ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুব্রত বিশ্বাস (শুভ্র)

শিশুর শিক্ষায় পরিবারের ভূমিকা

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ৭ এপ্রিল ২০২১

শিশুর শিক্ষায় পরিবারের ভূমিকা

শিশুরা বড়দের অনুকরণ করে। বড়রা কি করে তা দেখে দেখে শিশুরা সেটা শিখতে চেষ্টা করে। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তাই শিশুদের সঙ্গে পরিবারের সদস্য, বাবা-মায়ের আচরণ মার্জিত, সুন্দর এবং শিক্ষণীয় হওয়া আবশ্যক। শিশুদের সঙ্গে এমন কোন আচরণ করা যাবে না যা তাদের বিপথগামী করে অথবা তাদের কচি মনে খারাপ ধারণা তৈরি করে। শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। কাজেই আদর্শ সমাজ ও উন্নত পরিবেশে শিশুদের গড়ে তুলতে হবে। শিশুরা কেমন করে উন্নত চরিত্র এবং আদর্শের অধিকারী হতে পারে সে বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। শিশুদের আদর্শবাদ হিসেবে গড়ে তুলতে না পাড়লে আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব হবে না। যদি কারও চরিত্র নষ্ট হয়ে যায় তবে এর কারণে সে নিজেই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, বরং এ ক্ষতির প্রভাবে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের অকল্যাণ ডেকে আনবে। কাজেই শিশুদের চরিত্র গঠনে অভিভাবকদের সদাসচেতন থাকা আবশ্যক। প্রত্যেক পিতা-মাতারই প্রয়াস থাকে যে, তাদের সন্তানরা যেন কোন প্রকার কষ্ট না পায়। অন্ততপক্ষে তাদের কোন প্রকার অভাব-অনটন না দেখা দেয়। পার্থিব সীমিত ও ক্ষণস্থায়ী জীবনে সন্তানের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা চিন্তা করলেও পরবর্তী অনন্ত জীবনে সন্তান সুখে থাক এ চিন্তা খুব কম পিতা-মাতাই করে থাকেন। অথচ এ কথা পিতা-মাতাকে সর্বাগ্রে খেয়াল রাখা প্রয়োজন ছিল। সন্তানরা যেন পরকালে কোন কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রত্যেক পিতা-মাতারই কর্তব্য। নরম কাদামাটি সদৃশ শিশুরা শৈশবে যে পরিবেশে বেড়ে ওঠে তার প্রভাব তার জীবনে স্থায়ী হয়ে যায়। এ কারণে পরিবার হচ্ছে শিশুর প্রথম বিদ্যালয়। এ সময় পিতা-মাতা নিজেদের ব্যক্তিত্ব দিয়ে এবং ধর্মীয় নির্দেশনার মাধ্যমে তাদের প্রতিপালন করবেন। মানব শিশুর বেড়ে ওঠার প্রাথমিক কালগুলোকে সাধারণত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বে ভাগ করা যায়। যথা- শিশুকাল, কিশোরকাল এবং যৌবনকাল। সাত বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকাল ধরা হয়। এ সাত বছর শিশু সম্পূর্ণ স্বাধীন অর্থাৎ এ সময়ে সে যা কিছু মনে চায় তাই করবে। এভাবে শিশু প্রথম সাত বছর কাটিয়ে দ্বিতীয় সাত অর্থাৎ আনুগত্য ও আদেশ পালন করার পর্বে উপনীত হবে। এ পর্বে শিশুকে আর স্বাধীনভাবে কর্তৃত্ব করতে দেয়া হবে না। বরং তাকে পিতা-মাতা বা অন্যান্য গুরুজনের কথা মেনে চলতে হবে। এ সময় থেকে চৌদ্দ বছর পর্যন্ত যদি একটি শিশু যথাযথ নির্দেশনা মেনে বেড়ে ওঠে তাহলে তৃতীয় সাত বছর অর্থাৎ একুশ বছর বয়সকাল পর্যন্ত শিশুটি হয়ে উঠতে পারে সংসার পরিচলনায় পিতা-মাতার একজন যথার্থ সহযোগী। শৈশবকালের প্রথম পর্বে পিতা-মাতার আচরণগত ত্রুটিই যুব সমাজের অধিকাংশ সমস্যার জন্য দায়ী। পিতা-মাতা সন্তানের অত্মিক ও মনস্তাত্ত্বিক চাহিদাগুলোর প্রতি কোনরকম মনোযোগ না দেয়ার কারণে সন্তানও পিতা-মাতার প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়ে। আর পিতা-মাতার ওপর সন্তান যদি আস্থা, বিশ্বাস ও নির্ভর করতে না পারে তাহলেই পিতা-মাতার সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এ দূরত্ব সন্তানকে বিপথগামী করে ফেলে। তাই সন্তানকে ভালবাসতে হবে। তার আত্মিক এবং মনস্তাত্ত্বিক চাহিদাগুলো পূরণের ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে। তার বেড়ে ওঠার যথার্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি শিশুর ভবিষ্যত যে পিতা-মাতার ওপর নির্ভর করে তা মনে-প্রাণে উপলব্ধি করতে হবে। শিশুদের সমস্যাগুলো এড়াতে পিতা-মাতা তথা পরিবারের সকলের করণীয় : * সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করা। * সন্তানের চাহিদাগুলো পূরণে সচেষ্ট হওয়া। * সন্তানের জন্য একটা সময় নির্দিষ্ট করা। তার সমস্যা, তার কৌতূহলের যথাযথ উত্তর দেয়া। * শিশুর জন্য যেসব জিনিস ক্ষতিকর সেসব জিনিস তার হাতের নাগালে না রাখা। * শিশুর ওপর খবরদারি করা থেকে বিরত থাকা। এটা কর না, ওটা ধর না, এটা কর, সেটা ধর- এসব ব্যবহার শিশুর সঙ্গে না করা। এসব করলে শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়। * শিশুরা প্রকৃতিগতভাবে কৌতূহলী। তাই শিশুদের সামনে এমন কোন জিনিস বের করা উচিত নয় যা হারালে বা ভেঙ্গে ফেললে পুরো জিনিসটা নষ্ট হয়ে যাবে। * শিশুদের সঙ্গে কখনও উচ্চৈঃস্বরে বা রাগত সুরে কথা বলা উচিত নয়। তাদের আদর করে মিষ্টি সুরে বুঝিয়ে বলা। * সন্তানের সঙ্গে সবসময় বন্ধুসুলভ ব্যবহার করা। লেখক : কাউন্সিলর, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় [email protected]
×