ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের পক্ষ থেকে আমার ওপর কোন চাপ ছিল না

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ৯ মার্চ ২০২১

সরকারের পক্ষ থেকে আমার ওপর কোন চাপ ছিল না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এক সময় দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নখদন্তহীন বাঘ বলা হলেও সেসব দিন এখন অতীত হয়েছে। দুদক এখন অনেক ক্ষমতাশালী দাবি করেছেন সংস্থাটির বিদায়ী চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। এছাড়াও সকল দুর্নীতি কমিশনের আওতায় নয়। এটি আমরা হয়তো বোঝাতে পারিনি। এক কমিশনের পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। তবে পরবর্তী কমিশন এটাকে আরও বেগবান করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। দীঘ পাঁচ বছর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান এসব মন্তব্য করেন। ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদকের নখ-দাঁত নেইÑ সেটি অনেক পুরাতন ও প্রাচীন কথা। এটি এখন আর নেই। দুদক যথেষ্ট ক্ষমতাশালী প্রতিষ্ঠান। যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে দুদকের। আইনি ম্যান্ডেট রয়েছে এবং আমি মনে করি যতটুকু আইন আছে, এই আইন দিয়ে অনেক কিছু করা যায়। এরপরও এই কমিশনের পক্ষ অনেক কাজ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু আপনারা বিশ্বাস করবেন যে আমরা চেষ্টা করেছি। এই চেষ্টার যদি কোন ত্রুটি থাকে, সেই ত্রুটি আমার। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সব দুর্নীতি দুদকের আওতায় পড়ে না। তারপরও যে কোন দুর্নীতির কথা এলেই দুদকের কথা এসেছে। তাতে তাদের বিব্রত হতে হয়েছে। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকালে কেউ কোন তদবির করেনি বা সরকার থেকে কোন চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। ইকবাল মাহমুদ বলেন, কোন মন্ত্রী বা এমপি কখনও চাপ প্রয়োগ করেননি। শুধু একদিন একজন মন্ত্রী আমার কাছে এসেছিলেন তিনি আমার বন্ধু হন। তিনি এসেছিলেন এক কাপ চা খেতে, কোন তদবির করতে আসেননি। আর কোন মন্ত্রী মহোদয় আমার কাছে আসেননি। কোন মন্ত্রী মহোদয় আমার কাছে ফোন দিয়ে এমন কিছু বলেননি। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি,আমার ওপর কোন চাপ ছিল না। সরকারের পক্ষ থেকে আমার ওপর কোন চাপ ছিল না। তবে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি রক্ষায় কোন কোন ক্ষেত্রে আত্মচাপ নিয়েছেন বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান। দুদকের এ বিদায়ী চেয়ারম্যান বলেন, একটি বিষয় স্বীকার করতে হয়, যখন আমার মনে হয়েছে যে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে, সেই ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে আমি সরে এসেছি। রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি সব সময় আমার কাছে প্রথম ছিল। সেই ক্ষেত্রে আমার নিজের ওপর নিজের চাপ ছিল। বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় আগের কমিশনের সময় করা ৫৬টি মামলা তদন্ত কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এটি একটি পুরনো প্রশ্ন। এই প্রশ্ন আপনারা সব সময় করে থাকেন, এর উত্তরও আমি দিয়েছি। আমার মনে হয় একই উত্তর হবে। এটি চর্বিতচর্বণ। বেসিক ব্যাংক ইস্যুতে ৬৫টি মামলা হয়েছে, আমার জানামতে আরও মামলা হবে। সমস্যা হচ্ছে যে চার্জশীট হচ্ছে না কেন? তবে চার্জশীট কিংবা মামলা হবে কিনা আমি বলতে পারি না, আপনিও বলতে পারেন না। প্রশ্নটা হবে রিপোর্ট হচ্ছে না কেন? সেই রিপোর্ট একবার কমিশনে জমা হয়েছিল। আমরা রিপোর্ট গ্রহণ করতে পারিনি। ইকবাল মাহমুদ বলেন, কমিশনে কয়েকজন তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা সেই তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করা হয়নি। এর প্রধান কারণ ছিল- রিপোর্টে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাদের নাম থাকলেও অর্থ কীভাবে আত্মসাত হয়েছে এবং সেই অর্থ কোথায় গেল তার উল্লেখ ছিল না। আমরা এ বিষয়টি এখনও ফলো করছি। ক্ষমতা থাকলেও দুদক একেবারে ‘স্বাধীন নয়’ এবং আদালতের কাছে সব কিছুর জবাবদিহি করতে হয়। প্রত্যেকটি রিপোর্ট সেখানে বিচার-বিশ্লেষণ করে। আমাদের কাজ হল আদালতে প্রমাণ করা। আদালতে যদি প্রমাণই করতে না পারি, সেই রিপোর্টের দায়িত্ব কতটুকু, আমি জানি না। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির কয়েকটি মামলায় পাওয়া তদন্ত প্রতিবেদন কিছু পর্যবক্ষণ দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অর্থ কোথায় গেল? তদন্ত কর্মকর্তা অনেক লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে কিনা জানি না। আর দুদকে চেয়ারম্যানই সবকিছু না কমিশন মানে আরও দুইজন কমিশনার আছেন। আপনাদের জানা দরকার, কোন মামলা যখন তদন্ত হয়, আপনি তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে খবরদারি করতে পারবেন না। আইও যখন রিপোর্ট দেবে, আমরা তার ওপরে পর্যবেক্ষণ করি। আইও যদি নির্দিষ্ট সময়ে রিপোর্ট দিতে না পারে তাহলে আমরা শোকজ করি। সময়মতো রিপোর্ট দিতে বলি। ইকবাল মাহমুদ দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে জনগণের যে আকাক্সক্ষা রয়েছে, তা সেবাবে পূরণ হয়নি বলে স্বীকার করে বলেন, জন আকাক্সক্ষা যে রকম, সেই মাত্রা অনুযায়ী আমরা পারিনি। কিন্তু জন আকাক্সক্ষার মতো আপনি তখনই পারতেন, যখন আপনি-আমি, সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সবাই একই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে একটি কথা উচ্চারণ করতেন একাত্তর সালের মতো যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা একতাবদ্ধ’। তাহালে আপনি জনআকাক্সক্ষার মতো পারতেন। বুঝতে হবে, যদি আমরা জন আকাক্সক্ষাপূর্ণ করতে পারতাম, তাহলে এই কমিশনের আর প্রয়োজন ছিল না। এটা কখনই কোন দেশে সম্ভব হয় না। জন আকাক্সক্ষা অনুযায়ী পারা যায় না। মানুষের আকক্সক্ষার কোন শেষ নেই। জন আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য পরের কমিশন, তার পরের কমিশন, এর পরের কমিশন এরপর একটা অবস্থায় যাবে। তিনি বলেন, আইনী কাঠামো না হলে তা কীভাবে সংরক্ষণ করা হবে, এই পরিমাণ সম্পদ পাওয়া গেলে কী করা হবে? এটা নিয়ে আমরা চিন্তা করেছি। ইন্ডিয়াতেও তা করতে পারেনি সেভাবে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা না করে একা কিছু করতে পারবে না। কাজ করতে গিয়ে দুদকের সবচেয়ে দুর্বলতা কোন জায়গায় সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বিদায়ী চেয়ারম্যান বলেন, এখানে কোয়ালিটি সম্পন্ন লোকবলের অভাব। কমিশনের যে ধরনের লোক দরকার তেমন লোক নেই। যারা আছে তাদের আরও বেশি প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করেত হবে। দুদক কর্মকর্তাদের ঘুষের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মানুষ নিয়ে কাজ করি, মানুষকে ডিল করা খুব সহজ কাজ নয়। মানুষ লোভ-লালসার উর্ধেও নয়। যারা অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১০ মার্চ দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান ইকবাল মাহমুদ। দুদকের চতুর্থ চেয়ারম্যান হিসেবে আজ ৯ মার্চ তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমি অন্যদের মতো বলব না যে, দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে চলে যাচ্ছি। আমি বলব, এক বসন্তে হাসিমুখে এসেছিলাম, আরেক বসন্তে হাসিমুখে চলে যাচ্ছি।
×