ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেড় যুগেও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি বগুড়া বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদ কমপ্লেক্স

প্রকাশিত: ২১:০৬, ৩ এপ্রিল ২০২১

দেড় যুগেও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি বগুড়া বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদ কমপ্লেক্স

সমুদ্র হক ॥ কথা ছিল মসজিদটি হবে দৃষ্টিনন্দন বহুমুখী কমপ্লেক্স। সাধারণ মানুষ মসজিদটি দেখে পাপবোধ দূর করে মন পরিষ্কার করে নামাজের পথে আসবে। বগুড়া নগরীর কেন্দ্রস্থল সাতমাথা থেকে স্টেশন রোড ধরে হাঁটার দূরত্বে নির্মিত হয় নামাজ কায়েম করার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। নাম দেয়া হয় ‘বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদ’। প্রায় দেড় যুগেও মসজিদটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। অর্ধেক কাজ হওয়ার পর আর কোন অগ্রগতি নেই। ২০০৮ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক হুমায়ূন কবির অর্ধ সমাপ্ত মসজিদে নামাজ আদায়ের উদ্যোগ নেন। মসজিদের ভেতরে কিছু কাজ করে ওই বছর (২০০৮) জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখ শুক্রবার জুমার নামাজ কায়েমের মাধ্যমে মুসল্লিদের নামাজের জন্য উদ্বোধন করা হয়। এরপর মসজিদের অভ্যন্তরীণ কিছু কাজ করা হয়। তারপর মানুষের দানে কিছু বৈদ্যুতিক পাখা, আংশিক সাউন্ড সিস্টেম ও কার্পেট হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নে আর কোন কাজই হয়নি। তবে এক বছর আগে মসজিদের সামনের জায়গায় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা খাদেমরা ফুলের বাগান করেছে। এক ব্যক্তি চারধারে কিছু ফেন্সি বাতি লাগিয়ে তার মধ্যে ফোয়ারা বানিয়ে দিয়েছেন। করোনাকালে এই ফোয়ারাও বন্ধ। বহুমুখী কমপ্লেক্স নির্মাণের লক্ষ্যে মসজিদের চারধারে ওপর তলায় ওঠার যে সুপরিসর সিঁড়ি নির্মিত হয়েছে তার একটিও ব্যবহার হয় না। তিন দিকের সিঁড়ি অপরিচ্ছন্ন। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় কালো রং হয়েছে। বৃষ্টিতে শ্যাওলা জমেছে। নিচে ঝোপঝারের মতো আগাছা জন্মেছে। সিঁড়ির ওই স্থানে কোন বাতি নেই। তিনটি সিঁড়ির নিচে মাদকাসক্তরা লুকানোর নিরাপদ জায়গা মনে করে রাতে আখড়ায় পরিণত করেছে। স্টেশন রোডের উত্তরধারের সিঁড়িটি মোটামুটি পরিষ্কার তবে সন্ধ্যার পর সেখানেও মাদকসেবীরা জড়ো হয়। হালে এক শ্রেণীর দুষ্টু প্রকৃতির তরুণরা সিঁড়ির ওপরে বসে মাদকের নেশার সঙ্গে স্মার্টফোনে দুষ্টুমির নেশা করে। বায়তুর রহমান মসজিদের আয়তন ২৫ হাজার ৬শ’ বর্গফুট। আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর প্রকল্পে আছে ৭ হাজার ৩শ’ ৫০ জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। দোতলার ৭ হাজার ২শ’ বর্গফুট অংশে নামাজ আদায় হবে। নিচতলায় থাকবে পাঠাগার, মহিলাদের নামাজের জায়গা ও মাহফিলের স্থান। এখানে তিন শ’ মহিলা নামাজ আদায় করতে পারবেন। নিচতলায় স্বল্পপরিসরে কোন রকমে পাঠাগার স্থাপিত হয়েছে। আরেক অংশে পাঁচ ওয়াক্ত ও জুমার নামাজ আদায় করা হয়। ওপর তলায় নামাজের কোন ব্যবস্থা হয়নি। পবিত্র রমজান মাসে জুমার নামাজে নিচতলায় মুসল্লিদের স্থান সঙ্কুলান না হলে ওপর তলায় চাদর বিছিয়ে নামাজের আয়োজন করা হয়। মসজিদের গম্বুজটি দীর্ঘদিন ফাঁকা থাকার পর জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি (প্রয়াত) মমতাজ উদ্দিন উদ্যোগ নিয়ে নির্মাণ করেন। তবে তা নক্সা অনুযায়ী হয়নি। ৫৪ ফুট ব্যাসার্ধের একটি সাধারণ গম্বুজ হয়েছে। প্রকল্পে ছিল এই চূড়ায় মুসলিম স্থাপত্যকলায় গম্বুজ ও বিশেষ ধরনের কাঁচ থাকবে, যা নামাজের স্থানকে দিনের আলোয় স্নিগ্ধভাবে আলোকিত করবে। কিছুটা জায়গা এমনভাবে ফাঁকা রাখা হবে যাতে গ্রীষ্ম মৌসুমে মুসল্লিরা প্রকৃতির বাতাস গায়ে মাখতে পারেন। কথা ছিল মসজিদের নিচতলার তিন ধারে ১৭ হাজার ৪শ’ বর্গফুট আয়তনের খোলা চত্বরে ঈদের নামাজ আদায়ের ঈদগাহ বানানো হবে। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সূত্রের কথা, নক্সা অনুযায়ী মসজিদটি এ ও বি দুই জোনে বিভক্ত। এ জোনের অংশে মসজিদের মূল ভবন। যার ওপর দ্বিতল অংশ থাকবে সরাসরি। নিচতলায় সিঁড়ি ছাড়াও ৬ হাজার বর্গফুট এবং দোতলায় ৭ হাজার ২শ’ বর্গফুট। নামাজ আদায় হবে দোতলায়। বি জোনে থাকবে মহিলাদের নামাজের ব্যবস্থা। আরেক ধারে ওজু খানা। শৌচাগার। বি জোনেই থাকবে বড় লাইব্রেরি ও তার ধারে সেমিনার কক্ষ। এ ও বি দুই জোনের কাজ ঠিকমতো হয়নি। এখনও অনেক কাজ বাকি। বর্তমানে বি অংশের এক ধারে নামাজের স্থান। বাকি অংশের কিছু জায়গা ইসলামী ফাউন্ডেশনের শাখা করা হয়েছে। সূত্র জানায়, এ যাবত ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। নক্সা অনুযায়ী কাজ করতে আরও অর্থ দরকার। এর আগে মসজিদ উন্নয়নকল্পে কথা হয়েছিল ঢাকার বায়তুল মোকাররমের মতো করে মসজিদের চারধারে মার্কেট নির্মাণ করে দোকান ভাড়া দিয়ে সেই অর্থে দিনে দিনে মসজিদের উন্নয়ন করা হবে। এই কাজ আর এগোয়নি। মসজিদকে ঘিরে চারধারে সিঁড়ি বানানো হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। যা কোন কাজেই আসছে না। মসজিদকে ঘিরে যে বড় পরিকল্পনা ছিল তাও কার্যত ভেস্তে যেতে বসেছে।
×