ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্যারাস্যুটে চড়ে নীল আকাশ ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন...

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ৯ মার্চ ২০২১

প্যারাস্যুটে চড়ে নীল আকাশ ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন...

মাকসুদ আহমদ, কক্সবাজার ঘুরে এসে ॥ উড়োজাহাজ বা হেলিকপ্টার থেকে নয়, প্যারাস্যুটের ব্যবহার চলছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে। তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোর এমনকি যুবক-যুবতীরাও কক্সবাজার সৈকতে প্যারাসেইলিংয়ে মাতিয়ে তুলছে নিজেদের। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে উদ্যোক্তারা জনপ্রতি দেড় হাজার টাকা নিচ্ছে প্যারাসেইলিংয়ের জন্য। স্পিডবোটের মাধ্যমে প্যারাস্যুটকে উড়িয়ে নিয়ে আবার বালিয়াড়িতে নামিয়ে দিচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সেদিকে মন নেই কোন পর্যটকের। এ ঝুঁকিপূর্ণতার পেছনে রয়েছে বেশকিছু কারণ। প্যারাসেইলিংয়ে পর্যটকদের প্যারাস্যুটের মাধ্যমে সাগরের পানির ওপর দিয়ে একচক্কর ঘুরিয়ে এনে নামিয়ে দিচ্ছে অপারেটররা। নিমিষেই দেড় হাজার টাকা পকেট থেকে ফাঁকা। স্যাটেলাইট ভিশন সী স্পোর্টসের উদ্যোগে ছাপানো প্যারাসেইলিং টিকেটের গায়ে প্যারাসেইলরের স্বাক্ষর থাকার কথা থাকলেও তা দিচ্ছে না। ঝুঁকি এড়াতে এ ধরনের কৌশল কার্যকর করছে অপারেটররা। আবার কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরের জায়গাটিও খালি থেকে যাচ্ছে। কোন ধরনের অঘটন ঘটলে প্রমাণ করা দুষ্কর হয়ে যাবে কে বা কারা ছিলেন অপারেটর আর টিকেট ইস্যুকারী। প্যারাসেইলিংয়ের স্পটটি কক্সবাজারের কলাতলী মোড় পার হয়ে অনতিদূরে। হিমছড়ি যাওয়ার পথেই পড়ে এই স্পটটি। কলাতলী সড়ক থেকে একটু নেমে সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতেই চলছে প্যারাসেইলিং। উৎসুক দর্শকের যেমন ভিড় রয়েছে, তেমনি নবাগত পর্যটকরাও কৌতূহলবশে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। প্যারাস্যুটের মাধ্যমে পর্যটকরা আকাশে উড়ছে আবার নামছে। মূলত একটি স্পিটবোটের পেছন দিকে মোটা রশি লাগিয়ে প্যারাস্যুটকে তৈরি করা হয়েছে প্যারাসেইলিংয়ের জন্য। প্যারাসেইলররা দুয়েকজন হলেও টিম মেম্বারসহ প্রায় ১০ জন কাজ করছে অপারেটিংয়ে। উড়োজাহাজ কিংবা হেলিকপ্টার থেকে প্যারাস্যুটের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা অভিনেতাকে বিভিন্ন সিনেমায় অথবা ডিফেন্সের কোন অনুশীলনে সচরাচর দেখা যায় প্যারাস্যুটের ব্যবহার। