ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অপব্যবহার রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে ॥ আইনমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২১:৫১, ৬ মার্চ ২০২১

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অপব্যবহার রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে ॥ আইনমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন নয় বরং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যাতে কেউ অপব্যবহার করতে না পারে সেজন্য এটার সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি শুক্রবার বিকেলে কসবার পানিয়ারূপ বাসভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, কারাগারে লেখক মোশতাকের মৃত্যুর ঘটনাটিকে অত্যন্ত মর্মান্তিক ও দুঃখজনক উল্লেখ করে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তবে তার মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলেই তিনি জানান। এই মৃত্যুর সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোন সংযোগ নেই। এ সময় মন্ত্রী আরও বলেন এটা হলো ডিজিটাল যুগ। ডিজিটাল নিরাত্তা আইনে যেসব বিধান রয়েছে আমাদের দন্ডবিধিতেও সেসব আছে। টেকনিক্যাল অপরাধ ছাড়া নতুন কোন অপরাধ ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টে ভর্তি করি না। এর আগের খবরে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কোন পরিবর্তন বা সংশোধন আনা হবে কিনা, ‘কিছু দিনের মধ্যেই’ তা দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে জংশনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। এদিকে শুক্রবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হকের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। এ সময় ২০ মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। শতাধিক চেয়ার ভাংচুরসহ দোকানে হামলা চালানো হয়। শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দফায় দফায় লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। মোড়ে মোড়ে মোতায়েন রয়েছে বাড়তি পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উভয়পক্ষের হামলাকারীরা পৌর সদরে প্রায় ২০টি মোটরসাইকেল ও শতাধিক চেয়ার টেবিল ভাংচুর করে। তারা পৌর সুপার মার্কেট প্রাঙ্গণে ফুটপাথের ৩টি দলীয় কার্যালয় আসবাব ভাংচুর ও তছনছ করে। হামলাকারীরা একে অপর পক্ষের পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। হামলাকারীরা একটি ব্যাংকসহ কয়েকটি দোকানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। কয়েকজন হামলাকারী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এমজি হাক্কানীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ভাংচুর করে। দুপক্ষের হামলায় কয়েকজন আহত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। অন্যদিকে কারাবন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি নতুন করে জোরালো হয়ে উঠেছে। সে প্রসঙ্গ টেনে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, বিতর্কিত এ আইন পরিবর্তন বা সংশোধন করার কোন পরিকল্পনা বা সম্ভাবনা আছে কিনা। উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, আপনারা কিছু দিনের মধ্যেই দেখবেন। এর আগে গত ১ মার্চ আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এই আইনে কোন অপরাধের অভিযোগ এলে পুলিশের তদন্তের আগে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না বা তার বিরুদ্ধে মামলা নেয়া যাবে না- এমন একটি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। দেশের সাংবাদিক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আপত্তি ও উদ্বেগের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হলেও পুরনো আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনে রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগের শঙ্কা থেকেই যায়। এখন অনেকে বলছেন, সেই আশঙ্কা যে সত্যি ছিল, কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুই ‘তার প্রমাণ’। গত বছরের ৬ মে লেখক-অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট মুশতাককে তার লালমাটিয়ার বাসা থেকে গ্রেফতার করার পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরে অভিযোগপত্র দেয়া হলে সেখানেও তাকে আসামি করা হয়। গত দশ মাসে কয়েকবার আবেদন করেও জামিন পাননি ৫৩ বছর বয়সী মুশতাক। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে তার মৃত্যু হলে সারাদেশে শুরু হয় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অব্যাহত অপপ্রয়োগের যে অভিযোগ আসছে, সে বিষয়ে আইনমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, সব আইনই যখন করা হয়, তখন কিন্তু একটা ট্রায়াল এ্যান্ড এরর বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়। কথা হচ্ছে, এখানে যদি কিছু এ্যাবইউজ এবং মিসইউজ হয় সেটা কি করে বন্ধ করা হবে- সে ব্যাপারে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। হামলা ও ভাংচুর নিয়ে বর্তমান মেয়র মোঃ এমরান উদ্দিন জুয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও মেয়র প্রত্যাশী এমএ আজিজের বড় ভাই মোঃ শিশু মিয়া তাদের লোকজনের ওপর মোটরসাইকেল তুলে দেয়। এ সময় দুই পক্ষের মাঝে হাতাহাতি শুরু হয়। তিনি ঘটনার সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মেয়র প্রত্যাশী এমএ আজিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বর্তমান মেয়র এমরান উদ্দিন জুয়েল ও তার সমর্থকরা আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আইনমন্ত্রীর সংবর্ধনা জানানোর জন্য কসবা মহিলা কলেজের কাছাকাছি আসলে পৌর শহরের তেতৈয়া গ্রামের কিছু সংখ্যক লোক কাউন্সিলর রঙ্গু মিয়ার নেতৃত্বে আমার মিছিলে ঢুকে হামলা চালায়। আমার সমর্থকরা মহিলা কলেজ থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত দীর্ঘ মানব প্রাচীর গড়ে তোলে মন্ত্রী মহোদয়কে অভ্যর্থনা জানায়। সংঘর্ষ লাগিয়ে আমার সমর্থকদের ৪টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে ফেলেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট রাশেদুল কাওসার ভূইয়া জীবন বলেন, আমি সংঘর্ষের খবর শুনে মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশে তাৎক্ষণিক উভয়পক্ষের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে তাদের শান্ত থাকতে অনুরোধ করি। দুজন মেয়র প্রত্যাশীদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কসবা থানা অফিসার পুলিশ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে আসার সময় হলে দুই মেয়র প্রত্যাশী সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষ বাঁধলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। বেশকিছু মোটরসাইকেল ও চেয়ার টেবিল ভাংচুর হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
×