ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাজ্যে স্পার্ম দাতার খোঁজ ফেসবুকে

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ৬ মার্চ ২০২১

যুক্তরাজ্যে স্পার্ম দাতার খোঁজ ফেসবুকে

ড. ফে কার্কল্যান্ড/বিবিসি নিউজ ॥ এক বছর ধরে সন্তান নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন ক্লো আর তার সঙ্গী ব্রিটেনে যে দম্পতিদের সন্তান হচ্ছে না- তাদের অনেকেই নানা কারণে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় উপযুক্ত চিকিৎসা পান না। ফলে এদের কেউ কেউ গর্ভধারণের জন্য ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে খুঁজে নিচ্ছেন স্পার্ম ডোনার বা শুক্রাণু দাতা। তেমনি দুই নারী তাদের বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন বিবিসিকে। এক বছর ধরে সন্তান নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন ক্লো আর তার সঙ্গী। ফেসবুকে শুক্রাণু দাতার গ্রুপ ॥ ততদিনে ক্লো আর তার সঙ্গী বিয়ে করেছেন। তার স্বামীই একদিন বললেন, অনলাইনে একজন শুক্রাণু দাতার খোঁজ করলে কেমন হয়। ক্লো তাই করলেন। ফেসবুকে কিছু গ্রুপে যোগদান করলেন, এবং কয়েক দিনের মধ্যে একজন সম্ভাব্য শুক্রাণু দাতা পেয়ে গেলেন। সেই শুক্রাণু দাতা লোকটি তার মেডিক্যাল ও পারিবারিক ইতিহাস জানালেন। তার কোন যৌন রোগের সংক্রমণ হয়ে ছিল কিনা তা চেক করার দলিলপত্রও দিলেন। এসব কিছুর পর ক্লো যেখানে থাকতেন তার কয়েক মাইল দূরে একটি কারপার্কে লোকটির সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা করা হলো। প্ল্যানটা ছিল, সেই দাতা তার নিজের বীর্য নিয়ে আসবেন, আমাদের দেখা হবে। তিনি আমার হাতে জিনিসটা তুলে দেবেন। তার পর আমি একটা টয়লেটে ঢুকব এবং যা করতে হবে তা করব- বলছিলেন ক্লো। তাই করা হলো। ক্লো-র নিরাপত্তার কথা ভেবে তার স্বামীও সঙ্গেই এসেছিলেন এবং গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছিলেন। তারা মোট ৬ বার এটা করেছিলেন। ক্লো এতে একবার গর্ভবতী হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত হয়ে যায়। ক্লো-র দাতা একটি ক্লিনিকে শুক্রাণু দান করেন যা থেকে ১০টি সন্তানের জন্ম হয়। প্রতিবার তারা সেই দাতা লোকটিকে তার শুক্রাণুর জন্য ৫০ পাউন্ড এবং যাতায়াতের জন্য ১০ পাউন্ড দিয়েছিলেন। বলা দরকার যে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে ব্রিটেনের আইন-কানুনে কিছু অস্পষ্টতা আছে। ক্লো-র বাড়িতে এলেন শুক্রাণু দাতা এর মধ্যে শুরু হলো করোনাভাইরাস মহামারী। লকডাউনের কারণে কোথাও যাতায়াত করার ওপর বিধিনিষেধ থাকায় ক্লো এবং তার স্বামী ভিন্ন উপায় বের করলেন। তারা ফেসবুক থেকেই অন্য একজন শুক্রাণু দাতা খুঁজে বের করলেন। এই লোকটি এলেন ক্লো-র বাড়িতে। এতে ব্যাপারটা তার জন্য অনেক বেশি স্বস্তিদায়ক হয়েছিল- বলছিলেন ক্লো। এতে আমি আমার নিজের সময় সুবিধা অনুযায়ী কাজটা করতে পেরেছিলাম। তাড়াহুড়োর কিছু ছিল না। আমাকে একটা টয়লেটে ঢুকতে হয়নি। নিজের বাড়িতে হওয়ায় ব্যাপারটা আমার জন্য অনেক বেশি স্বস্তিদায়ক হয়েছিল। আমরা ভীষণ আনন্দিত। অনেক দিন চেষ্টার পর এখন আমাদের একটি সন্তান হতে যাচ্ছে, পরিবার হতে যাচ্ছে যা আমরা দুজনে অনেকদিন ধরে চেয়ে আসছি বলছেন ক্লো। ক্লো এবং তার স্বামী যে সন্তানের জন্য একজন শুক্রাণু দাতা ব্যবহার করেছেন তা তারা তাদের পরিবার বা বন্ধুদের বলেননি। ব্রিটেনে অনেক নারী ফেসবুক থেকে খুঁজে নিচ্ছেন শুক্রাণু দাতা। একটা কারণ হচ্ছে ক্লোর স্বামী যে সন্তান উৎপাদনে অক্ষম তা তারা কাউকে জানতে দিতে চান না। আরেকটা কারণ হলো কিছু লোক আছে যারা ভাববে যে এটা একটা গুরুতর অন্যায় কাজ করেছেন তারা। ক্লো বলছেন, সৌজন্যবোধ থেকেই তিনি তার গর্ভবতী হবার কথা শুক্রাণু দাতাকে জানিয়েছেন। তবে তিনি বলছেন, এ শিশুর ওপর দাতার কোন অধিকার থাকবে না এবং সন্তানের জন্ম সনদেও থাকবে ক্লোর স্বামীর নাম। এই দাতা লোকটি আরও সন্তানের পিতা হয়েছেন। একটি ক্লিনিকের মাধ্যমে তিনি অতীতে শুক্রাণু দান করেছেন। তবে ক্লিনিকের একটি নিয়ম আছে যে একজন দাতা ১০টির বেশি পরিবারকে তার শুক্রাণু দান করতে পারবেন না যে সীমা তিনি ইতোমধ্যেই স্পর্শ করেছেন। তবে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছে এমন আরও তিনজন নারী তার শুক্রাণু নিয়ে সন্তানের মা হয়েছেন। ক্লোর ক্ষেত্রে বলতে হবে যে তিনি সফল হয়েছেন। কিন্তু তিনি জানেন যে এতে অনেক ঝুঁকি আছে। ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে তিনি জেনেছেন যে এতে বহু রকম অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি জেনেছেন, অনেক সময় স্পার্ম ডোনাররা যখন জানতে পারেন যে তার শুক্রাণু ব্যবহার করে কোন নারী গর্ভবতী হয়েছেন, তখন তিনি সেই নারীর জীবনের অংশ হতে চান অথবা সেই সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চান। এমন নারীর কথাও ক্লো জানেন, যারা একজন দাতাকে শুক্রাণু নিয়ে আসতে বলার পর সেই লোকটি এসে বলেছেন, তিনি যৌন মিলন করতে চান। অবশ্য ফেসবুক গ্রুপগুলো এ ধরনের লোকদের দূরে সরিয়ে রাখতে সবসময়ই চেষ্টা করে থাকে। ক্লো বলেন, এজন্য ফেসবুক গ্রুপগুলো ঝুঁকিপূর্ণ পুরুষদের তালিকা করেছে, যে লোকদের এড়িয়ে চলতে হবে তাদের নামের তালিকাও তৈরি করেছে। কিন্তু এসব লোকেরা আবার একাধিক নামে অনেকগুলো একাউন্ট চালায় বলেন ক্লো। লোরেন একজন লেসবিয়ান নারী। তার বয়স যখন ৩৮ তখন তিনি এবং তার নারী সঙ্গিনী সিদ্ধান্ত নেন যে তারা একটা পরিবার গড়বেন, সন্তান নেবেন। কিন্তু ব্রিটেনে সরকারী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় সমলিঙ্গের দম্পতির জন্য এ ধরনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আছে। আর প্রাইভেট ক্লিনিকে কোন দাতার শুক্রাণু ব্যবহার করে আইভিএফ বা টেস্টটিউব বেবি নেয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ফলে লোরেন আর কোন উপায় না দেখে ফেসবুকের এক গ্রুপে যোগ দিলেন। তিনি তার প্রোফাইলে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন তিনি শুধু কৃত্রিম গর্ভসঞ্চার করতে চান। শুক্রাণু দাতার সঙ্গে যৌন মিলনের কোন আগ্রহ তার নেই। তিনি তার ঋতুচক্রের সময়ের হিসাব রাখা শুরু করলেন। আর যোগাযোগ রাখতে লাগলেন ২০ জন সম্ভাব্য শুক্রাণুদাতার সঙ্গে। একজন দাতা আমাকে সাহায্য করতে রাজি হওয়ার পর বলা শুরু করল, ‘আমার মনে হচ্ছে তুমি খুবই সুন্দরী’ তার পর সে বললো সে প্রাকৃতিক পন্থায় গর্ভধারণ চায় অর্থাৎ সেক্স করতে চায়। সে তখন আমাকে একটি অশালীন ছবিও পাঠায়। আবার অন্যকিছু দাতা আছে, যারা হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। লোরেন এদের সম্পর্কে জানার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে অনলাইন চ্যাট করেছেন। তাদের প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল তথ্য সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু যেই তার ঋতুচক্রে গর্ভসঞ্চারের উপযুক্ত সময় এলো এবং দাতার সহায়তা দরকার হলো, অমনি তারা মেসেজের জবাব দেয়া বন্ধ করে দিল। আপনি তখন দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন, তাদের ঘন ঘন টেক্সট করতে শুরু করলেন। তারপর হঠাৎ একদিন আপনাকে ওদিক থেকে ব্লক করে দেয়া হলো। লোরেন বলছেন, তার ক্ষেত্রে এ রকম ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটেছে। আমার মন ভেঙে গিয়েছিল। আমি ভাবছিলাম এ চেষ্টা ছেড়ে দেই কারণ আমি ব্যাপারটা নিতে পারছিলাম না। তারপর একদিন রাতে ফেসবুকে আরেকজন দাতার সঙ্গে তার আলাপ হলো। তার একদিন পরেই লোরেনের ওভুলেশন অর্থাৎ ঋতুচক্রের উর্বর সময়টা শুরু হবার কথা। সেই সময় ফেসবুক গ্রুপে তিনি একজন লোককে পেলেন, যিনি এক পোস্টে দীর্ঘ ব্যাখ্যা গিয়েছেন যে কেন তিনি শুক্রাণু দান করতে চান। লোকটির ভাই একজন সমকামী এবং সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম, তাই তিনি ঠিক করেছেন এমন পরিস্থিতিতে পড়া লোকদের তিনি সাহায্য করবেন।
×