ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মংলা বন্দরে ৭৯৩ কোটি টাকার ড্রেজিং প্রকল্প

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ৯ মার্চ ২০২১

মংলা বন্দরে ৭৯৩ কোটি টাকার ড্রেজিং প্রকল্প

আহসান হাবিব হাসান, মংলা থেকে ॥ মংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের নাব্য সঙ্কট রোধ এবং দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন-নির্গমন নির্বিঘ্ন করতে ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে ইনার বারে ড্রেজিং প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২০ সালে এ প্রকল্পটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেয়া হয়। এ প্রকল্পটি অনুমোদনের পর দরপত্রে কাজ পায় চীনের হংকং রিভার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ও লি.ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন জেভি কর্পোরেশন নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর ড্রেজিং প্রকল্প কাজের চুক্তি স্বাক্ষর করে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। ড্রেজিং মাটি বা পলি ফেলার জন্য নদীর তীরবর্তী ১ হাজার ৫শ’ একর ব্যক্তি মালিকানা ও সরকারী খাস জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির মালিকদের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের সমুদয় ড্রেজিং কাজ ৩টি কাটার সাকশান ড্রেজার ও দুটি ট্রেইলিং সাকশান হপার ড্রেজারের সমন্বয়ে করা হবে। আর ৭টি কম্পার্টমেন্ট ফেলা হবে নদীর খননের পলি মাটি। জিওবির অর্থায়নে এ প্রকল্পটি আগামী ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে ড্রেজিং শেষ হবে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের প্রস্তুতি কার্যক্রম শুরু হলেও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আগামী ১৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে এ ড্রেজিং কাজের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। বন্দর সূত্র জানায়, মংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বার ড্রেজিং প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে সিইজিআইএসকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে ড্রেজিং প্রকল্পের এ সকল তথ্য নিশ্চিত করেন মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মাদ মুসা। মংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বার ড্রেজিং প্রকল্প কর্মকর্তা প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী (সি ও হাঃ) শেখ শওকত আলী জানান, বঙ্গোপাগর হতে প্রায় ১৩২ কিলোমিটার উজানে পশুর নদীর পূর্ব তীরে মংলা বন্দর অবস্থিত। সমুদ্র হতে চ্যানেলের প্রবেশ মুখ বা আউটার বার নামে এবং জয়মনিরগোল হতে বন্দর জেটি পর্যন্ত ইনার বার নামে পরিচিত। চ্যানেলের অবিশিষ্ট অংশের গভীরতা ৯ মিটারের বেশি থাকায় শুধু আউটার বার ও ইনার বারে কম গভীরতা থাকায় বন্দর জেটিতে দেশী-বিদেশী পণ্যবাহী ৮.৫ মিটার ড্রাফটের বাণিজ্যিক জাহাজ আনা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশে যেসব কন্টেইনারবাহী জাহাজ আগমন করে এ সব জাহাজ পূর্ণ লোড অবস্থায় ৯.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ সরাসরি মংলা সমুদ্র বন্দরে প্রবেশ করতে পারে না। এ কারণে অধিকাংশ জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস শেষে মংলা বন্দরে ভিড়তে হয়। এতে মংলা বন্দরে আসা বাণিজ্যিক জাহাজের অতিরিক্ত সময় ও খরচ বৃদ্ধি পায়। এ কারণে বন্দর ব্যবহারী ও ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া সরকারের নানামুখী প্রকল্প ও উদ্যোগে এ বন্দরকে আরও চ্যালেঞ্জেরে মুখে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। পদ্মা সেতু সম্পন্ন হলে এ বন্দরের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের চাপ কয়েক গুণ বাড়বে। বন্দর কর্তৃপক্ষের হল রুমে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মাদ মুসা সাংবাদিকদের জানান, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে মংলা বন্দর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সীমান্তসংলগ্ন ভারতীয় অঞ্চল, নেপাল ও ভুটানের আমদানি রফতানি পণ্য উঠানামা জাহাজীকরণ, গুদামজাতকরণে আর্থিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ হতে এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। আর এ সকল বিষয় মাথায় রেখে মংলা প্রবশে মুখ আউটার বার ও ইনার বার চ্যানেলে ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে চীনের হংকং রিভার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ও লি.ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন জেভি কর্পোরেশন নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। ৭১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে আউটার বার চ্যানেলের কাজ শেষ করেছে। ১৯৫০ সালে ১ ডিসেম্বর মংলা বন্দরের যাত্রা শুরু হয়।
×