ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুজিববর্ষের সেরা করদাতার পুরস্কার পেলেন কাউছ মিয়া

প্রকাশিত: ২২:১৪, ৬ মার্চ ২০২১

মুজিববর্ষের সেরা করদাতার পুরস্কার পেলেন কাউছ মিয়া

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মুজিববর্ষের সেরা করদাতার পুরস্কার পেলেন পুরান ঢাকার জর্দা ব্যবসায়ী কাউছ মিয়া। শুক্রবার এনবিআর ভবনে কাউছ মিয়ার হাতে সেরা করদাতার সম্মাননা স্মারক, মানপত্র ও পুরস্কার তুলে দেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম। এ সময় নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে কাউছ মিয়া বলেন, ‘আপনারা যে আয়োজন করছেন, তাতে আমার মনে যে আনন্দ, ৭০ বছর ব্যবসা করে আমি এই আনন্দ পাইনি।’ সেরা করদাতার সম্মাননা নিতে এসে ৭০ বছরের ব্যবসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক হাজী মোঃ কাউছ মিয়া। নিজের বাবার মতো তিনিও উত্তরাধিকারীদের উদ্দেশে বললেন, ‘নিজে খাবা, গরিবরে দিবা’। দেশের হাইপ্রোফাইল বড় বড় করপোরেট ব্যবসায়ীর ভিড় ঠেলে কাউছ মিয়া কয়েক বছর ধরেই সেরা করদাতার সম্মাননা পেয়ে আসছেন। সম্প্রতি এনবিআর মুজিববর্ষের সেরা করদাতা হিসেবে কাউছ মিয়ার নাম ঘোষণা করা হয়। একজনই তিনি এই সম্মাননা পেলেন। কাউছ মিয়া ৬১ বছর ধরে কর দিয়ে আসছেন। ১৯৫৮ সালে প্রথম কর দেন তিনি। কেন কর দেয়া শুরু করলেন, এর ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। ২০১৯ সালে এনবিআরের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আগে টাকা পয়সা এখানে-সেখানে রাখতাম। এতে নানা ঝামেলা ও ঝুঁকি থাকত। ১৯৫৮ সালে প্রথম কর দিয়ে ‘ফ্রি’ হয়ে গেলাম। এরপর সব টাকাপয়সা ব্যাংকে রাখতে শুরু করলাম। হিসাব-নিকাশ পরিষ্কার করে রাখলাম।’ ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এক নম্বর করদাতা হয়েছিলেন কাউছ মিয়া। উল্লেখ্য, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে ‘মুজিববর্ষে জাতীয় পর্যায়ে সেরা করদাতার সম্মাননা’ কার্যক্রমটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সর্বোচ্চ করদাতাদের বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে ব্যক্তি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি সর্বোচ্চ করদাতার সম্মান অর্জন করা এবং জাতীয় রাজস্ব খাতের সকল পুরস্কার পাওয়া কাউস মিয়াকে মুজিববর্ষে সেরা করদাতা নির্বাচন করা হয়। কাউছ মিয়ার বাবা চাইতেন না তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যে নামেন। তবে বাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ১৯৫০ সালে চাঁদপুরের পুরান বাজারে মুদি দোকান দেন কাউছ মিয়া। এরপর ধীরে ধীরে ১৮টি ব্র্যান্ডের সিগারেট, বিস্কুট ও সাবানের এজেন্ট হন তিনি। পরের ২০ বছর তিনি চাঁদপুরেই ব্যবসা করেন। ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন এবং তামাকের ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে ৪০ থেকে ৪৫ ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। কাউছ মিয়ার মূল ব্যবসা তামাক বেচাকেনা। রংপুরে তামাক কিনে সেখানেই বিক্রি করেন। একবার তিনি আমদানির ব্যবসায় নামতে লাইসেন্স নিয়েছিলেন। এ ব্যবসায় কারসাজি না করলে টিকে থাকা মুশকিল, এটা চিন্তা করে আমদানির ব্যবসা ছাড়েন। নদীপথে পণ্য পরিবহনের জন্য বেশ কিছু কার্গো জাহাজ আছে কাউছ মিয়ার। এই ব্যবসা তার ছেলেরা দেখাশোনা করেন। কর প্রদানে সততা, আন্তরিকতা ও স্বপ্রণোদনার স্বীকৃতিস্বরূপ কাউছ মিয়াকে জাতীয় রাজস্ব খাতের গুরুত্বপূর্ণ এ্যাওয়ার্ড সিআইপি মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঢাকা জেলার ‘কর বাহাদুর’ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। কর প্রদানে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ধারাবাহিকভাবে ১৪ বার বিভিন্ন রাজস্ব পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। সম্মাননা পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনবিআরের চেয়ারম্যান এই মুজিববর্ষে আমাকে স্মরণ করেছেন এ জন্য তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি কামনা করি। ব্যবসায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার স্মৃতি তুলে ধরে কাউছ মিয়া জানান, তিনি এখনও অনেক ব্যবসায় জড়িত। অনেক ব্যবসা বাদও দিয়ে দিয়েছেন। প্রথম জীবনে করেছেন ৪০-৪২টা ব্যবসা। কাউছ মিয়া জানালেন, তিনি নিজে বা পূর্ব বংশের কেউ কখনও ব্যাংক থেকে ঋণ নেননি। অনীহা রয়েছে রাজনীতিতেও। ব্যাংক থেকে আমার পূর্ব বংশেও কেউ ঋণ নেয়নি, আমিও নেইনি। আমার পূর্ব বংশের কেউ রাজনীতি করেননি, আমিও করি না। ছেলেকেও করতে দেই না।
×