ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপির ৭ মার্চ পালনের ঘোষণা রাজনৈতিক ভন্ডামি ॥ কাদের

প্রকাশিত: ২২:০৫, ৭ মার্চ ২০২১

বিএনপির ৭ মার্চ পালনের ঘোষণা রাজনৈতিক ভন্ডামি ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালনের ঘোষণা আরেকটা রাজনৈতিক ভন্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, মুখচ্ছবিকে আজকে মুখোশ দিয়ে ঢাকতে চাইছে বিএনপি। ৭ মার্চ পালন করছে, আবার আরেক দিকে বলছে, ‘একটি ভাষণ স্বাধীনতা এনে দেয় না’। আসলে এই কথাটি বলার জন্যই তারা ৭ মার্চের আলোচনা করছে। এটা হলো তাদের আরেকটা রাজনৈতিক ভন্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়। শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথ সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্যে রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে এই যৌথসভাটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, হঠাৎ করে এতো বছর পর বিএনপির বোধোদয় হয়েছে। যে ৭ মার্চকে তারা নিষিদ্ধ করেছিল। ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ শুধু নিষিদ্ধই করেনি, এ ভাষণ যারা বাজানোর চেষ্টা করেছে তাদের নির্যাতন করত, জেলে দিত এবং অনেককে অত্যাচার নির্যাতন করে পঙ্গু পর্যন্ত করে দিয়েছিল ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ বাজানোর অপরাধে। সেই ৭ মার্চ তারা পালন করছে! আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ মার্চ মাসে বিএনপি কর্তৃক কর্মসূচীর উদ্বোধন করে আদালত কর্তৃক দন্ডিত পলাতক একজন আসামি। যা এদেশের জনগণ ভালভাবে নেয়নি। একজন দন্ডপ্রাপ্ত আসামিকে দিয়ে মহান স্বাধীনতার মাসে কর্মসূচীর উদ্বোধন করে বিএনপি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে তামাশা করেছে। যার মাধ্যমে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বাঙালীর আত্মপরিচয় বিনির্মাণের ইতিহাসের সঙ্গে। রাজশাহীর বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপির এক নেতার (রাজশাহীর মিজানুর রহমান মিনু) বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের কাছে এটা বোধগম্য নয়, আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ওই নেতার ব্যক্তিগত নাকি বিএনপির দলীয় অবস্থান? বিএনপির ওই নেতার বক্তব্য নিয়ে এখন পর্যন্ত বিএনপি অফিসিয়াল কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে প্রমাণ করেছে, এটি তাদের দলগত অবস্থান। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই ঐতিহাসিক ক্ষণে তারা এখনও হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের রাজনীতিতেই ব্যস্ত। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল ইসলাম সাহেব এখন মুক্তিযোদ্ধা-মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, স্বাধীনতার আদর্শ নিয়ে চিৎকার করছেন, আজকে মায়াকান্না করছেন, দরদ দেখিয়ে কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করছেন। তিনি এখন কি জবাব দেবেন? রাজশাহীতে তার দলের নেতা প্রকাশ্যে যে বক্তব্য রেখেছেন, আরেকটা ১৫ আগস্ট ঘটানোর, এরকম মানসিকতা ও চরিত্র নিয়েই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করবেন? সুবর্ণজয়ন্তী পালনের মুহূর্তে এই ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেয়ার সাহস আপনার দলের নেতা কি করে পেল? এটা আপনাদের দলীয় বক্তব্য কি না? আপনার (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) কাছে জানতে চাই। সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি এখন চক্রান্তের পথ বেছে নিয়েছে। কারণ তারা নির্বাচন করতে গেলে জনগণ তাদের ভোট দেয় না। জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আন্দোলন করতে গেলে জনগণ সাড়া দেয় না। তারা বারবার চেষ্টা করেছে, হাঁকডাক দিয়েছে কিন্তু জনগণ তাদের আন্দোলনে সাড়া দেয়নি। কারণ বিএনপির আন্দোলন মানেই হচ্ছে সহিংসতা, বিএনপির আন্দোলন মানেই হচ্ছে জ্বালাও-পোড়াও। তাদের আন্দোলনের মানেই হচ্ছে আগুনসন্ত্রাস। এই তিক্ত অভিজ্ঞতা দেশের মানুষের জানা আছে। বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির কারণে তাদের ভোট কমে যাচ্ছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সে কারণেই আজকে তাদের ভোটে ভরাডুবি। এটা সরকারেরও দোষ না, ভোট কম পড়ে বলে নির্বাচন কমিশনেরও দোষ না। জনগণের কাঠগড়ায় পরিত্যক্ত জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি আন্দোলনে যেমনিভাবে ব্যর্থ, তেমনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও জনগণের আস্থা অর্জনেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। সভা থেকে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচীও ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত যৌথসভায় সভায় দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনি ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম ও আফজাল হোসেন, শ্রম ও জনশক্তি সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সবুর, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খানসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।
×