ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধী নারীর সাফল্যের গল্প

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ৯ মার্চ ২০২১

প্রতিবন্ধী নারীর সাফল্যের গল্প

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ শারীরিক প্রতিবন্ধী ফরদিা খাতুন (৩৫)। তার অদম্য ইচ্ছা তাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে। নিজ হাতে মাছ ধরার জাল বুনে তা বিক্রি করে। প্রতিমাসে আয় করছে গড়ে ৮/১০ হাজার টাকা। লালনপালন করছে, হাঁস, মুরগী, কবুতর ও ছাগল। বৃদ্ধ বাবা-মা, প্রতিবন্ধী ৪ ভাই বোনের মুখে তুলে দিয়েছে খাবার। দরিদ্র বাবা মার কাছে বোঝা হয়নি। বাবার সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়েছে। যা হয়ত কোন স্বাভবিক সন্তান করতে হিমশিম খেত। প্রতিবন্ধী এই মেয়েকে নিয়ে পরিবারের সদস্য ও গ্রামের মানুষ খুবেই গর্বিত। প্রতিবেশী মানুষের কাছে একজন পরোপকারী ও মানবিক মানুষ। প্রতিবন্ধকতা ও দারিদ্রতা তার জীবনের সাফল্যে বাঁধা হতে পারেনি। সমাজ সংসারে সমাজে সৃষ্টি করেছে সকল স্তরের স্বাভাবিক মানুষ ও নারীদের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের ৬নংওয়ার্ডের নিজ গড্ডিমারী গ্রামের দিনমজুর ছোলেমান আলী ও শাহেরা বেগমের প্রথম সন্তান ফরিদা খাতুন। দরিদ্র কৃষিজীবী দিনমজুর বাবার সংগ্রামী মেয়ে ফরিদা। তিস্তা ও সানিয়াজান নদী পাড়ের মেয়ে। কয়েক বছর আগে হঠাৎ বন্যায় তার পরিবারের বসত ভিটাটুকু রাক্ষুসে নদী গর্ভে বিলীণ হয়ে গেছে। বৃদ্ধ বাবা- মা ও ভাই- বোন নিয়ে তাই আশ্রয় মিলেছে সরকারী বাঁধের রাস্তার ধারে ঝুপড়ি ঘরে। বিধাতার কী নির্মম নিষ্ঠুরতা। তার পরিবারের পাঁচভাই -বোনের সকলেই শারীরিক প্রতিবন্ধী ও বামন। স্থানীয় মানুসের ভাষায় বনমানুষ। ছোট বেলায় তাকে সার্কাসে জোকারি করতে নিয়ে যেতে চেয়ে ছিল। কিন্তু তার পরিবার ইচ্ছে ছিলনা। তাই তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে সার্কাস পার্টির কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়নি। কষ্টে তাদের দিন কাটত অর্ধাহারে অনাহারে। প্রতিবন্ধকতার কারণে আট/দশটা স্বাভাবিক মানুষের মত কাজ করতে পারত না। তাই উপার্জন করতে পারত না। না খেয়ে থাকতে হত। এক কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়তে হয়ে ছিল বৃদ্ধা মা শাহেরা বেগম জানান, ফরিদা খাতুন বিয়ে করতে চায়না। কারণ প্রতিবন্ধী হিসেবে স্বামী ও স্বামীর স্বজনরা যদি অবহেলা করেন। সে কারও অনগ্রহ দয়া নিতে চায়না। মানুষের বিপদে ছুটে গিয়ে পাশে দাঁড়ায়। মেয়ে প্রতিবন্ধী দেখে কষ্ট হয়। তবে এই মেয়েকে নিয়ে আমার অহংকারও হয়। স্বাভাবিক মেয়ে হলে হয়ত এবাবে সকলের প্রিয় হতে পারত না। ফরিদা খাতুন এই গ্রামের প্রতিটি বাড়ির মেয়ে। তবে সরকার যদি তাকে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে সহায়তা করত। তাহলে ফরিদা খাতুন জাল বুনে বিক্রির পাশাপাশি দোকানে মুদি সামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনী মনিহারি দ্রব্য তুলে বিক্রি করতে পারত। এই দোকান হতে গ্রামবাসি ন্যায্যমূল্যে ভাল মানের পণ্য অবশ্যই পেত। হাতীবান্ধা উপজলোর সমাজসবো কর্মর্কতা মোঃ মাহাবুবুল আলম জানান, ফরদিা খাতুন(৩৫) একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। নিজের দায়িত্ব নিতে হিমশিম খাওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা জয় করে আত্ননির্ভর হয়ে উঠেছে। সে মেয়ে হয়ে তার পরিবারের সকল সদস্যের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছে। দায়িত্বভার ভালভাবে পালন করছে। ফরিদা খাতুন এই হাতীবান্ধা উপজেলার একজন সফল ক্ষুদ্র উদ্যোগতা। সেই সাথে প্রতিবন্ধিকতা জয়ের একজন সফল নারী। যাহ সকল নারী সমাজের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার কাছে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। তিনি সমাজের স্বাভাবিক শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত নারীদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। অদম্য ইচ্ছে ও সাহস থাকলে অর্থ প্রতিবন্ধকতা সাফল্যের পিছনে কোন বাঁধা হতে পারে না।
×