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারকে ঘিরে স্যাটেলাইন ভিশন সী স্পোর্টসের উদ্যোগে প্যারাসেইলিং করা হচ্ছে। দেড় হাজার টাকার বিনিময়ে প্রত্যেকজনকে প্যারাসেইলিং করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। প্যারাস্যুটের বেল্ট কোমরে বেঁধে দিয়ে প্যারাসেইলরদের সঙ্গে থাকা টিমটি পর্যটককে দৌড়ে সামনের দিকে এগুতে বলেন। স্পীডবোটের পেছন দিকে অনেক লম্বা একটি রশিতে প্যারাস্যুটটি বেঁধে দিয়ে বোটটি স্টার্ট দিচ্ছে। স্পীড বোটের গতির সঙ্গে দৌড়ে পর্যটককে সামনের দিকে যেতে হয় কয়েক শ’ গজ। এরপরই প্যারাস্যুটটি বাতাসের প্রতিবন্ধকতা আটকিয়ে ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। এ সময় পর্যটকের সঙ্গে থাকা অন্যান্যরা কেউবা ভিডিও করছে, আবার কেউবা ছবি তুলছে। এদিকে, এক সময় প্যারাস্যুটটি অনেক ওপরে উঠে যায়। সমুদ্রের পানির ওপর দিয়ে যখন প্যারাস্যুটটি যেতে থাকে তখন অনেকটা আতঙ্কগ্রস্ত থাকে প্যারাস্যুটে থাকা পর্যটক। তবে যেসব পর্যটক একাকী প্যারাসেইলিং করতে রাজি হন না তাদের সঙ্গে একজন প্যারাসেইলরও থাকে। তবে যৌথভাবে প্যারাস্যুটে যারা ওঠেন সেক্ষেত্রে প্যারাসেইলর তাদের সঙ্গী হন না। কারণ, দুজনের মধ্যে যে কোন একজন রশি টেনে প্যারাস্যুটের গতি কমিয়ে বাতাসের বহির্গমন ঘটাতে পারলেই ক্রমশ প্যারাস্যুটটি নিচের দিকে আসতে থাকে। এক্ষেত্রে শক্ত করে রশি টান দিয়ে ধরতে হয়। অন্যথায় নামিয়ে আনা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। পর্যটকদের কেউ কেউ বলেছে, ওপরে ওঠার পর অনেকটা ভীতি কাজ করে। এ সময় অনেকেই ভুলে যায় রশি বামে নাকি ডানে টানতে বলা হয়েছে। মূলত রশিকে নিচের দিকে টেনে ধরলেই প্যারাস্যুটটি ক্রমশ নামতে থাকে। প্যারাসেইলিংয়ের সময় যেমন দৌড়ে উঠতে হয়, তেমনি নামার সময়ও দৌড়ে নামতে হয়। অন্যথায় প্যারাস্যুটটি গায়ের সঙ্গে মুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পর্যটকদের মধ্য থেকে উঠে এসেছে বেশকিছু ঝুঁকিপূর্ণ তথ্য। প্যারাসেইলিংয়ের টিকেটের সব তথ্য পূরণ করে না কর্তৃপক্ষ। টিকেটের সিরিয়াল নাম্বার থাকলেও স্পিডবোটের নম্বর থাকে না। প্যারাসেইলিংয়ের তারিখ থাকলেও সময় উল্লেখ থাকে না। পর্যটকের নাম উল্লেখ করলেও বয়স কিংবা ওজন উল্লেখ করা হয় না টিকেটে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি মানছে না উদ্যোক্তারা। এ তথ্যটি হলো হাইব্লাড পেশার ও লো ব্লাডপেশার যাদের রয়েছে তারা কিন্তু প্যারাসেইলিং করতে পারবেন না। এতে মৃত্যুঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে। কক্সবাজারের কলাতলী রোডের হোটেল বে-ভিউ এর নিচতলায় স্যাটেলাইট ভিশন সী স্পোর্টসের দফতর হলেও কর্তৃপক্ষ টিকেটের গায়ে স্বাক্ষর করেন না। এমনকি প্যারাসেইলরও স্বাক্ষর করছেন না তাতে। এর কারণ হিসাবে রয়েছে যদি কোন ধরনের অঘটন বা মৃত্যুজনিত ঘটনা ঘটে তাহলে কর্তৃপক্ষ কর্মরতদের আড়াল করতে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে-এমন মন্তব্য পর্যটকদের।
×