ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন শুরু আজ

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ৮ এপ্রিল ২০২১

ঢাকায় ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন শুরু আজ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আট জাতির শীর্ষ সম্মেলন ডি-৮ সামিট। ভার্চুয়াল মাধ্যমে বাংলাদেশ এবারের দশম শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই শীর্ষ সম্মেলনে ইসলামী উন্নয়নশীল আটটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানগণ স্ব স্ব দেশের প্রতিনিধি দল নিয়ে যোগ দেবেন। আট জাতির শীর্ষ সম্মেলনকে সামনে রেখে বুধবার অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন করোনা মহামারী ভয়াবহ আকার ধারণ করায় ডি-৮ জোটকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সভাপতির বক্তৃতা প্রদানকালে তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা বহুপাক্ষিক উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সদস্য দেশগুলোর জীবন ও জীবিকা রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ করি।’ ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এই ১৯তম সম্মেলনে তিনি বলেন, জোটভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে গড়ে উঠা ডি-৮ ডিজিটাল মার্কেট প্লেস করোনা পরবর্তী বাণিজ্যিক সহযোগিতার এক নতুন ধারা সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশ প্রচেষ্টা চালাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব কমিয়ে ডি-৮ দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার বৃদ্ধির মাধ্যমে সদস্য দেশগুলোর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, পণ্য ও সেবার সমান ও মুক্ত প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে এই সহযোগিতা বৃদ্ধি সম্ভব। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সরকার ও ব্যবসায়ীরা এই করোনা যুগে কিভাবে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা যায় তার উপায় উদ্ভাবনে এগিয়ে আসবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব প্রদান করবেন। প্রধানমন্ত্রী দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়াও, অন্যান্য ডি-৮ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণও ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিতব্য এই শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করবেন। এই শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা তুলে ধরার নতুন দ্বার উন্মোচন ঘটবে। এই শীর্ষ সম্মেলনে বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প সহযোগিতা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পরিবহন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং পর্যটন- এই ছয়টি ক্ষেত্রে আন্তঃ ডি-৮ সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ আন্তর্জাতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয়ে সম্মিলিত নীতিগত অবস্থান গ্রহণ করা হবে। মূলত গত ৫ এপ্রিল থেকে আট জাতির এই শীর্ষ সম্মেলনের কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছে। এদিন কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি সভার পাশাপাশি ডি-৮ভুক্ত দেশেগুলোর ব্যবসায়ীদের মধ্যে সাইডলাইনে বিজনেস ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। বিজনেস ফোরাম ছাড়াও এদিন দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে কমিশনারদের ৪৩তম সভা ভার্চুয়ালি শুরু হয়। দুই দিনব্যাপী এই কমিশন সভার প্রথম দিনের সভায় সভাপতি পদ হস্তান্তর করা হয়। এবারের ডি-৮ শীর্ষ সম্মলনে বাংলাদেশ স্বাগতিক দেশ। ফলে তুরস্কের অর্থনৈতিক বিষয়ক মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত ওমর গাকুক এদিন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেনের কাছে ডি-৮ কমিশনের সভাপতি পদ হস্তান্তর করেন। দ্বিতীয় দিন ৬ এপ্রিল পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ডি-৮ কমিশনের বৈঠকে দশম শীর্ষ সম্মেলনের ‘ঢাকা ঘোষণা ২০২১’ এবং জোটের আগামী ১০ বছরের (২০২০-২০৩০) কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ গৃহীত হয়েছে। দুই দিনব্যাপী কমিশন সভার সমাপনী দিনে এই ডকুমেন্টগুলো গৃহীত হয়। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ দুই দশক পর আবার দ্বিতীয় বারের মতো ডি-৮ জোটের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছে। এটা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন বাংলাদেশ তার প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে। শুধু তাই নয়, একই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের সকল শর্তও পূরণ করেছে। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে ডি-৮ জোটের সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে বাংলাদেশ গর্বিত ও সম্মানিত বোধ করছে। দশম শীর্ষ সম্মেলনের থিম তুলে ধরে তিনি বলেন, এই সম্মেলনে সদস্য দেশগুলোকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে এবং সুবিধা গ্রহণ করতে সহযোগিতা করবে। ডি-৮ জোটের মোট জনসংখ্যা ১১০ কোটি। এর মধ্যে ২০ কোটি ৭০ লাখ হচ্ছে যুবক। এদের বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। যা মোট জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ। আমরা এই জোটকে একটি গতিশীল জোটে পরিণত করতে এই বিশাল যুব সমাজের সামনে সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরতে চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশেও রয়েছে সম্ভাবনাময় যুব সমাজ। আমরা তাদের দক্ষতা প্রশিক্ষণ দিয়ে ভবিষ্যত সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশ বিদেশী ছাত্রদের শিক্ষার জন্য এক আকর্ষণীয় গন্তব্যও বটে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য আমরা এই যুব সমাজকে যথাযথ শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃিষ্ট করে দিতে চাই। তাদের আমরা উদ্ভাবনী প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে চাই। বাংলাদেশ জোড়ালোভাবে বিশ্বাস করে, ডি-৮ জোটভুক্ত সদস্য দেশগুলোর মধ্যে তথ্যে অবাধ আদান-প্রদান ও যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে পারলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অফুরন্ত সম্ভাবনা ধরা সম্ভব। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই মহামারী করোনার মধ্যে বাংলাদেশ তার দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছে। ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ৩১ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৬০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ। যা বাংলাদেশের জিডিপির ৪.৪৪ শতাংশ। আর ৭ এপ্রিল বুধবার অনুষ্ঠিত হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ১৯তম বৈঠক। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। এ সময় তিনি ১৯তম ডি-৮ মিনিস্টার্স অব কাউন্সিলের সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন। ছোট-খাটো সংশোধনীর মাধ্যমে এই বৈঠকে কমিশন গৃহীত ঢাকা ঘোষণা ২০২১ এবং জোটের ১০ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়। আশা করা হচ্ছে, আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে জোট নেতাদের সম্মতিক্রমে এসব ডকুমেন্ট গৃহীত হবে। এদিকে, এবারের ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রথমবারের মতো এই জোটভুক্ত দেশগুলোর তরুণদের সামিট অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এই যুব সম্মেলনে ডি-৮ভুক্ত দেশসমূহের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীগণ বক্তৃতা প্রদান করেন। যুব সম্মেলনে ডি-৮ভুক্ত দেশসমূহ থেকে প্রায় দেড় শ’ যুব প্রতিনিধি যোগদান করেন। দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ডি-৮ সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আগামী দুই বছর ডি-৮ এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করবে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন এবং আগামী দুই বছর ডি-৮ এর চেয়ারের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নের অভাবনীয় সাফল্য গাঁথাসমূহ বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হবে।’ এছাড়াও এর মাধ্যমে শুধু ডি-৮ এ নয় বরং সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনির্মাণ, স্বার্থ সংরক্ষণ ও বিশ্ব পরিম-লে স্বীয় কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও সুসংহত করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। মহামারী করোনা (কোভিড-১৯) সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে। ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজিরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্ক। ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালে ঢাকায় দ্বিতীয় ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনটি সফলভাবে আয়োজন করেছিল।
×