ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রাখাল চন্দ্র মিত্র

বই এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ

প্রকাশিত: ২০:৫১, ৮ এপ্রিল ২০২১

বই এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ

প্রতিভা জন্মায়। প্রতিভা বিকাশের জন্য লালন করতে হয়। তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার। শারীরিক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার জন্য যেমন ‘মেক আপ’ প্রয়োজন। মনের সৌন্দর্য বিকাশের জন্য তেমনি জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই। জ্ঞান লাভের জন্য বইপড়া ও বই মেলার আয়োজন হতে পারে উপযুক্ত মাধ্যম। জ্ঞান অর্জনের নির্দিষ্ট কোন বয়স সীমা নেই। শিশু-যুবা-বৃদ্ধ ও পেশা নির্বিশেষে সকলের বইপড়া উচিত। বইমেলা হতে পারে পাঠক, লেখক, কবি, সাহিত্যিক, প্রকাশকদের মিলন ক্ষেত্র। খুলে যেতে পারে জ্ঞানের সা¤্রাজ্য। নতুন বই লেখা ও প্রকাশনার মাধ্যমে প্রকাশনা শিল্পের উন্নতি ও সম্প্রসারণ হওয়া সম্ভব। প্রবাদ আছে বই কিনে কেউ কোন দিন দেউলিয়া হয় না। বই হচ্ছে ঘরের সবচেয়ে দামী আসবাবপত্র। প্রতি গ্রামে, পাড়া, মহল্লায় গ্রন্থাগার (লাইব্রেরি) স্থাপন করা উচিত। আনন্দে অবসর সময় কাটাবার উপযুক্ত মাধ্যম হতে পারে গ্রন্থাগার। বিজ্ঞজনরা বলেন লাইব্রেরির প্রয়োজন হাসপাতালের চেয়ে কোন অংশে কম নয়, বরং বেশিই। শারীরিক সুস্থতার জন্য যেমন হাসপাতালের প্রয়োজন। মানসিক সুস্থতার জন্য তেমন লাইব্রেরি অপরিহার্য। বই পড়ে সময় কাটালে মস্তিষ্কে শয়তানের আছর পড়ার সম্ভাবনা কম। সমুদ্রের নীল জলরাশি, আকাশের নীলিমা, মহাশূন্যে তারার মেলার যেমন কোন সীমা নেই তেমনি গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত পুস্তকে কালো অক্ষরে মুদ্রিত ও বিধৃত জ্ঞানরাশির পরিমাপ করাও সাধ্যের অতীত। মানুষের সীমিত জীবনে জ্ঞান সমুদ্রের গহিনে প্রবেশ করা দুঃসাধ্য। তাইতো মহামতি নিউটন বলে গেছেন, ‘জ্ঞান সমুদ্রে অবগাহন নয়, বেলাভূমে উপলক্ষ কুড়িয়ে ফিরছি মাত্র।’ করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও বইমেলা চলছে। সংক্রমণের ভয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা মেলার গাম্ভীর্যকে অনেকটাই ম্লান করে দিচ্ছে। তার পরেও মেলায় আসুন। বই কিনুন। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। ভাল বই নির্বাচন করুন। সুদৃশ্য প্রচ্ছদ, ঝকঝকে নির্ভুল ছাপার বই পড়ুন। অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করুন। কি বই পড়বেন? দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হোন, দেশের কথা, সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানুন। নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের জানতে সাহায্য করুন। বঙ্গবন্ধুকে জানতে তাঁর লেখা বই কিনুন, পড়ুন। পূর্বসূরিদের আত্মদানের কাহিনী জানুন। ভবিষ্যত প্রজন্মকে জানতে দিন। ধর্মীয় সাহিত্যের অধ্যাত্মবিষয়ক ও নীতি নৈতিকতা উদ্দীপক বই পড়ুন। সাম্প্রদায়িক হানাহানির উস্কানিমূলক, অপ্রেম, বিদ্বেষপ্রসূত, নিন্দাসূচক, সন্ত্রাস সৃষ্টির সহায়ক লেখা বর্জন করুন। নবী-রাসূল, অবতার পুরুষ, মহান মানুষের জীবনী গ্রন্থ পড়ুন। তাদের জীবন থেকে শিক্ষা নিন। শুধু শিক্ষার্থী-শিক্ষক-গবেষকরাই বই পড়বেন এমন নয়। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষার সময়। শিক্ষা ও কর্মজীবনের সর্বক্ষেত্রে বইয়ের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। জীবনের যে কোন পর্যায়ে বইয়ের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ার ধারণা আত্মঘাতী হতে বাধ্য। বই লেখা, কেনা, পড়া, প্রকাশ করা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের অন্যতম অনুঘটক। বর্তমানের ডিজিটাল প্রযুক্তির ই-লার্নিং পদ্ধতি বইয়ের বিকল্প হতে পারে না। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং জারি রাখা তাই অত্যন্ত জরুরী। জিগাতলা, ঢাকা থেকে
×