নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ৮ মার্চ ॥ পাকিস্তানের এ দেশীয় দোসর ও তাবেদাররা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং একাত্তরের নারকীয় গণহত্যার স্মৃতি মুছে ফেলতে এখনও তৎপর রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে এবং অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করে, তারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাত করতে চায়। মন্ত্রী আরও বলেন, যারা পাকিস্তানের উচ্ছিষ্টভোগী, দোসর পাকিস্তানের ধারায় ধর্ম ব্যবহার করে এ দেশ ও এ দেশের মানুষকে শোষণ করতে চায়, তারাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে। কৃষিমন্ত্রী সোমবার বিকালে শহরে বধ্যভূমি সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র’ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলার ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, ইতিহাসের সত্য কখনও ধামাচাপা দিয়ে রাখা যায় না। তাই আজ ইতিহাসের সত্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবস্থান ইতিহাসের ক্ষুদ্রতম জায়গায়।
স্মৃতিকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ একটি মহাকাব্য। আর এ মহাকাব্যের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত সকল আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রধান সংগঠক। তিনি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক ও বাহক। সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে তিনি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন। সাড়ে ৭ কোটি নিরস্ত্র বাঙালীকে সংগঠিত করে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন।
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের সন্তানেরা আগামী প্রজন্ম ও তরুণ প্রজন্মের যারা বড় হচ্ছে। যাদের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম, জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। তাদের এই বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করতে উদ্বুদ্ধ করবে। এই স্মৃতিকেন্দ্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে চিরজাগরূক রাখবে। পাকিস্তানী ও তাদের দেশীয় দোসরদের সংগঠিত নির্যাতন ও গণহত্যা বিস্মৃতির অপচেষ্টা থেকে রক্ষা করবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর সুবর্ণজয়ন্তী আমাদের দ্বারপ্রান্তে। আগামী ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এই সুবর্ণজয়ন্তী আমরা উদযাপন করবো ২০২১ সাল ধরে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তাই এটি আমাদের ইতিহাসের একটি সোনালী অধ্যায়। বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্নের বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত শান্তির সমৃদ্ধশালী একটি বাংলাদেশ করে যেতে পারেনি। কিন্তু আজকে আমরা খুব খুশি ও আনন্দিত। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বাধীন ও স্বপ্নের রাষ্ট্রের সোনার বাংলা গড়ে তুলেছেন। সোনার বাংলা ও সমৃদ্ধশালী একটি বাংলাদেশ করার জন্য যে অর্থনৈতিক ভিত্তির প্রয়োজন, তার সবকিছুই আজ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ যেভাবে উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ তার লক্ষ্য অর্জনে আরও এগিয়ে যাবে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক। এ সময় তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি, আতোয়ার রহমান খান এমপি, হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী এমপি, ছানোয়ার হোসেন এমপি, আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি, মমতা হেনা লাভলী এমপিসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।