ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তম বই উত্তম মানুষ

প্রকাশিত: ২০:৫২, ৮ এপ্রিল ২০২১

উত্তম বই উত্তম মানুষ

আমাদের বাংলা একাডেমি বইমেলায় প্রতি বছর পাঁচ হাজারেরও অধিক নতুন বই আসে। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আমাদের লেখক ও প্রকাশকের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ভার্চুয়াল বইয়ের লেখক ও পাঠকের সংখ্যাও কম নয়। বই প্রকাশিত হয় না এমন লেখকের সংখ্যা অগণিত। স্বাভাবিকভাবে ধরে নেয়া যায় যে, সমাজে ভাল লেখকের সংখ্যা বৃৃিদ্ধ পাওয়া মানে ভাল মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া। উত্তম বই উত্তম মানুষের প্রতিচ্ছবি। বার্ট্রান্ড রাসেল বলেছেন, ‘বই লেখাটা নিষ্পাপ বৃত্তি এবং এতে করে দুষ্কর্ম থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়।’ বেশি বেশি বইয়ের চেয়েও বেশি প্রয়োজন মানসম্পন্ন বই ও একনিষ্ঠ পাঠক। যে সমাজে মানসম্পন্ন বই ও একনিষ্ঠ পাঠকের সংখ্যা বেশি সে সমাজ সভ্যতার মাপকাঠিতে এগিয়ে। ভিক্টর হুগো ভাষায়Ñ ‘বই বিশ্বাসের অঙ্গ, বই মানব সমাজকে টিকাইয়া রাখিবার জন্য জ্ঞান দান করে। অতএব, বই হইতেছে সভ্যতার রক্ষাকবচ।’ সভ্যতার এই পথ ধরে আমাদের এগিয়ে চলা খুব বেশি গতিময় নয়! একটি সভ্য জাতির যে আত্মমর্যাদাবোধ থাকে সেই আত্মমর্যাদাবোধেও আমরা তেমন জাগ্রত নই। কেননা, আমরা বই পড়ি না। পিয়ারসন স্মিথ বলেছেন, ‘যে বই পড়ে না, তার মধ্যে মর্যাদাবোধ জন্মে না।’ আপন সমাজের অতীত ঐতিহ্য ওই সমাজের মানুষের আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্রত করে। পরীক্ষায় পাসের জন্য আমরা যতটা পড়ি আত্মতৃপ্তির জন্য ততটা পড়ি না! তাই প্রকৃত পাঠাভ্যাস তৈরি হয় না আমাদের। নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে না বই। কর্ম জীবনে এসে অনেকেই হয়ে পড়াই বই বিমুখ! এমনকি অনেক শিক্ষকের পাঠও সীমিত থাকে চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য নির্ধারিত সিলেবাসের মধ্যে! শিক্ষক নিজে মননশীল পাঠক হলে মননশীল পাঠক হয় তার শিক্ষার্থী। আত্মতৃপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় পাঠ ছেড়ে দিয়ে আমরা যেন হয়ে যাই পড়তে না জানা মানুষ! যখন আমরা বই পড়া ছেড়ে দিই তখনই সীমিত হয়ে পড়ে আমাদের দৃষ্টি। সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন, চোখ বাড়াবার পন্থা হচ্ছে বইপড়া। কর্মজীবনে সঠিক দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের মাধ্যমে আমরা যেমন হয়ে উঠতে পারি উত্তম কর্মী; তেমনি উত্তম বই পাঠের মাধ্যমে আমরা হয়ে উঠতে পারি সুন্দর মনের অধিকারী উত্তম মানুষ। ‘বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেয়া সাঁকো।’ বলেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সুখ-শান্তির পাশাপাশি দুঃখ-কষ্টকে নিত্য সঙ্গী করেই আমরা অতিবাহিত করি আমাদের জীবন। সুখের দিনে সবাই থাকলেও দুঃখের দিনে অনেক সময় হয়ে পড়ি বন্ধুহীন। নিমজ্জিত হয়ে যাই কষ্টে, আক্রান্ত হয়ে যাই বিষণœতায়! শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বই পড়াকে যথার্থ হিসেবে যে সঙ্গী করে নিতে পারে, তার জীবনের দুঃখ-কষ্টের বোঝা অনেক কমে যায়।’ প্রতিভা বসু বলেছেন, ‘বই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ আত্মীয়, যার সঙ্গে কোনদিন ঝগড়া হয় না, কোনদিন মনোমালিন্য হয় না।’ ভিনসেন্ট স্টারেট বলেছেন, আমরা যখন বই সংগ্রহ করি, তখন আমরা আনন্দকেই সংগ্রহ করি। জেমস রাসেল বলেছেন, ‘বই হলো এমন এক মৌমাছি যা অন্যদের সুন্দর মন থেকে মধু সংগ্রহ করে পাঠকের জন্য নিয়ে আসে।’ মোহাম্মদপুর, ঢাকা থেকে
×