ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নারীর ভাবনা

প্রকাশিত: ২০:১০, ৪ এপ্রিল ২০২১

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নারীর ভাবনা

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পৃথিবীর বুকে জন্ম হয় লাল সবুজের পতাকা শোভিত ছোট্ট এক রাষ্ট্রের। নাম তার বাংলাদেশ। এরপর দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতি পেয়েছিল তার কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। মহান মুক্তিযুদ্ধে সে সময়ের নারীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্বাধীনতার ৫০ বছরের সুদীর্ঘ পথচলায় নারীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি কতটুকু? সুবর্ণজয়ন্তীতে তাদের স্বপ্নই বা কী? বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীর এসকল ভাবনার কথাই তুলে ধরেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী- মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান রাকিব ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রায় ২ লাখ মা-বোন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও আমরা এ সকল বীরাঙ্গনাদের প্রকৃত সম্মান দিতে পারিনি। তাছাড়া এখনও আমাদের দেশ নারীদের জন্য নিরাপদ নয়। প্রতিদিনই একাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। বাল্যবিবাহ এবং যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। এসকল ঘটনা বন্ধে সরকার সচেষ্ট হলেও আমরা কার্যকরী ফল দেখতে পাচ্ছি না। বিশেষ করে ধর্ষণের মতো অপরাধে দ্রুত সময়ে বিচার হওয়া প্রয়োজন। এই সকল দিক বিবেচনা করে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এমন একটা বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছি যেই বাংলাদেশে নারীরা নিরাপদ থাকবে, ঘরে-বাইরে সকল ক্ষেত্রে মানুষ হিসেবে সমান মূল্যায়ন পাবে। সুমাইয়া আক্তার তারিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতার ৫০ বছরে সত্যিকার অর্থে নারী উন্নয়ন কতটা হয়েছে সেটা অনেক বড় প্রশ্ন। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নারীদের বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। সামাজিক এবং ধর্মীয় কুসংস্কার নারীর অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিচ্ছে। সমান সুযোগ তো অনেক পরের ব্যাপার, নারীরা তাদের সাধারণ প্রাপ্যটুকুও পাচ্ছে না। নারী নির্যাতনে বিশ্বে বাংলাদেশের র‌্যাংকিং দেখলেই বোঝা যায় এদেশের নারীরা বাস্তবিক অর্থে কেমন আছে! নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ। নারী বিদ্বেষী চিন্তাভাবনার মানুষের সমাজে নারী উন্নয়ন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তাই মানসিকতার পরিবর্তন অনেক বেশি জরুরী। এছাড়া মেয়েদেরকেও মানসিকভাবে শক্ত হতে হবে। স্বনির্ভর এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে। সত্যিকারের নারী উন্নয়ন হোক স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এমনটাই প্রত্যাশা করছি। মুমতা হেনা মীম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। আদৌ কি স্বাধীনতা পেয়েছে নারী? স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হলেও স্বাধীন হতে পারেনি নারী। পরিবারে-সমাজে আজও তাকে হতে হয় বৈষম্যের শিকার। দেখা হয় ভিন্ন চোখে। এ সমাজে আজও কন্যাসন্তানের জন্মকে ভয় পায়। এই সমাজই নারীকে পণ্য করে। এ সমাজেই যৌতুক ব্যতীত হয় না কন্যা সম্প্রদান। এ সমাজেই নারী হয় ধর্ষিতা! যখনই কোন নারী সমাজের কাঠামোকে মানতে নারাজ হন, তখনই সেই তাকে অপদস্থ করতে তথাকথিত আধুনিক শিক্ষিত মানুষেরাও শ্রেণীকক্ষের আরোপিত শিক্ষা ভুলে নিজেদের রুচির পরিচয় দেন। এতে প্রগতির গতি শ্লথ হলেও মেয়েদের সমানাধিকার দেওয়ার সাহস কয়জনের আছে? সমান অধিকার কি আদৌ নিশ্চিত হয়েছে? তবে কেন কন্যা সন্তানের জন্ম চিন্তার রেখা ফেলে পিতার কপালে? তবে কেন পুত্রকেই বংশের প্রদীপ হিসেবে বিবেচনা করে মেয়েদের বঞ্চিত করা হয়? তবে কেন শ্বশুর বাড়ির অত্যাচারে আত্মহত্যা করতে হয় বহু মেয়েকে? উত্তর নেই। সর্বোপরি এ দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তুলতে নারী-পুরুষ বৈষম্য নিরসন হোক। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এটাই আমাদের একান্ত প্রত্যাশা। নুসরাত তন্দ্রা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া নারী। দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর এই শব্দটার ভারত্ব কি আরেকটু বেড়েছে? নারীদের পদচারণায় কি আরেকটু ঝঙ্কার এসেছে? উত্তর হয়ত হ্যাঁ। নারীরা চার দেয়ালের বাইরে বেমানান এমন বদ্ধমূল ধারণা অনেকাংশে কমে গেছে। একটা সময়ে নারীরা সাহিত্যচর্চা করছে শুনে অনেক পুরুষেরই মনোভাব ছিল আরশোলার পাখি হওয়ার ইচ্ছে হয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস নায়িকা প্রধান, তাঁর নায়িকারা আত্মশক্তি এবং গরিমায় নায়কদের ছাপিয়ে গেছে। তারপরও বঙ্কিমচন্দ্রের কমলাকান্ত বলেছিলেন ‘নারিকেলের মালা বড় কাজে লাগে না, স্ত্রীলোকের বিদ্যাও বড় নয়। রবীন্দ্রনাথেরও হাতে গোনা কিছু নারীর হাতে ঢাল তলোয়ার চড়েছে। বাকিরা পুরুষদের ঘরের লক্ষ্মী আর সুন্দরী প্রেমিকায় সীমাবদ্ধ। আর এ যুগে নারীর হাত রান্নাঘর যেমন সামলাচ্ছে তেমনি কলম, অস্ত্র, বিদ্যা সবই সামলাচ্ছে। তারা ঘর ছেড়ে বের হচ্ছে, কর্মমুখী হচ্ছে। আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে। মূলত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যদি পরিবর্তন না আনা যায় তাহলে আইন ও নীতিমালা তৈরি করেও কোন কাজে আসবে না। সত্যি বলতে স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে নারীরা এগিয়েছে অনেক তবে এখনও তার অনেকটা পথ বাকি। তাই নারী পুরুষ ছাপিয়ে মানুষ পরিচয়ই হোক সবার আসল পরিচয় এমনটাই প্রত্যাশা স্বাধীনতার এই সুবর্ণজয়ন্তীতে।
×