ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নেপথ্যে ঢাকায় ৬ তলা বাড়ি ও মার্কেট : ভাই হত্যা করলো বোনকে

প্রকাশিত: ১৮:৩৩, ৮ মার্চ ২০২১

নেপথ্যে ঢাকায় ৬ তলা বাড়ি ও মার্কেট : ভাই হত্যা করলো বোনকে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া ॥ কুষ্টিয়ার আলোচিত মোছাঃ শামীমা বেগম (৪৪) হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নিখোঁজের চারদিন পর ৩ মার্চ কংস নদীতে ভাসমান অবস্থায় শামীমার লাশ উদ্ধার করে নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কুষ্টিয়া পুলিশ নিহত ওই মহিলার ভাইসহ দুই জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো নিহতের ভাই শফিউল আজম (৫২) ও চাচাতো ভাই শামীম হোসেন (৪০)। এর আগে মৃত শামীমার মা মারা গেলে ঢাকায় ৬ তলা বাড়ি ও মার্কেট নিজের নামে লিখে নেয় ভাই শফিউল আজম। এ সংক্রান্ত ঢাকা সিভিল কোর্টে দায়ের করা একটি মামলার সাক্ষী ছিলেন নিহত শামীমা বেগম। আজ সোমবার দুপুরে জেলা পুলিশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। পুলিশ জানায়, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রানাখড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা (বর্তমান ঠিকানা ঢাকার দক্ষিণখান থানার কাঁচাবাজার, সংগ্রামী স্মরণী রোড, বাসা নং ৩১২) পিতা আশরাফ উদ্দিনের ছেলে শফিউল আজম গত ৪ মার্চ মিরপুর থানায় একটি জিডি করেন, যার নং ১৫২। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, তার বোন মোছাঃ শামীমা বেগম গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বাড়ি থেকে কুষ্টিয়ার রানাখড়িয়া গ্রামে তার বাড়িতে বেড়াতে আসে। ২৭ তারিখ রাত ৮টা পর্যন্ত বোনের সঙ্গে তার মোবাইলে যোগাযোগ ছিল। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ নেই। দায়ের হওয়া এই জিডি নিয়ে তদন্ত শুরু করে মিরপুর থানা পুলিশ। এক পর্যায়ে পুলিশ নিহত শামীমা বেগমের চাচাতো ভাই রানাখড়িয়া এলাকার নায়েব আলী মৃধার ছেলে শামীম হোসেনকে (৪০) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। এসময় সে পুলিশকে জানায়, শফিউল আজম কিছুদিন পূর্বে তাকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে তার বোন শামীমাকে নেত্রকোনায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সাহায্য চায় এবং এই সুযোগে শফিউল আজম তার চাচাতো ভাই শামীমকে নিয়ে তার বোনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পুলিশ জানায়, নিহত শামীমা’র মা মারা যাওয়ার পর তার ভাই শফিউল আজম অন্য এক মহিলাকে মা সাজিয়ে তার মায়ের নামে ঢাকায় থাকা ৬তলা বাড়ি ও মার্কেট নিজের নামে লিখে নেয়। বিষয়টি শামীমার বাবা আশরাফ উদ্দিন জানতে পেরে তিনি বাদী হয়ে ঢাকায় একটি সিভিল কোর্টে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন ভিকটিম মোছাঃ শামীমা বেগম। অন্তত ৩০ বছর পূর্বে শামীমা বেগমের নেত্রকোনা সদরে বিয়ে হয়। তবে এই বিয়ের সম্পর্ক ছিল স্বল্পস্থায়ী। অল্প সময়ের মধ্যে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকে শামীমা তার বাবার বাড়িতে ঢাকায় বসবাস করতেন। এসময় ভাই শফিউল আজম কারণে অকারণে তার ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালাতে। এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে শামীমা বেগম নেত্রকোনায় তার পূর্বের স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে চাচাতো ভাই শামীম হোসেন চাচাতো বোন শামীমা বেগমকে নিয়ে নেত্রকোনার উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৬ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা শহরে গিয়ে সকালে একটি হোটেলে অবস্থান করেন। পরবর্তীতে ২৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে (অর্থাৎ ২৮ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে) শফিউল আজম ওই হোটেলে দুইজন ভাড়াটে লোক পাঠায়। শামীম হোসেন অজ্ঞাতনামা দুইজন ব্যক্তির সহযোগিতায় মোছাঃ শামীমা বেগমকে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে নেত্রকোনা মডেল থানা থেকে ১২ কিঃ মিঃ উত্তর-পূর্ব দিকে কংস নদীতে ফেলে দেয় বলে শামীম হোসেন কুষ্টিয়া পুলিশের কাছে স্বীকার করে। এদিকে গত ৩ মার্চ দুপুরে কংস নদীতে ভাসমান অবস্থায় এক মহিলার লাশ উদ্ধার করে নেত্রকোনা থানা পুলিশ। এ ব্যাপারে নেত্রকোনা মডেল থানায় মামলা নং-০৮, তারিখ-০৫/৩/২০২১ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড। অপরদিকে কুষ্টিয়া পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত শফিউল আজম ও তার চাচাতো ভাই শামীম হোসেনকে নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
×