ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে

তিন এয়ারলাইন্সের দায়িত্বহীনতার শিকার ৪শ’ যাত্রী

প্রকাশিত: ২২:১৪, ৬ মার্চ ২০২১

তিন এয়ারলাইন্সের দায়িত্বহীনতার শিকার ৪শ’ যাত্রী

আজাদ সুলায়মান ॥ কাতার থেকে এক মাস আগে রিটার্ন টিকেট কেটে দেশে ফেরেন কুমিল্লার আলম। ৪ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকালে ছিল তার ফেরার তারিখ। যথারীতি পাঁচ ঘণ্টা আগে- তিনি লাগেজ ব্যাগেজ ও টিকেট নিয়ে হাজির হন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখানে গিয়ে তিনি নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে জানতে চান কোন কাউন্টারে কাতার এয়ারের চেক ইন করা হচ্ছে। তাকে সদুত্তর দিতে পারেননি কেউই। এতে তিনি ঘর্মাক্ত হয়ে ছুটেন সব কাউন্টারে। কিন্তু কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি বিকালে আদৌ কাতারের কোন ফ্লাইট আছে কিনা। তিনি হতাশ হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসেন কনকর্স হলের চেয়ারে। ঘটনাক্রমে তখনই চলছিল সামনের খোলা জায়গায় বিমানবন্দর আয়োজিত গণশুনানি। যেখানে আলমের মতো এমন আরও বেশ কজন ভুক্তভোগী উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই জানালেন- কিভাবে এয়ারলাইন্সগুলোর অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার শিকার হয়ে বিমানবন্দরে ভবঘুরের মতো ঘুরতে বাধ্য হয়েছেন। শুধু আলম একা নয়। তারমতো এমন আরও দুইশত যাত্রী কাতার এয়ারের ফ্লাইটে যথারীতি কনফার্ম টিকেট নিয়ে বিমানবন্দরে গিয়ে হয়রানির শিকার হন। পরে তার অভিযোগ খতিয়ে দেখা যায় বৃহস্পতিবার কাতার এয়ারের কোন ফ্লাইটই ছিল না। তবুুও তাদের টিকেট দেয়া হয়েছে সেই তারিখের। কেন এমন তুঘলকি কা-। তাৎক্ষণিক এসব অভিযোগ সম্পর্কে খতিয়ে দেখা যায় কাতার এয়ারের টিকেট বিক্রি করা হয়েছে দায়সারাভাবে। সঠিকভাবে প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে যাত্রীদের অনেকটা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেই গছিয়ে দেয়া হয় বৃহস্পতিবারের টিকেট। একই কারণে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হয়েছেন ইতিহাদ ও এয়ার এরাবিয়ার যাত্রীরা। তাদেরও অন্তত আরও দুইশত যাত্রী বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরে গিয়ে জানতে পারেন ফ্লাইট নেই। ইতিহাদ ফ্লাইটের টাইম পিছিয়েছে। এরাবিয়ারও একই অবস্থা। এই তিনটি এয়ারলাইন্স কেন যাত্রীদের নিয়ে এতটা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য দেখানোর সাহস পেল তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কঠোর নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমান। তিনি উপস্থিত বিমানবন্দর পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএস তৌহিদুল ইসলাম ও এয়ারলাইন্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দিলারাকে নির্দেশ দেন যে ট্রাভেলস এজেন্সি এসব এয়ারলাইন্সের টিকেট বিক্রি করেছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। যদি ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে সরাসরি এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধেই আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এ তিনটি এয়ারলাইন্সের দায়িত্বহীনতার শিকার হওয়া কয়েকজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা শোনা হয়। তারা অভিযোগ করেন দোহা থেকে যখন ট্রাভেলস এজেন্সি মাধ্যমে টিকেট কাটা হয় তখনই কনফার্ম করা ছিল ফেরার তারিখ। কিন্তু দেশে ফেরার পর তাদের কাছে আর কোন মেসেজ বা অন্য কোন তথ্য আসেনি। এতে নিশ্চিতই ছিলেন তাদের ওই টিকেট ঠিকই আছে। কিন্তু বিমানবন্দরে পৌঁছে তারা গণশুনানির মাধ্যমে জানতে পারেন বৃহস্পতিবার বিকেলে কোন ফ্লাইট নেই। তাদের প্রশ্ন যদি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়ে দিত তাহলে এতদূর থেকে এত আগে বিমানবন্দরে এসে এভাবে দুর্ভোগের শিকার হতে হতো না। এত বড় দুটো ঘটনার পরও কেন কাতার ও ইতিহাদের প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত হয়ে কোন ব্যাখ্যা দেয়নি জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারমার্শাল মফিদুর রহমান দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন আপনারা দেখতে পাবেন এবার ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর কোন ছাড় নয়। নিরীহ যাত্রীদের সঙ্গে এহেন আচরণ কিছুতেই সহ্য করা হবে না। এ সময় উপস্থিত পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএস তৌহিদুল ইসলাম ভুক্তভোগী যাত্রী ও সাংবাদিকদের জানান কাতার ও ইতিহাদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে আটকেপড়া যাত্রীদের পরবর্তী ফ্লাইটে (রাত ও ভোরে) অবশ্যই পাঠানো হবে এবং বিমানবন্দরেই তাদের থাকার সেবা দেয়া হবে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, যাত্রীসেবার মান নিশ্চিতে এয়ারলাইন্সগুলোর আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। যাত্রীদের এমন হয়রানি করা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটা রীতিমতো অন্যায়। কাতার এয়ারওয়েজের কাছে এ ব্যাপারে কৈফিয়ত চাওয়া হবে ও সংশ্লিষ্ট এজেন্টের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হবে বলেও জানান তিনি। যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে খুব শীঘ্রই ‘মে আই হেল্প ইউ’ ডেস্ক চালু করা হবে। বিমান যাত্রীদের টিকেট করার সময় দেয়া ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর ঠিকঠাক মতো দেয়া হয়েছে তাও সচেতনভাবে দেখে নেয়া এবং বিমানবন্দরে আসার আগে আরেকবার ফ্লাইট সম্পর্কে খোঁজ নেয়ার পরামর্শ দেন বেবিচক চেয়ারম্যান। যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কর্মীদের ফ্লাইট শুরুর নির্ধারিত সময় ৪ ঘণ্টার আরও আগে থেকেই সহায়তা-সেবা দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। এদিকে বেবিচক সূত্র জানিয়েছে- কাতার ইতিহাদ এয়ারএরাবিয়ার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ এর আগেও একাধিকবার উঠেছে। বারবার এ ধরনের অপরাধ করে তারা পার পেয়ে যাবেন এমনটির আর কোন সুযোগ নেই। বিশেষ করে প্রবাসী কর্মজীবী শ্রমিকদের সঙ্গে বারবার এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর জন্য এবার কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে তাদের কারণ দর্শানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা যায়।
×