ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টাকার অঙ্কে ৬৩ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা

এক বছরে শিল্প ঋণ বিতরণ কমেছে ১৫ শতাংশ

প্রকাশিত: ০১:১৮, ৩১ মার্চ ২০২১

এক বছরে শিল্প ঋণ বিতরণ কমেছে ১৫ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনা মহামারীতে কমে গেছে ব্যবসা-বাণিজ্য। নানা অনিশ্চয়তায় নতুন বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না উদ্যোক্তারা। তাই কমেছে ঋণের চাহিদা। যে কারণে শিল্প খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণ কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গতবছর এ খাতে মোট তিন লাখ ৬১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ হয়েছে। ২০১৯ সালে বিতরণের পরিমাণ ছিল চার লাখ ২৫ হাজার ৮২ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে বিতরণ কমেছে ৬৩ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা বা ১৫ শতাংশ। পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গতবছর মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ ও প্রাদুর্ভাবের সময়ের শুরুর দিকে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ যে হারে কমেছিল, শেষদিকে সরকারের বিশেষ প্রণোদনার ঋণ প্রবাহ বাড়ায় সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। করোনা মোকাবেলা ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সিএমএসএমই, শিল্প ও সেবাসহ বিভিন্ন খাতে গতবছরের ২৫ মার্চ পাঁচ হাজার কোটি, ৫ এপ্রিল ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি এবং পরে আরও ২৩টি প্যাকেজে মোট ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলো এক লাখ ৫৩৪ কোটি টাকার শিল্প ঋণ বিতরণ করেছে। আগের বছর একই প্রান্তিকে যার পরিমাণ ছিল এক লাখ ১১ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা। ওই হিসাবে ডিসেম্বর প্রান্তিকে আগের বছরের তুলনায় শিল্প ঋণ বিতরণ কমেছে ১১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গতবছর জুন ও সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শিল্প ঋণ বিতরণের হার আরও কম ছিল। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণ বিতরণের পরিমাণ গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ১২ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমে ৯৪ হাজার ৮৫০ কোটি টাকায় নামে। জুন প্রান্তিকে ৩৫ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ৭৪ হাজার ২৫৭ কোটি টাকায় নামে। তবে করোনার প্রভাব শুরুর আগে মার্চ প্রান্তিকে ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়ে ৯১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়। ২০২০ সালে শিল্প খাতে বিতরণের পাশাপাশি ঋণ আদায় ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ কমে তিন লাখ ১৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকায় নেমেছে। আগের বছর যেখানে আদায় ছিল তিন লাখ ৫০ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। মূলত করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর গত জুন ও সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাপকভাবে আদায় কমে যাওয়ার প্রভাবে এমন হয়েছে। তবে গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে আদায় ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে ৯২ হাজার ৭১৭ কোটি টাকার ঋণ আদায় হয়। আগের বছরের একই সময়ে আদায়ের পরিমাণ ছিল ৮৯ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে শিল্প খাতে ব্যাংকগুলোর বকেয়া স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৭২ হাজার ৩৫২ কোটি টাকায়। আগের বছর শেষে যার পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। ফলে বকেয়া স্থিতি বেড়েছে ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। বকেয়া স্থিতি এ হারে বাড়লেও শিল্প খাতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ মাত্র শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে ৪৫ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা হয়েছে। ২০১৯ সাল শেষে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৫ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। মূলত ২০২০ সালে কেউ ঋণ পরিশোধ না করলেও খেলাপী হবে না- এমন সুবিধার কারণে বকেয়া অনেক বাড়লেও খেলাপী ঋণ সেভাবে বাড়েনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শিল্প ঋণ কমে যাওয়াটা মোটেও ভাল না। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য আর ট্রেডিংয়ে ঝুঁকলে লাভ হবে না। কর্মসংস্থান ও ভবিষ্যত উন্নয়ন সহায়ক হিসেবে শিল্প বাড়াতে হবে। করোনার কারণে গতবছর উৎপাদনমুখী শিল্পে বিনিয়োগ কম ছিল। এটা একটা কারণ। এছাড়া ব্যাংকাররা অল্প সময়ে লাভ খোঁজেন। যেমন এলসিতে বিনিয়োগ করলে এক-দেড় মাসের মধ্যে লাভ পাওয়া যায়। পাশাপাশি সার্ভিস ও ট্রেডিং ব্যবসায় তারা বেশি আগ্রহ দেখায়। যাই হোক অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হলে শিল্প ঋণ বাড়াতে হবে। শুধু বড় শিল্প নয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের ঋণেও জোর দিতে হবে। বিশেষ করে শিল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশের এই বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে বলে তিনি জানান। জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনায় বড় শঙ্কা ঋণ বিতরণ কমে গেছে। আমানত আসছে কিন্তু ঋণ দেয়া যাচ্ছে না। রফতানি কমেছে। উদ্যোক্তারা পরিস্থিতি না বুঝে নতুন বিনিয়োগে আসতে চাচ্ছেন না। এটা বড় চ্যালেঞ্জ। ঋণ বাড়ানোর বিষয়ে আমরা চেষ্টা করছি। কারণ টাকা ফেলে রাখলে তো হবে না। বিনিয়োগ করতে হবে।
×