ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পের অগ্রগতি ৩৫ শতাংশ

প্রকাশিত: ০১:১৬, ৩১ মার্চ ২০২১

পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পের অগ্রগতি ৩৫ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস মহামারীর কম-বেশি প্রভাব সরকারের প্রায় সবগুলো প্রকল্পেই পড়েছে। এতে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। এরইমধ্যে প্রথম ইউনিটের যন্ত্রাংশ চলে এসেছে। পথে রয়েছে দ্বিতীয় ইউনিটের যন্ত্রাংশও। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন ৩৫ ভাগ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ করা যাবে বলে আশা করছেন তারা। আর কাজটি শেষ হলে দেশের ১৩টি জেলায় বিদ্যুত সরবরাহ করা যাবে। এই বিদ্যুত সরবরাহের জন্য ৬১০ কিলোমিটার গ্রিডলাইন নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে। পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর রূপপুরে এক হাজার ৬২ একর জমির ওপরে দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র’র নির্মাণ হচ্ছে। মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুতকেন্দ্রটি দু’টি ইউনিট ভাগ করে নির্মিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম ইউনিটের কাজ যেভাবে এগিয়ে চলছে তাতে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি শেষ করা যাবে। এরইমধ্যে প্রকল্পের মোট ৩৫ ভাগ শেষ হয়েছে। আর তাতে এ পর্যন্ত কাজে ব্যয় হয়েছে ৩৯ হাজার ৭৪১ কোটি ২৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। পাবনার রূপপুরে এ প্রকল্পের পারমাণবিক চুল্লির জন্য ২০১৭ সালের নবেম্বরে কংক্রিটের মূল স্থাপনা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে দ্বিতীয় চুল্লির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সরকার আশা করছে, ২০২৩ সালের মধ্যে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার প্রথম ইউনিট জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব। আর ২০২৪ সালে চালুর টার্গেট সমান উৎপাদন ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিটটিও। এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র অন্যতম। দেশী-বিদেশী মিলিয়ে আট হাজারেরও বেশি জনবল নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। করোনার সময়েও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে। আশা করি, ২০২৩ সালের মধ্যেই প্রথম ইউনিট ওপেন করা যাবে। লক্ষ্য রয়েছে এর পরের বছর দ্বিতীয় ইউনিট চালু করার।’ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুতকেন্দ্রের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নির্ধারিত সময়ে শেষ করা গেলেও একই সময়ে বিদ্যুত সঞ্চালনের জন্য গ্রিডলাইনের প্রস্তুতি শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৩ সালের মধ্যে যদি গ্রিডলাইনের নির্মাণ কাজ শেষ না হয়, তবে বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার পরও রূপপুর বিদ্যুককেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব হবে না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গ্রিডলাইন ও সঞ্চালন লাইন নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলোর একটা বড় অংশ বাস্তবায়িত হচ্ছে ভারতের অর্থায়নে। আর তাদের ঋণে ধীরগতির কারণেই যথাসময়ে নির্মাণ সম্পাদন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রটি স্থাপনে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশন এবং রাশিয়ার সরকারী কোম্পানি রোসাটমের মধ্যে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা) চুক্তি হয়। রুশ সরকারের সহায়তায় নির্মিতব্য ২৪শ’ মেগাওয়াটের এ বিদ্যুতকেন্দ্রে থাকছে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার দুটি ইউনিট। ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা। তার এক বছর পর দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসবে এমনটাই রয়েছে পরিকল্পনায়। এই বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুত জাতীয় গ্রুপে সঞ্চালনের উদ্দেশে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে বেশকিছু প্রকল্প নেয় সরকার। যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি)। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে থাকে। সূত্র জানায়, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুত দেশের অন্তত ১৩ জেলায় পৌঁছে দিতে ৬১০ কিলোমিটার গ্রিডলাইন নির্মাণ বাবদ প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা এবং বাকি টাকার সংস্থান হবে ঋণের মাধ্যমে। বৈদেশিক ঋণ হিসেবে ৮ হাজার ২১৯ কোটি দেবে ভারত। ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় এ ঋণ দিতে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে। পিজিসিবির এক কর্মকর্তা জানান, এই ঋণ ছাড়ে বিলম্ব হওয়ার কারণে লাইন নির্মাণে প্রভাব পড়তে পারে। আর ঋণ পেতে দেরি হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও তা গ্রিডে পৌঁছাতে আরও সময় লাগবে। যে সমস্যা পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের ক্ষেত্রে হয়েছে। সক্ষম হওয়ার পর গ্রিডলাইন নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় একটি ইউনিটের বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যোগ করা যাচ্ছে না। দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার শুরু হলে গতবছরের ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। ৩১ মে’র পর সীমিত পরিসরে অফিস খুলে দেয়ার পাশাপাশি যানবাহন চলাচল শুরু হয়। সেই মহামারী করোনার ধাক্কায় দেশের উন্নয়ন কর্মকা-, বিশেষ করে সরকারের সবচেয়ে অগ্রাধিকার প্রকল্প পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের মতো কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজের গতি থেমে যায়। কিন্তু এরমধ্যেও রূপপুর কাজ এগিয়ে চলেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিন রকম পদ্ধতি অনুসরণ করে কাজ এগিয়ে নেয়া হয়েছে। কাজে যোগ দেয়ার আগে প্রতিদিন কর্মীদের তাপমাত্রা মাপা হতো। এদের মধ্যে কারও তাপমাত্রা বেশি থাকলে সাতদিনের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হতো তাকে। এরপর সুস্থ হলে আবার কাজে ফেরানো হতো। এবার করোনার দ্বিতীয় ধাপেও সে পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।
×