ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তরুণ প্রজন্ম বই ভালবাসুক শাহিদা আরবী

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ বইমেলা ও বই পড়া

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ৮ এপ্রিল ২০২১

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ বইমেলা ও বই পড়া

বইমেলা বাঙালীর প্রাণের উৎসব। প্রতিবছর বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠিত এই বইমেলা যেন মিশে আছে বাঙালীর সত্তায়। বই পড়ার দুর্নিবার নেশায় মেলায় আসা বইপ্রেমী পাঠকদের সমাগমে মুখরিত হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। লেখক পাঠকের এত চমৎকার সমাবেশ বইমেলা ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না। করোনা মহামারীর এই প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে এবারও আয়োজিত হয়েছে বইমেলা। প্রতিটি স্টল সেজেছে নতুন পুরাতন বইয়ের পশরায়। প্রতিদিনের সংসার মালিন্য ভুলে নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চারণের আশায় পাঠক হাজির হয় বইমেলায়। কেননা শুদ্ধবুদ্ধি জাগরণের একমাত্র উৎসই হলো বই। এ যেন মানবসত্তার এক অন্যতম প্রাণসত্তা। যা মানুষের অবসরের সঙ্গী, গড়ে দেয় অতীতের সঙ্গে বর্তমানের সেতুবন্ধন। প্রতিবছরই বইমেলায় পাঠক সমাবেশ থাকে চোখে পড়ার মতো। নতুন লেখক ও প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা বাড়লেও, কমে আসছে তরুণদের বই পড়ার প্রবণতা। এমন একটা সময় ছিল যখন মানুষ তার অবসরের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিত বই। বইয়ের প্রতিটি লাইনে মিশে থাকা ছোট ছোট অনুভূতিগুলো ছুয়ে যেত পাঠকহৃদয়। হুমায়ূন আহমেদের হিমু, রূপা কিংবা মিসির আলী চরিত্রগুলোকে মানুষ তার নিজ সত্তায় খুঁজে পেতে চেষ্টা করত। এমনকি নব্বই দশকের তরুণ প্রজন্মের কাছেও মাসুদ রানার গোয়েন্দা সিরিজ, জাফর ইকবাল ছিল এক ভালবাসার নাম। বাজারে নতুন প্রকাশিত কোন বই নিয়ে চলত বন্ধুমহলে তুমুল আলোচনা সমালোচনা। সেই আড্ডায় মুখরিত হতো ক্যাম্পাস। মাত্র দুই যুগের ব্যবধানে সেই দৃশ্যের এখন অনেকটাই ইতি ঘটেছে। সভ্যতার লড়াইয়ে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে বর্তমান প্রজন্ম বই পড়ার অভ্যাস থেকে অনেকটাই সরে এসেছে। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপসহ ইলেকট্রিক ডিভাইস নিয়ে দিন কাটানো প্রজন্মটা ভুলতে বসেছে সাহিত্যের কদর। শুধুমাত্র পাঠ্যসূচী ভিত্তিক পড়াশোনা, জ্ঞান আহোরণে অনীহা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি ক্রমেই তাদের মধ্যে এক ধরনের আত্মকেন্দ্রিকতার জন্ম দিচ্ছে। যা, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণের প্রধান অন্তরায়। বই মানুষের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায়। একটি সঠিক বই অনেক সময় বদলে দিতে পারে জীবনের গতিপথ। নিজেদের ভেতরের সুকুমার বৃত্তিগুলোর জাগরণ একমাত্র বই পড়ার মাধ্যমেই সম্ভব। শুধুমাত্র শিক্ষাজীবনের সাফল্য নয়, বই হোক আনন্দের খোরাক। নতুবা গতানুগতিক ধারা থেকে উত্তরণের কোন পথ নেই। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আবার বই পড়ার প্রবণতা তৈরি হোক। কেননা একমাত্র বই পারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে। তাদের সময় কাটুক সঠিক সঙ্গে। আলোক জীবন গড়ার প্রথম উপকরণ হোক বই। তবেই একটি মননশীল সুস্থ জাতি গড়ে উঠবে। গড়ে উঠবে একটি সুন্দর সমাজ। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা থেকে
×