজুমদার রচিত ‘মাই বাংলাদেশ মাই বাংলাদেশ’, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর লেখা ‘তাজউদ্দীন আহমদের রাজনৈতিক জীবন’, সেলিনা হোসেন সম্পাদিত ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প’ ও আহমদ ছফার ‘জাগ্রত বাংলাদেশ’। গল্প ও উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘গজেন্দ্র কুমার মিত্রের ‘পৌষ ফাগুনের পালা’ ও মৈত্রেয়ী দেবীর ‘মংপুতে রবীন্দ্রনাথ’। ইতিহাস ও সংস্কৃতিকবিষয়ক বইয়ের মধ্যে রিয়েছে সত্যেন সেনের ‘মহাবিদ্রোহের কাহিনী’ ও ‘মসলার যুদ্ধ’। একইভাবে এখনো পাঠক টানে অন্নদাশঙ্কর ভ্রমণকাহিনী ‘পথে প্রবাসে’। এছাড়াও শিশু-কিশোরদের বই এবং বিজ্ঞানবিষয়ক কিছু বই ভাল বিক্রি হয়। মুক্তধারার ডান পাশেই রয়েছে শিশু একাডেমির স্টলটি। শিশুতোষ বইয়ের জন্য বিশেষভাবে নজর কাড়ে এই বই বিতানটি। বুধবার বই মেলার একুশতম দিনের বিকেলে এই স্টল থেকে ‘শিশু বিশ্বকোষ’ সংগ্রহ করছিলেন স্বামীবাগের বাসিন্দা আরিফা রহমান। কথা প্রসঙ্গে বললেন, স্কুলপড়ুয়া ছেলের জন্য বইটি সংগ্রহ করলাম। বর্ণমালার ক্রম অনুসারে বিভিন্ন বিষয়ে জানার জন্য গ্রন্থটি চমৎকার। স্টলটির বিক্রয়কর্মী বাবুল খান জানান, ফয়েজ আহ্্মদের ছড়ার বই ‘মৌ মৌ’, ‘বাংলা অভিধান’, ছবির মাধ্যমে ছোটদের অক্ষর পরিচয়মূলক ‘এ বি সি’ ও ‘অ আ ই’, শেখ হাসিনার লেখা ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প’, ‘ছোটদের বিজ্ঞানকোষ’ শীর্ষক বইগুলোর পাঠকচাহিদা রয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সিরিজের বইগুলোই কাটতি আছে। একাডেমির আরেক পাঠকপ্রিয় স্টল সেন্টার ফর রিসার্চ এ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অবলম্বনে ‘গ্রাফিক নভেল মুজিব’ নিয়ে আছে শিশুদের দারুণ কৌতূহল। কার্টুনের মাধ্যমে সহজ ভাষায় লেখা বইটির ‘ভাষা আন্দোলন : শুরুর গল্প’ শিরোনামের অষ্টম সংস্করণ এসেছে মেলায়। স্টলটির বিক্রয়কর্মী জানান, ছোটরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সহজভাবে জানতে চায়। তাই এই গ্রাফিক নভেলের প্রতি তারা বিশেষ আগ্রহী। জাতীয় জাদুঘরের স্টলটি থেকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আলোচিত্র চিত্রকর্মে সজ্জিত ‘মাস্টার আর্টিস্ট অব বাংলাদেশ জয়নুল আবেদিন’ বইটির প্রতি রয়েছে পাঠকের বিশেষ আগ্রহ। এছাড়া ‘ট্র্যাডিশনাল জামদানি’, ‘আলোকচিত্রে সেকালের ঢাকা’, ‘ইসলামিক আর্ট হেরিটেজ অব বাংলাদেশ’ ও ‘বাংলাদেশের দারুশিল্প’ শীর্ষক গ্রন্থগুলোর পাঠক-কাটতির কথা জানান স্টলটির বিক্রয়কর্মী সাইফুর রহমান। ধর্মীয়বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের খোঁজে অনেকেই আসেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের স্টলে। এখানে বহুল বিক্রীত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘বুখারী শরিফ’, ‘আখলাকুল নবী’, ‘আল কোরআনুল করিম’ ও ‘নক্ষত্রতুল্য সাহাবায়ে কারাম’। মাসিক রম্য পত্রিকা উন্মাদ-এর স্টলটিও রয়েছে একাডেমি চত্বরে। মেলা উপলক্ষে এসেছে পত্রিকাটির বিশেষ সংখ্যা ‘মিক্সড কালেকশন : ওল্ড ইজ গোল্ড’ এবং ‘মুভি কালেকশন’। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর স্টলে আছে দেশের উন্নয়ন কর্মকা-ের পরিসংখ্যানবিষয়ক নানা বই। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের স্টলের আছে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক নানা বই। কবি নজরুল ইনস্টিটিউটে দেখা মেলে জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের বিচিত্র বিষয়ে রচনাসম্ভারসহ তাকে নিয়ে লেখা নানা বই। মঞ্চনাটক বিষয়কে নানা বইয়ের দেখা মেলে থিয়েটারের স্টলে। রামেন্দু মজুমদার সম্পাদিত ‘নাটক তত্ত্ব ও শিল্পরূপ’ কিংবা আবদুল্লাহ আল মামুন রচিত ‘অভিনয়’ শিরোনামের বইগুলো বিষয়ে রয়েছে পাঠকের আগ্রহ। ডাক বিভাগের স্টলে রয়েছে হরেক রকমের ডাকটিকেট, পোস্টকার্ড ও বিশেষ খাম। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থায় রয়েছে মূলত গবেষণা বিষয়ক বই। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিতেও রয়েছে গবেষণাধর্মী গুরুত্বপূর্ণ কিছু বই। তাদের প্রকাশিত পাঠক আকৃষ্ট করা বইয়ের মধ্যে আছে ‘বাংলা পিডিয়া’, ‘জুনিয়র বাংলা পিডিয়া’, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস’, ‘চারু ও কারুকলা’, ‘ঢাকাই খাবার’, ‘প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য’ ও ‘স্থাপত্য’। এছাড়া একাডেমি আঙ্গিনার বাংলা একাডেমির স্টলে অভিধান, গষেণাধর্মী বইসহ মুক্তিযুদ্ধ কিংবা গল্প-উপন্যাসহ বিচিত্র বিষয়ক বইয়ের জন্য ভিড় জমান পাঠকেরা। একুশতম দিনের মেলা চিত্র : বুধবার একুশতম দিনের মেলায় সেই অর্থে তেমনভাবে পাঠক সমাগম হয়নি। অল্প কিছু প্রকাশকরা বলছেন, গণপরিবহন চালু হলেও বাংলা একাডেমি নির্ধারিত সময়সূচীর কারণে মেলা জমে উঠছে না। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময়টা মেলার অনুকূলে নয়। কোন মেলাতেই দুপুর বেলায় মানুষ আসে না। মূলত বিকেলের পর সন্ধ্যায় বাড়ে পাঠকের পদচারণা। কিন্তু তার আগে বিকেল পাঁচটায় বন্ধ হয়ে যায় মেলা। এমন বাস্তবতায় আগামী শুক্রবার ছুটির দিনে পাঠকের পদচারণায় মন্দা কেটে মেলার গতি বাড়ার প্রহর গুনছেন প্রকাশকরা নতুন বই ॥ বুধবার অমর একুশে বইমেলার ২১তম দিনে নতুন বই এসেছে ৬৯টি। এরমধ্যে গল্প-৮, উপন্যাস-১১, প্রবন্ধ-৩, কবিতা-২৮, গবেষণা-২, ছড়া-৪, জীবনী-৩, মুক্তিযুদ্ধ-২, ভ্রমণ-১, ইতিহাস-২, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক একটিসহ অন্যান্য বিষয়ে ২টি বই প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে পাঞ্জেরী এনেছে পলাশ মাহবুবের ছড়ার বই ‘ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ’। ঐতিহ্য এনেছে এ্যারোমা দত্তের ‘আমার দাদু শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও অন্যান্য’। চন্দ্রদ্বীপ এনেছে মুজিব ইরমের ‘দেশি কবিতা’। অন্যপ্রকাশ এনেছে শিহাব শাহরিয়ারের কাব্যগ্রন্থ ‘নিঃসঙ্গ নদী ছায়া’। দাঁড়িকমা এনেছে মাহিন খানের কবিতার বই ‘প্রতিবাদ’। জিনিয়াস এনেছে আবদুল মান্নান সরকারের উপন্যাস ‘জনক (২য় খ-)’ ও ড. আহমদ আব্দুল্লাহর ‘ঢাকার মুসলিম ঐতিহ্য’। ক্রিয়েটিভ এনেছে সন্দীপন ধরের ‘ভয়’। পুথিনিলয় এনেছে বুলবুল চৌধুরীর ‘বাছাই কিশোর গল্প’। বইপত্র এনেছে শামস্্ রহমানের ‘বঙ্গবন্ধু নেতা, নেতৃত্ব ও আজকের বাংলাদেশ ॥ পেন্সিল এনেছে মুহাম্মদ তালুতের গল্পগ্রন্থ ‘নৈঋত’। আজকের মেলা ॥ আজ বৃহস্পতিবার একুশে বইমেলার বাইশতম দিন। এদিন মেলা চলবে বেলা ১২টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।
×