ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে স্মরণকালের ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ২৬ মার্চ ২০২১

রাজশাহীতে স্মরণকালের ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে স্মরণকালের ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরিত হয়ে একই পরিবারের শিশু ও নারীসহ ১৭ প্রাণ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। এদের কাউকে শনাক্ত করা যায় নি। বাস-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। মাইক্রোবাসে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে এই অগ্নিকাণ্ডে সব যাত্রীই নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত হওয়া রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। আজ শুক্রবার দুপুর পৌনে দুইটার দিকে রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালির কাপাশিয়া এলাকায় (রাজশাহী-ঢাকা) মহাসড়কের কাটাখালি থানার সামনেই এ মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার খবর পেয়ে রাজশাহী মহানগরীর থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে কয়েকঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে দগ্ধদের লাশ উদ্ধার করেন। দুর্ঘটনায় যাত্রীবাহী মাইক্রোবাসটিও পুড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এ ঘটনায় নিহতরা সবাই রংপুর জেলার বাসিন্দা। এরা হলেন রংপুরের পীরগঞ্জ থানার রাজারামপুর গ্রামের সালাহউদ্দিন, তার স্ত্রী সামছুরুন্নাহার, সামছুন্নাহারের বোন কামসুন্নাহার, তাদের সন্তান সাজিদ ও সাবা, দ্বারিকাপাড়া গ্রামের মোখলেসুর, বড় মজিদপুর গ্রামের ফুল মিয়া ও তার স্ত্রী নাজমা এবং তাদের সন্তান সুমাইয়া, সাদিয়া ও ফয়সাল। চালকসহ ১৪ জন ছিলেন মাইক্রোবাসে। সবাই মারা গেছেন। এছাড়া একই মাইক্রোতে থাকার বাকি ৩ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এর আগে খবর পেয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বেলা সাড়ে ৪ টার দিকে সকলের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের শরীর পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে যাওয়ায় তাৎক্ষনিত কারোরই নাম-পরিচয় শনাক্ত করা না গেলেও পরে এক আত্বীয়ের মাধ্যমে পুলিশ লাশ শনাক্ত করে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস। বলেন লাশ হস্তান্তরের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। এদিকে, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী থেকে যাত্রীবাহী হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি বাস ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। অন্যদিকে রংপুর সদরের মজিদপুর এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাস রাজশাহী শহরে আসছিল। মাইক্রোবাসে মোট ১৭ জন যাত্রী ছিলেন। কাপাসিয়া এলাকায় কাটাখালি থানার সামনে বাস ও মাইক্রোবাসটি পৌঁছামাত্র মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসের ভেতরে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরিত হয়ে মুহুর্তে আগুন ধরে যায়। স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে ৬ জনকে উদ্ধার করলেও বাকি ১২ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মাইক্রোবাসের ভেতরেই পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান। আরএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, মাইক্রোবাসে যাত্রীদের মধ্যে ১৩ জন একই পরিবারের সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। সংঘর্ষের পরপরই মাইক্রোবাসের একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ঘটনার পর স্থানীয়রা ছয় জনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। বাকিরা মাইক্রোবাস থেকে বের হতে পারেননি। আগুনের তীব্রতার কারণে তাদের তাৎক্ষণিক উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফলে মাইক্রোবাসের ভেতরেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে ১১ জন মারা যান। আর যাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো পরে তারাও মারা গেছেন। দুর্ঘটনার পর রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে বাকি মরদেহগুলো উদ্ধার করেন। আরএমপির মুখপাত্র আরও বলেন, আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সার্বিক খোজ খবর নিয়েছেন। এখন লাশের পরিচয়ও শনাক্ত হয়েছে। সেগুলো যাচাইবাছাইয়ের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজশাহীর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক আব্দুর রশিদ বলেন, সংঘর্ষের ফলে মাইক্রোবাসের দুইটি সিলিন্ডার এর মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হয়। এর ভেতর থেকে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। যাত্রীদের শরীর পুরোপুরি পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। মাইক্রোবাস থেকে উদ্ধার ১২ মরদেহের কাউর শরীরের অবয়ব চেনার উপায় নেই। তবে এর মধ্যে পাঁচজন পুরুষ, চারজন নারী এবং দুজন শিশু বলে শনাক্ত করেছে পুলিশ। অন্যদিকে রামেক হাসপাতালে মারা যাওয়া ছয়জনের মধ্যে দুজন পুরুষ, দুজন নারী ও দুই শিশু। রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, উদ্ধার অভিযান শেষে নিশ্চিত করে বলেন এখন পর্যন্ত ১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে আমরা জেনেছি। তাদের লাশ পাওয়া গেছে। এদিকে ঘটনাস্থলে থাকা আরএমপির একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, নাটোরের দিক থেকে দ্রুত গতিতে আসা মাইক্রোবাসটি একটি বাঁশের ভ্যানকে সাইড দিয়ে অতিক্রম করে। এরই মধ্যে রাজশাহীর দিক থেকে ছুটে আসে হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি বাস। এ বাসের সঙ্গেই মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় মাইক্রোটির। এতে মুহুর্তের মধ্যে মাইক্রোবাসে আগুন ধরে য়ায়। ওই মাইক্রোবাস থেকে কেউ নামতে পারে নি। তার আগে সবাই পুড়ে মারা যায়। রাজশাহী মহানগর পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হবে। এর পরই পরবর্তি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, দুর্ঘটনার পরপরই তিনি রামেক হাসপাতাল ও দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন। তিনি বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী লাশ শনাক্তের পর তাদের দাফনের জন্য ২০ হাজার করে টাকার প্রকৃত অভিবাবকদের প্রদান করা হবে। রাসিক মেয়র লিটনের শোক প্রকাশ ॥ রাজশাহীর কাটাখালীর কাপাশিয়ায় বাস-মাইক্রোবাস ও লেগুনার ত্রিমুখী সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এক শোক বার্তায় এই শোক প্রকাশ করেন মেয়র। শোকা বার্তায় রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নিহতদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তাঁদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। ঢাকায় অবস্থারত রাসিক মেয়র দুর্ঘটনার পর থেকে মোবাইল ফোনে দুর্ঘটনার বিষয়ে সার্বিক খোঁজখবর নেন।
×