ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরোয়া ফ্যাশনে ঐতিহ্য

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ৫ এপ্রিল ২০২১

ঘরোয়া ফ্যাশনে ঐতিহ্য

বৈশ্বিক মহামারী করোনার মধ্যেই এলো বাঙালীর প্রাণের উৎসব, পহেলা বৈশাখ। বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। নতুন বছরকে বরণের উৎসব। প্রতিবছর এই উৎসব ঘিরে চলে কত না আয়োজন! নতুন পোশাক, ইলিশ-পান্তা ভাত, কত রকম ভর্তা খাওয়া হবে তার পরিকল্পনা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা, ছায়ানটের সম্মিলিত কণ্ঠে বর্ষবরণসহ কত আয়োজন। আর এ উৎসবের মূলে থাকে ঝাকে ঝাকে তরুণ-তরুণীর ঘুরে বেড়ানো, নানা বয়সী মানুষের পদচারনায় মুখরিত থাকে সারাদিন। কালবৈশাখীর মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বের হয়ে যায় দলে দলে। রঙিন পোশাক আর ফুলের গয়নায় সেজে, গান গেয়ে, হেসে-খেলে মাতিয়ে তোলে শহর-বন্দর-জনপদ। তবে এবারের পহেলা বৈশাখ অন্যবারের মতো উদযাপন করা যাবে না। করোনা সংক্রমণের উর্ধগতি তাই সামাজিক নানা অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকাই ভাল। বেশিরভাগ আয়োজনই হবে বাড়িতে। অতিথি আপ্যায়নেও সচেতন হতে হবে। মুখে মাস্ক থাকতেই হবে। ঘরোয়া ফ্যাশনে ঐতিহ্য ও হাল ফ্যাশনের ধারায় সমন্বয় থাকতে পারে। সাদা আর লাল বৈশাখের ট্রেডমার্ক রং। তাই পোশাক হোক সাদা-লালে। নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোর সকলের পোশাক হোক লাল সাদায়। নারীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়ির সাথে মিলিয়ে কপালে লাল টিপ, লাল চুড়ি থাকতেই পারে। এরসঙ্গে সামান্য মেকাপ রমণীকে করে তোলে অন্যান্য। মুখের সাজের বেশির ভাগটাই ঢাকা পড়ে যাবে। বিশেষ করে ঠোঁটের লাল লিপস্টিক। ঠোঁটের লাল এবার ঢাকা থাক, বরং বাড়ুক পোশাকের লাল। সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায়, এবার সবকিছুতেই ছাড় দিতে হবে। তেমনি ছাড় দিতে হবে সাজগোজেও। আর একটি বিষয় জানিয়ে রাখা প্রয়োজন। এবার পহেলা বৈশাখের দিন হতে পারে রমজান মাসেরও প্রথম দিন। সে বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে সাজগোজের ক্ষেত্রে। শুধু সাজগোজ নয়, বাঙালীর উৎসব মানেই খাবারদাবারের অফুরন্ত আয়োজন। চাঁদের ওপর নির্ভর করে রোজা যদি শুরু হয়ে যায়, তাহলে খাবারদাবারের ক্ষেত্রেও আনতে হবে পরিবর্তন। সে ক্ষেত্রে খাবারদাবারের আয়োজন হবে রাতে। রাতের মেকআপে বেস ব্যবহার দিনের চেয়ে ভারি হতে পারে। ঠোঁটে পোশাকের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে লাল বা বেরি রং বেছে নেওয়া যেতে পারে। এ সময় ব্লাশন ও চোখের শেড গাঢ় হলেও সমস্যা নেই। তবে এবার চোখকে প্রাধান্য দিন। চোখ হোক স্মোকি কিংবা ন্যাচারাল শেডের ছোঁয়ায় স্নিগ্ধ। কুর্তা, ফতুয়া, স্কার্ট ও ধুতি-পায়জামার সঙ্গে চুল সামনে একটু পাফ করে নিয়ে পনিটেল বা স্টাইলিশ কোন বেণি করে নিতে পারেন। বৈচিত্র্য আনা যেতে পারে গয়নাতেও। রঙিন পুঁতি বা কাপড়ের মালা কেউ চাইলে মাথায়ও ব্যবহার করতে পারেন। সাদামাটা শাড়ির সঙ্গে রঙিন গয়না পরে সামঞ্জস্য আনা যেতে পারে। শাড়িটি যদি হয় রংচঙে, তাহলে মেকআপ ও গয়নার রং হালকা হলেই ভাল দেখাবে। সাজে ঐতিহ্য ও হাল ফ্যাশনের ধারায় সমন্বয় থাকতে পারে। শাড়ি বা কামিজে দেশি নকশা থাকলেও চুলটা ছিমছাম ও ট্রেন্ডি ধাঁচে বেঁধে নিতে পারেন। অথবা চুলটা উঁচু করে বেধে ব্যবহার করতে পারেন কোন এ্যাকসেসরিজ। মাস্কের নকশাতেও এসেছে ফ্যাশনের ছোয়া। পোশাকের সঙ্গে ব্যবহার করুন মানানসই মাস্ক। সেটাই আপনার ফ্যাশন চেতনার বড় আকর্ষণ হয়ে উঠতে পারে এবারের পহেলা বৈশাখে। যেখানেই থাকুন একাধিক মানুষ একত্রিত হলেই মাস্ক ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। পুরনোকে পেছনে ফেলে নতুন পোশাকে পহেলা বৈশাখের নতুন দিন শুরু হোক। কোন অদৃশ্য শত্রু যেন পহেলা বৈশাখের আগমনী আনন্দ বিলীন করতে না পারে। এই প্রত্যাশায় কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বৈশাখ আহ্বান’ কবিতার মাধ্যমে আহ্বান জানাচ্ছি বৈশাখকে। ‘এসো এসো, এসো হে বৈশাখ তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক... যাক পুরাতন স্মৃতি যাক ভুলে যাওয়া গীতি অশ্রু বাষ্প সুদূরে মিলাক।’ মডেল : শম্পা, সেলিম ও সানাই শাড়ি : কারপাস সালোয়ার কামিজ ও পাঞ্জাবি : কাপড় ই বাংলা মেকআপ : ওমেন্স ডল
×