ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নগরীতে বাস চললেও যাত্রী নেই

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ৮ এপ্রিল ২০২১

নগরীতে বাস চললেও যাত্রী নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লকডাউনের তৃতীয় দিনে অভ্যন্তরীণ রুটে গণপরিবহন নগরীগুলো কর্মব্যস্ত হয়ে উঠে। রাজধানীসহ দেশের মহানগরগুলোতে দু’দিন বন্ধ থাকার পর এইসব নগরীতে অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল শুরু করে। কর্মস্থলে যেতে মানুষের ভোগান্তি কমানোর লক্ষ্যেই সরকার শর্ত সাপেক্ষে বাস চলাচলের আনুমতি দেয়। শর্তের মধ্যে ছিল গণপরিবহনে কঠোরভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, গণপরিবহন চললে নগরজীবন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যায়। আগে থেকেই চলাচল করছিল প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, মোটরসাইকেল। রাজধানীর বাইরে সড়ক-মহাসড়কে আন্তঃনগর যাত্রীবাহী বাস চলাচল করেনি। মালবাহী ট্রাক ও প্রাইভেট গাড়ি চলাচলে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীতে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করলেও যাত্রীর সংখ্যা ছিল কম। স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখায় কোন কোন রুটে অনেক যাত্রীকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। আসন ফাঁকা রাখার অজুহাতে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হলেও বেশিরভাগ পরিবহনেই ছিল না স্যানিটাইজেশন সুবিধা। তবে রাজধানীতে গণপরিবহন চালু হওয়ায় দাপট কমেছে সিএনজি চালিত অটোরিক্সার। অফিসগামীরা এতে মোটামুটি খুশি। যদিও বাইরের এলাকা থেকে কিছু বাস রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এদিন যানজটের চিত্রও ছিল আগের দুদিনের তুলনায় কম। এছাড়া রাজধানীতে স্বাস্থ্যবিধি নজরদারিতে অব্যাহত ছিল ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। মাস্ক পরিহিতের অনুপাতও বেড়েছে অনেক। মাস্ক না থাকায় অনেক রিক্সাচালককে গামছা দিয়ে মুখম-ল ঢেকে রাখতে দেখা গেছে। রাজধানীর এয়ারপোর্ট, খিলক্ষেত বনানী, মহাখালী ফার্মগেট, আসাদগেট, কলাবাগান, সাইন্স ল্যাবরেটরি, বাটা সিগন্যাল, আজিমপুর নীলক্ষেত ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা যায়-সরকারী নির্দেশ অনুসারে ধারণক্ষমতার অর্ধেক আসন খালি রেখেই চলাচল করছে বাস মিনিবাস। আর এর কারণে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের বাসে তুলতে অনীহা দেখাচ্ছেন কন্ডাক্টররা। ফলে বাসে উঠতে অপেক্ষায় থাকতে হয় অনেক যাত্রীকে। আবার বাড়তি ভাড়া নিয়েও অভিযোগ অনেক যাত্রীর। তাদের অভিযোগ- এমনিতেই রাজধানীজুড়ে গণপরিবহনের সঙ্কট রয়েছে। তার মাঝেই যাত্রী পরিবহনে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এমন অবস্থায় যাত্রীরা পড়েছেন মহাবিপাকে। সময় মতো অফিস পাড়ায় পৌঁছতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভাড়ার নৈরাজ্য তো রয়েছেই। মাসের শেষে যে টাকা বেতন আসবে তার অর্ধেকের বেশিই চলে যাবে অফিস যাতায়াতে গণপরিবহনের ভাড়ায়। ভাড়া নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতকারী যাত্রীরা। বাসে উঠলেই তাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। মাহমুদ শফিক নামে এক যাত্রী বলেন, প্রতিদিন যাতায়াতেই চলে যায় আড়াই শ’ থেকে তিন শ’ টাকা। বেতন সব চলে যায়। এমন অবস্থা যদি দীর্ঘসময চলতে থাকে তবে আমাদের বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়বে। গাড়িতে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করলে অর্ধেক ভাড়া বাড়ানো যেতে পারে কিন্তু ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করার কোন মানেই হয় না। লকডাউনে তৃতীয় দিনে দেখা গেছে মাস্ক পরিহিতের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। ক’জন রিক্সাচালককে রঙিন গামছা মাথায় বাঁধার পাশাপাশি মুখেও পেঁচিয়ে রাখতে দেখা যায়। মুখে মাস্ক কেন পরেননি এ প্রশ্ন করতেই হকচকিত হয়ে রিক্সাচালক বলেন, মুখে মাস্ক পরে বেশিক্ষণ রিক্সা চালালে দম বন্ধ হয়ে আসে। তাছাড়া গরমে মাস্ক ভিজে যায়। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধিতে তিনি নিজেও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, গামছা দিয়ে মাস্ক বানিয়ে মুখে পেঁচিয়ে রাখেন। মাঝে মাঝে খুলে ঘামও মোছেন। এতে কোন সমস্যা আছে কি না তা জানতে চান। শুধু তরুণ এই রিক্সাচালকই নন, রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে মাস্ক পরিধানের ব্যাপারে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। লকডাউনের আগেও অধিকাংশ মানুষ মাস্কবিহীন ঘোরাফেরা করলেও গত দুদিনে এ পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। জীবন-জীবিকার তাগিদে যারা ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন, তাদের প্রায় সবাই মুখে মাস্ক পরিধান করেছেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে সবার মধ্যেই মাস্ক পরিধানের প্রবণতা বেড়েছে। সরকার ঘোষিত লকডাউনের আজ তৃতীয় দিন চলছে। লকডাউন পালনে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা গেলেও মাস্ক ব্যবহারে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যেই মাস্ক পরিধানের ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
×