পাঁচ শ্রেষ্ঠ জয়িতা পাচ্ছেন সম্মাননা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার পাঁচ শ্রেষ্ঠ জয়িতাকে জানানো হবে সম্মাননা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে জয়িতাদের সম্মাননা তুলে দেবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। সম্মাননা হিসেবে জয়িতাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক, স্মারক ও সনদপত্র প্রদান করা হবে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে এই সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে রবিবার সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রতিমন্ত্রী। ইন্দিরা জানান, ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পাঁচ জয়িতাকে সম্মাননা জানানো হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে সকাল সাড়ে দশটায় অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। জয়িতারা বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা পদক গ্রহণ করবেন। তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদ দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব, গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব’। মহামারীকালে দেশের ডাক্তার, নার্স, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সব পর্যায়ের নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার বিবেচনায় এই প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের নাম ও বৃত্তান্ত তুলে ধরে ইন্দিরা বলেন, এ বছর বরিশাল বিভাগ থেকে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হয়েছেন বরিশালের হাছিনা বেগম নীলা। অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী এই নারী একজন সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হলেন রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার মিফতাহুল জান্নাত। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসএস অধ্যয়নরত ও একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সফল নারী। সফল জননী হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হয়েছেন বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার মোসাম্মৎ হেলেন্নছা বেগম। ছয় ছেলে ও তিন মেয়ের প্রত্যেককে তিনি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। তার বড় ছেলে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি, মেজ ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন একজন। বিভীষিকাময় অধ্যায় পেরিয়ে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করার ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হয়েছেন ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল জেলার রবিজান। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মম পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখায় জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন খুলনা বিভাগের নড়াইল জেলার অঞ্জনা বালা বিশ্বাস। দর্জি ও হাতের কাজের মাধ্যমে নারীদের স্বনির্ভর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ১৯৭৫ সালে তিনি মাতৃকেন্দ্র নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠান উদ্যাপন বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ মার্চ গণভবন থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। সংবা সম্মেলনে ইন্দিরা বলেন, জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গভীর তাৎপর্য রয়েছে। তার এই ভাষণ সমগ্র জাতিকে উজ্জীবিত করে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু নির্দেশনা ও নেতৃত্বে দেশে নারীর ক্ষমতায়নের শুরু। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় সময়োপযোগী বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তিনি ২০৪১ সাল নাগাদ কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৫০-৫০ এ উন্নীত করার অঙ্গীকার করেন। তারই নির্দেশনায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা ও আত্মকর্মসংস্থান সকল ক্ষেত্রে নারীর আজ সফল অগ্রযাত্রা। প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ তা সফলভাবে মোকাবেলা করতে পেরেছে। যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমনওয়েলভুক্ত দেশের সরকারপ্রধানদের মধ্যে সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী তিন নারী নেতার একজন নির্বাচিত হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২১ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণীসহ বিশেষ ক্রোড়পত্র ও স্বরণিকা প্রকাশ করা হবে। ৮ মার্চের অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। টেলিভিশন ও রেডিওতে নারীর অধিকার ও সমতা প্রতিষ্ঠায় বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সজ্জিত করা হবে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২১ উপলক্ষে দেশের সব জেলা-উপজেলায় নারী উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন, অধিকার এবং এ বিষয়ে প্রচার ও সচেতনতা সৃষ্টিতে র‌্যালি, সমাবেশ ও আলোচনা অনুষ্ঠানের কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যান্যের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ সায়েদুল ইসলাম, মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের মহাপরিচালক রাম চন্দ্র দাস, অতিরিক্ত সচিব ফরিদা পারভীন ও প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার।