ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদেশী ঋণ সহায়তা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০১:১৭, ৩১ মার্চ ২০২১

বিদেশী ঋণ সহায়তা বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনা মহামারীর মধ্যে বিদেশী ঋণের গতি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বিদেশী ঋণ সহায়তা পাওয়া গেছে ৬ শতাংশের বেশি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিদেশী ঋণ এসেছে ৩৭২ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। গতবছরের একই সময়ে ঋণ ছাড় হয়েছিল ৩৪৯ কোটি ডলার। অর্থাৎ গতবছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণ বেড়েছে ২৩ কোটি ডলার বা ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। জানুয়ারি পর্যন্ত এটি নেতিবাচক ছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক, জাইকাসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরা সাম্প্রতিক সময়ে তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় করায় ঋণের প্রবাহ বেড়েছে।’ আগামীতে এটি আরও বাড়বে বলে জানান তিনি। চলতি অর্থবছরের আট মাসে যে পরিমাণ সহায়তা পাওয়া গেছে এর মধ্যে ঋণ ৩৬১ কোটি ডলার। বাকি ১১ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। চলতি অর্থবছরে বিদেশী উৎস থেকে ঋণ-অনুদান মিলে মোট সহায়তা পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। পরে সেটি সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্থবছরের আট মাসে এসেছে ৫০ শতাংশের বেশি। বাকি চার মাসে অবশিষ্ট অর্থ আসবে বলে আশা করছেন ইআরডির কর্মকর্তারা । দুটি উৎস থেকে বাজেট বাস্তবায়ন করে সরকার। এগুলো অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশী ঋণ। বর্তমানে বাজেটে অর্থায়নের প্রায় ৩২ শতাংশ আসে বিদেশী ঋণ থেকে। মূলত উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে অর্থায়ন করে উন্নয়ন সহযোগীরা। এর বাইরে বাজেট সহায়তাও দিয়ে থাকে। এ বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আকার ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে বিদেশী ঋণের অংশ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। ফলে বিদেশী ঋণ নির্ভরশীলতা কমলেও বাজেট বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগীরা এখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বেসরকারী গবেষণা সংস্থা পিআরআই ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাজেট অর্থায়নে বিদেশী ঋণের নির্ভরশীলতা কমলেও এখনও উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা দরকার রয়েছে। বিদেশী ঋণের অংশ কমিয় আনতে হলে আমাদের নিজস্ব সম্পদ তথা রাজস্ব আদায়ে আরও বেশি জোর দিতে হবে।’ বাংলাদেশ এখনও সস্তায় বিদেশী ঋণ পাচ্ছে। বহুজাতিক সংস্থা হিসেবে বিশ্বব্যাংক সবচেয়ে বেশি ঋণ দিচ্ছে বাংলাদেশকে। আর একক দেশ হিসেবে জাপানের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ঋণ পাচ্ছে। পরিসংখ্যানে বলছে, ‘গত আট মাসে সবচেয়ে বেশি টাকা ছাড় করেছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা)। এই সময়ে সংস্থাটি ৯৭ কোটি ডলার ছাড় করেছে।’ বাজেট সহায়তার পাশাপাশি মেট্রোরেল, মাতারবাড়ী বিদ্যুতকেন্দ্রের মতো বড় প্রকল্পের বিপরীতে সংস্থাটির কাছ থেকে এই টাকা পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বিশ্বব্যাংক। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংস্থাটি ৭৬ কোটি ডলার ছাড় করেছে। তৃতীয় অবস্থানে আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ফিলিপাইনের ম্যানিলাভিত্তিক সংস্থাটির কাছ থেকে ৬২ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। এরপরে যথাক্রমে রাশিয়া থেকে ৬০ কোটি ডলার এবং চীন থেকে ৪৭ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা পাওয়া গেছে। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ করেছে ১১৯ কোটি ডলার। এরমধ্যে মূল ঋণ শোধ হয়েছে ৮৭ কোটি ডলার। বাকি ৩২ কোটি ডলার শোধ হয়েছে সুদ বাবদ। ঋণ পরিশোধের পর নিট বৈদেশিক ঋণ সহায়তা পাওয়া গেছে ২৫৩ কোটি ডলার।
×