অনলাইন ডেস্ক ॥ জর্ডানের সাবেক যুবরাজ হামজা বিন হুসেইন দেশটির বাদশা আব্দুল্লাহ ও সংবিধানের প্রতি অনুগত থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানান বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
শনিবার হামজা তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন; পরদিন জর্ডানের উপপ্রধানমন্ত্রী আয়মান সাফাদি সাবেক যুবরাজের বিরুদ্ধে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার অভিযোগ এনেছিলেন।
এ নিয়ে উত্তেজনা প্রশমনে বাদশা তার চাচা রাজপুত্র হাসানকে সহযোগিতা করার অনুরোধ করেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সোমবার জর্ডানের রাজপ্রাসাদ থেকে প্রকাশিত ৪১ বছর বয়সী হুসেইনের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আমি নিজেকে বাদশার হাতে সমর্পণ করছি। জর্ডানের প্রিয় হাশেমি রাজত্বের সংবিধানের প্রতি আমি অনুগত থাকব।”
রাজপুত্র হামজা তার বিরুদ্ধে ওঠা দেশবিরোধী চক্রান্তের অভিযোগও অস্বীকার করেছেন।
আন্তর্জাতিক একটি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, রাজপরিবারের বন্ধু ও পেশাদার মধ্যস্থতাকারী মালিক দাহলান পৃথক এক বিবৃতিতে দু’পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা সফল হয়েছে এবং দ্রুতই একটি সমাধান আসতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
সৎ ভাই হামজাই এক সময় বাদশা আব্দুল্লাহর পর সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ছিলেন; ২০০৪ সালে তাকে যুবরাজের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে আব্দুল্লাহ তার ছেলেকে ওই পদে বসান।
মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটির রাজপরিবারের ভেতরকার দ্বন্দ্বের খবর মাঝে মাঝে গণমাধ্যমে এলেও রাজপুত্র হামজা ও বাদশা আব্দুল্লাহর মধ্যে দ্বৈরথের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার ঘটনা নজিরবিহীন।
শনিবার বিবিসিকে পাঠানো দুটি ভিডিওতে প্রিন্স হামজা জর্ডানের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অযোগ্যতা ও হয়রানি করার অভিযোগ আনেন।
কথিত একটি অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশটির বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের পর তিনি ওই ভিডিওদুটি পাঠান।
জর্ডানের সামরিক বাহিনী পরে জানায়, দেশের ‘নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা’ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে দূরে থাকতে হামজাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজপুত্র হামজা স্থানীয় বিভিন্ন গোষ্ঠী নেতাদের সঙ্গে দেখা করার পর তাকে ‘গৃহবন্দি’ করা হয় বলে ধারণা। বলা হচ্ছে, এই নেতাদের মধ্যে হামজা কিছুটা সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
রাজপুত্র হামজা বিদেশি বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করেছিলেন বলে রবিবার অভিযোগ করেন জর্ডানের উপপ্রধানমন্ত্রী সাফাদি ।
“বেশ কিছু সময় ধরে তার(হামজা) উপর নজর রাখা হচ্ছিল,” বলেন উপপ্রধানমন্ত্রী।
চক্রান্তে জড়িত থাকার অভিযোগে বাদশা আব্দুল্লাহর সাবেক এক উপদেষ্টা ও রাজপরিবারের এক সদস্যসহ অন্তত ১৬ জনকে আটক করার কথাও জানান সাফাদি। আটককৃতদের মধ্যে সামরিক বাহিনীর কেউ নেই বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা দেশগুলোর অন্যতম মিত্র জর্ডানে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র বিদ্যমান। দেশটিতে উচ্চপদস্থ রাজনীতিকদের আটকের ঘটনা বিরল।
মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশে বাদশার হাতে ব্যাপক ক্ষমতা আছে। তিনি সরকার নিয়োগ, আইন অনুমোদন ও পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন।
মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটির প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থাকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সরকারের এ পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
হামজা জর্ডানের প্রয়াত বাদশা হুসেইন ও তার প্রিয় স্ত্রী রানি নূরের বড় ছেলে। যুক্তরাজ্যের হ্যারো স্কুল ও রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি, স্যান্ডহার্স্টের গ্র্যাজুয়েট হামজা যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেছেন। তিনি জর্ডানের সশস্ত্র বাহিনীতেও দায়িত্বপালন করেছেন।
বাদশা হুসেইনের প্রিয় সন্তান হামজাকে ১৯৯৯ সালে জর্ডানের যুবরাজ ঘোষণা করা হয়েছিল। হুসেইনের মৃত্যুর পর হামজাকে কম বয়স ও অনভিজ্ঞ বিবেচনা করে উত্তরাধিকারী ঘোষণা করা হয়নি। তার বদলে আব্দুল্লাহ জর্ডানের বাদশা হন।
২০০৪ সালে বাদশা আব্দুল্লাহ হামজার যুবরাজ খেতাব কেড়ে নেন। এখন আব্দুল্লাহর ২৬ বছর বয়সী ছেলে হুসেইন দেশটির যুবরাজ।